অবন্তী,

তুই কি আজও নিবিড় মেঘগুলোর আনাগোনায় উতলা হোস? আজও কি ঝুম বৃষ্টিতে ভালবাসার কণা খুঁজিস? দীঘির জলে ভাসা পদ্মগুলোর সাথে কি আজও সখ্যতা গড়ে তুলিস? শিশিরের গালিচা কেঁপে উঠে কি আজও সুরের মুর্ছনায়?

আমার জানতে বড্ড ইচ্ছে করে অবন্তী! এক সমুদ্র হাহাকার দিয়ে কোন এক কূহকী পূর্ণিমায় সেই যে কুহেলিকা হয়ে গেলি! নৈঃশব্দ্যের মন্ত্রে আমি গিলে ফেলেছি পাহাড়সম কষ্ট।

তুই জানিসনি, হয়ত কোনদিন জানবিওনা এই ঝরা পালকের মর্মবেদনা! আমি তোর চেয়ে দুবছরের ছোট ছিলাম। তাই আমাকে সব সময় ছোট মনে করে পাত্তাই দিতিনা। অথচ আমি তোর সংগ পাবার লোভে লোভে দিন রাত একাকার করে ফেলতাম।

তুই আমাকে তুই বলতি, আমিও তোকে মাঝে মাঝে আপু বা অবন্তীই ডাকতাম —এতে তোর কোন আপত্তি ছিলনা। আমি প্রতিদিন সকালে দাঁড়িয়ে থাকতাম বাড়ীর পাশের গলিটিতে, কখন তুই কলেজের জন্য বের হবি!

তারপর তোর সাথে কলেজের বাসে চড়ে কলেজে যেতাম। তোর পাশের সিটটাতেই আমি বসতাম। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তোর সান্নিধ্য কামনা করতাম। বুঝাতে পারতামনা তোকে আমার এত ভাল লাগত কেন?

তোর আশপাশে ঘুরঘুর করত কত রোমিও, তা দেখে আমি ঈর্ষার অনলে পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আমি কতবার ভেবেছি তোকে বলেই দিবো কিন্তু এক পা সামনে গিয়েছিতো তিন পা পিছিয়েছি।

প্রত্যাখ্যিত হবার ভয়ে মনের গহীনে চাপা পড়ে গেছে আমার সেই ঈপ্সিত আবেগ। তুই বলতি আমার একটা রাজপুত্তর চাই— কিন্তু কলেজের কোন রাজপুত্তরই তোর ভাল লাগতনা।

বলতি, “আরে ছাত্রদের সাথে কি প্রেম করবো? কবে চাকুরী পাবে, কবে বিয়ে করবে–সে আশায় গুড়েঁবালি। ওদের বিয়ের সময় হতে হতে আমি বুড়ি হয়ে যাব।”

তোর এই কথা শুনে আমি আমার অনার্স সেকেণ্ড ইয়ারের বইগুলো সিন্দুকে ভরে ব্যবসায় নেমে গিয়েছিলাম। ভাবলাম একমাত্র ব্যবসা করেই তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবে এবং তখন যদি তোকে বলি নিশ্চয়ই তুই বেকার বলে আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারবিনা।

এভাবেই কেটে গিয়েছিল একটি বছর। তোর মাষ্টার্স পরীক্ষা মাত্র শেষ হল। আমিও ব্যবসার জন্য খুব ভাল রেজাল্ট করতে পারিনি কিন্তু থার্ড ইয়ার উতরে গেলাম। কিন্তু তোকে আমি আমার ব্যবসার কথা বলিনি।

সেদিন দুপুরটা একটু অন্যরকমই ছিল—আমার বুকের ভেতরটা কাঁপিয়ে দিলি তুই। সামনে এসে বললি, “তোকেই খুঁজছিলাম আর তুই চায়ের দোকানে! পরিচিত হয়ে নে; আমার বর।

গত সপ্তাহে আমাদের বিয়ে হয়েছে।” আমি হাত মেলালাম কিন্তু মনে হল পুরোটা শরীর অবশ হয়ে আসছে। আমার বুক ভেঙ্গে কান্না আসছিল। আমি কোনমতে নিজেকে সামলে তোদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

তোর সোনার রাজপূত্র আমেরিকা প্রবাসী। শুনেছি তুইও চলে যাবি। কিন্তু যেকদিন দেশে ছিলি আমাদের যোগাযোগ ছিল, তুই মাঝে মাঝে ফোন করে খবর নিতি।

এর মধ্যে একদিন আমি তোর সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলাম কিন্তু মেয়েটির নাম বললাম না। জানতে চাইলাম ঘটনা এতদূর পর্যন্ত ঘটে গেছে আমার কি উচিত মেয়েটিকে জানানো? তুই বলেছিলি, “না জানানো উচিত না কারণ সে বিয়ে করেছে, ভাল আছে।

আর সে হয়ত কখনও তোকে ওই দৃষ্টিতে দেখেইনি।” কিন্তু তুই মেয়েটির নাম জানার জন্য জেদ ধরলি। আমি জানতাম মেয়েরা খুব বুদ্ধিমতি হয় এই ব্যাপারে কিন্তু তুই এত বোকা ছিলি কেন? নাকি ভান ধরে ছিলি?

বেশ কবছর তোর সাথে আর যোগাযোগ নাই। আমি ব্যবসা গুটিয়ে পড়াশুনায় মন দিয়েছিলাম এবং ভাল একটা জব করছি এখন।

ফেইসবুকের কল্যাণে তোকে আবার পেলাম কিন্তু তুই আমাকে চিনতে পারলিনা প্রথমে বললি, চেনা চেনা লাগছে; কোথায় যেন আপনাকে দেখেছি!

আমি অবাক হইনি কারন আমার চেহারা অনেকখানি বদলে গেছে–তুই বদলে দিয়েছিস। আমি তোকে চিনেছি– একটুও বদলায়নি তোর চেহারা।

আমি পরিচয় দিলামনা তোকে; শুধু বললাম আপনি অনেক ভাল লিখেন, আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত। তুই এখন আবার লেখালেখি নিয়ে বেশ ব্যস্ত। বইও বেরিয়েছে। স্বামী সন্তান নিয়ে ভাল আছিস।

জানিনা আমার এই চিঠিটুকু পড়ার সময় তোর হবে কিনা। আমি আছি আমাকে নিয়ে আর প্রিয় গানটিকে নিয়ে, আমি কিন্তু চিন্তাও করিনি আমার জীবনের সাথে গানটি মিলে যাবে। তুই শুনবি সেই বিখ্যাত গানটি?

মনে পড়ে রুবি রায়, কবিতায় তোমাকে একদিন কত করে ডেকেছি আজ হায় রুবি রায়, ডেকে বল আমাকে তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি।। রোদ জ্বলা দুপুরে, সুর তোলে নূপুরে বাস থেকে তুমি যবে নাবতে।।

একটি কিশোর ছেলে একা কেন দাঁড়িয়ে সে কথা কি কোনদিন ভাবতে! দীপ জ্বলা সন্ধ্যায়, হৃদয়ের জানালায় কান্নার খাঁচা শুধু রেখেছি।। ও পাখি সেতো আসেনি, তুমি ভালবাসনি স্বপ্নের জাল বৃথা বুনেছি।

ভাল থাকিস,
সেই কিশোর ছেলেটি

Comments to: অসাধারণ প্রেমের চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us