জনাব মতিউর রহমান
সম্পাদক
দৈনিক প্রথম আলো
ঢাকা।

বিষয় : উদ্দেশ্যমূলকভাবে পত্রিকায় অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধ এবং এর ফলে ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পুনঃউদ্ধারে সহযোগিতা কামনা, অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক,
আসসালামু আলাইকুম।
সম্প্রতি, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দুদকের তদন্ত শুরুর প্রারম্ভে আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকায় আবার নতুনভাবে আমার বিরুদ্ধে লেখা শুরু হয়েছে।

আমার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও সুনাম নষ্টে পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে। অসত্য রিপোর্ট, ধারণাভিত্তিক রিপোর্ট ও উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট লিখে জনমনে আমাকে, ইচ্ছা করে, বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।

শুধু উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট লিখে নয়, রিপোর্টকে ব্যানার হেডলাইন করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার যে পদ্ধতি-তাও আপনি ব্যবহার করেছেন।

অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট লিখে তার ভিত্তিতে সম্পাদকীয় লিখেছেন। সম্পাদকীয়তে আমাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার জন্য হুকুম দিয়েছেন। কার্টুন ছেপেছেন।

আমি আপনার ২০ জুন, ২০১২ তারিখের অসত্য, অমূলক ও ভিত্তিহীন খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছি। আপনি সেই প্রতিবাদ প্রকাশ না করে সম্পাদকীয় লিখে আমাকে আরো বিতর্কিত করার চেষ্টা নিয়েছেন।

গতকাল ২১ জুন, ২০১২ তারিখে আমি আবার একটি প্রতিবাদ চিঠি দিলে আপনি গতকাল (২ জুন) আমার প্রতিবাদটি কাটছাঁট করে প্রকাশ করেছেন। তবে পাশাপাশি আমাকে উপহাস করে একটি কার্টুনও ছেপেছেন।


শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমার-ব্যক্তি ইমেজ নষ্টে ধারাবাহিকভাবে অসত্য লেখা কোনো সাংবাদিকতার নীতিমালায় পড়ে? আপনি দেশের একজন বিখ্যাত, সুপ্রসিদ্ধ ও অভিজ্ঞ, মননশীল সাংবাদিক।

আমার মতো একজন সৎ, স্বচ্ছ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি-যে জীবনে কোনো অন্যায় করিনি, কাউকে ঠকাইনি, কাউকে গালমন্দ করিনি, কোনো অনৈতিক কাজ করিনি-তারপরও আমাকে টার্গেট করে অসত্য লেখা লিখে চলেছেন।

মন্ত্রী হলেই মানুষ খারাপ হয়ে যায়, পচে চায়-এ ধারণা ঠিক নয়। এটা কোনোন আপনার মতো অভিজ্ঞ সাংবাদিক বুঝেন না-এটা বোধগম্য নয়। আপনাকে আমি নানাভাবে অসত্য, অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বারবার সর্নিবন্ধ অনুরোধ জানিয়েছি।

উপাত্ত দিয়ে সত্যতার প্রমাণ দিয়েছি। ২/১ বার কথা বলেছি। একাধিক চিঠি দিয়েছি। অসত্য লেখার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু আপনি একইভাবে আমার বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ প্রকাশ করে চলেছেন।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, এর আগে পরিকল্পিতভাবে আপনি আমার বিরুদ্ধে আপনার পত্রিকায় অসত্য, মিথ্যা রিপোর্ট করিয়েছেন। যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর মন্ত্রীর অফিস সংস্কার নিয়ে অসত্য রিপোর্ট করেছেন। সম্পাদকীয় ছেপেছেন। কার্টুন এঁকেছেন।

এ অফিস সংস্কার কাজ ছিল রুটিন কাজ। মন্ত্রীর অফিস সংস্কার করে পূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়; যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বা আমি নই। এ সংস্কারে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল বলে আমাকে জানানো হয়েছিল।

আপনি রিপোর্টে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা উল্লেখ করে আমার সংশ্লিষ্টতা খুঁজেছেন, আমাকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। আপনার নিশ্চয় মনে আছে, আপনাকে আমি যোগাযোগমন্ত্রীর অফিসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।

আপনি এসেছিলেন। দেখলেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পত্রিকায় অসত্য খবর প্রকাশের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেননি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, পরবর্তীতে আপনি আবার যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য নতুন গাড়ি ক্রয় নিয়ে রিপোর্ট করলেন। গাড়ি ক্রয় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রয়োজনে বাজেট সাপেক্ষে গাড়ি ক্রয় করাই যায়।

এটা কোনো ইস্যু নয়। অথচ আপনি পত্রিকার বদৌলতে, মিডিয়ার শক্তির বদৌলতে, এটাকে বিরাট ইস্যু বানালেন। গাড়ি ক্রয় নিয়ে মনগড়া কথা লিখলেন। কার্টুন ছাপালেন। সম্পাদকীয় করলেন। অথচ সেই গাড়ি কখনো ক্রয় করাই হয়নি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, এরপর আপনি পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে নানা অসত্য তথ্য মিশিয়ে খবর করেছেন। আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

আপনার পত্রিকা পদ্মা সেতুর মূল কাজ নিয়ে অভিযোগকারীদের অসত্য, অনুমান নির্ভরঅভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের কল্পনাপ্রসূত, বায়বীয় ও অসত্য অভিযোগে আমাকে নিয়ে নানা গল্প লিখেছে।

আমাকে সম্পৃক্ত করে নানা অসত্য নেতিবাচক খবর প্রকাশ করেছে। কার্টুন ছেপেছে। অনেক উপসম্পাদকীয়, সম্পাদকীয় লিখেছে। বিশ্বব্যাংকের এই অনুমাননির্ভর, কল্পনাপ্রসূত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক যে তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ করে, তাতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি।

এরপরও আপনি নানাভাবে অসত্য, মনগড়া তথ্য দিয়ে আমাকে আপনার পত্রিকার খবরে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনি আমার গ্রামের বাড়িতে নির্মিত, আমার অতিথি-ভবন নিয়ে আপনার বহুল প্রচারিত পত্রিকায় নাতিদীর্ঘ রিপোর্ট করিয়েছেন। প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডে আমার বাড়ি-সংক্রান্ত খবর, বাড়ির ছবি দিয়ে প্রকাশ করেছেন।

নানা অসত্য, মিথ্যা ও যুক্তিহীন বক্তব্য দিয়ে এ লেখায় আমাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনি জানেন, গ্রামে একটি বাড়ি করার সামর্থ-আল্লাহ আমায় দিয়েছেন। এ বাড়ি আমি নির্মাণ করেছি আমার কর-পরিশোধিত অর্থ দিয়ে।

আমার সমস্ত আয় কর পরিশোধিত। আমি অন্যায়ভাবে, অবৈধভাবে কোনো অর্থের মালিক নই। অথচ আপনার রিপোর্ট আমাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, আমার এলাকা আজ একটি উন্নত এলাকা।

শিক্ষাপ্রসারে আমার প্রচেষ্টা এলাকাকে চারিদিকে থেকে উজ্জ্বল করে তুলেছে। আমার বাড়ির পাশে ও তৎসংলগ্ন ৬টি কলেজ, অসংখ্য উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার কার্যক্রম চলছে। হাট-বাজার গড়ে উঠেছে। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।

এসব কারণে এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। অথচ আপনার রিপোর্টে এসব কথা নেই, আছে মন্ত্রীর বাড়ির জন্য সরকারি অর্থে সড়ক নির্মাণ। এটা অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক লেখা। হীনমন্যতার পরিচয় বহন করে।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমার বিরুদ্ধে দুটি পাসপোর্ট সংক্রান্ত অভিযোগ এনে পত্রিকায় লেখা হয়েছে। অথচ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমার জনৈক কর্মকর্তার ভুলের জন্য বিষয়টি ঘটেছিল। তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলাম।

তদন্তের অধিকতর স্বচ্ছতার জন্যই আমি তখন পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু এর জন্য আপনারা আমার প্রশংসা করেননি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমাকে গত বছরের ১৮ আগস্ট সংসদে আপনার পত্রিকার একটি ভুল রিপোর্ট নিয়ে সংসদ সদস্যরা, শ্রদ্ধেয় নেতা ও সংসদ সদস্য জনাব তোফায়েল আহমেদ ও আমাকে জড়িয়ে সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে।

অথচ এ বিষয়ে আমার কোনো ভুল ছিল না। অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে গত বছর সড়ক উন্নযন, মেরামত ও সংস্কারের অনেক কাজ সময়মত শেষ করা যায়নি। অতি বর্ষার কারণে কিছু সড়কে যাওয়াতে সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল।

এ নিয়ে সংসদে আলোচনার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি একটি সারসংক্ষেপ প্রেরণ করি। আমার প্রেরিত সারসংক্ষেপের বিষয়ে কতিপয় পত্রিকা, বিশেষ করে, আপনার পত্রিকা অসত্য খবর পরিবেশন করে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত সারসংক্ষেপে কারো প্রতি কোনো অসৌজন্যমূলক কথা ছিল না। সারসংক্ষেপের মূল কপিটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আছে। এর একটি ছায়ালিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে।

আমি যখন যোগাযোগমন্ত্রী, সে সময়ে আমার সম্পর্কে আপনার পত্রিকা ঢালাওভাবে অসত্য খবর প্রকাশ করে, যার প্রেক্ষিতে আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা জনাব তোফায়েল আহমেদের সাথে আমার ভুল-বুঝাবুঝির সৃষ্টি করা হয়েছিল।

এ অসত্য খবরকে ভিত্তি করে টকশোতে আলোচনা হয়। পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা হয়। অথচ পত্রিকার এ খবর সঠিক ছিল না। অসত্য খবরই পরবর্তীকালে আবার খবর সৃষ্টি করে বের করা হয়েছে। মনে হয়েছে এটা আমার বিরুদ্ধে আপনার একটি সংঘবদ্ধ প্রপাগান্ডা।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে কাল্পনিক, অনুমান-নির্ভর ও অমূলক অভিযোগ করেছেÑতা দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে-মূল সেতুর কাজ। এবং অপরটি পরামর্শক কনসালটেন্ট নিয়োগ সংক্রান্ত।

মূল সেতুর কাজে তাদের অভিযোগ দুদক তদন্ত করেছে এবং তদন্তে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি। আর দ্বিতীয় অভিযোগ তদন্তাধীন ছিল। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টের ভিত্তিতে দুদক সম্প্রতি এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে।

এ প্রেক্ষিতে, আপনার পত্রিকায় আমাকে জড়িয়ে, আবার ধুমধাম করে লেখা শুরু করেছেন। অসত্য, মনগড়া ও অনুমাননির্ভর খবর ছাপাচ্ছেন। কার্টুন আঁকাচ্ছেন। এমনকি সম্পাদকীয়ও লিখে চলেছেন।

আপনি ব্যানারহেড দিয়ে, সরাসরি আমাক জড়িয়ে রিপোর্ট করেছেন, সম্পাদকীয় করেছেন। সম্পাদকীয়তে আমাকে বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতিবাদ করার পরও কার্টুন ছেপেছেন।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমার বিরুদ্ধে আপনার এ পরিকল্পিত প্রপাগান্ডা বা ক্যাম্পেইন দেখে অবাক হচ্ছি। কী সহজ ভাষায়-অবলীলাক্রমে অসত্য খবর, অতিরঞ্জনে ককটেল বানিয়ে পাঠকদের মধ্যে সরবরাহ করেছেন।

মানুষের সৎ, স্বচ্ছ চরিত্রে কীভাবে কালিমা লেপন করেছেন। আর আপনার পত্রিকার এ অসত্য ভাষা মনগড়া বক্তব্য ও খবরের চাপে আমি পিষ্ট হচ্ছি। আপনার এই অসত্য খবর বিশিষ্টজনরা, সুধীজনরা টকশোর আলোচনায় ব্যবহার করেছেন।

আমার সুনাম আরো নষ্ট করেছেন। অন্যায় না-করেও আমি কীভাবে বিতর্কিত হচ্ছি, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছি- মনে হয় আমার এদিকটি দেখার কেউ নেই। আপনি অন্যায়ভাবে আমাকে অপদস্ত করে চলেছেন, যা খুনের শামিল।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনার পত্রিকা ‘প্রথম আলো’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপনি আমাকে আমন্ত্রণ করেছিলেন। অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুরোধ জানিয়ে আপনার পত্রিকা থেকে ৭ বার আমাকে টেলিফোন করা হয়েছিল।

আমি আপনার আমন্ত্রণ ও অনুরোধ রক্ষায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের পাশে আাপনি বিভিন্ন ছবির সাথে আমার বিকৃত কার্টুন প্রদর্শিত করেছিলেন। ভিডিওতে সেটি আবার দেখিয়েছেন।

একজন অতিথিকে দাওয়াত দিয়ে এরকম অপমান করার নজির বাঙালি কালচারে, শিষ্টাচারে আছে বলে মনে হয় না।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, অথচ আমরা জানি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শুনেছি- সংবাদপত্র ও সাংবাদিক জাতির বিবেক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিয়ামক। শিক্ষার পথপ্রদর্শক। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের বাহক। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের হাতিয়ার।

সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই আমরা যখন দেখি, কিছু সংবাদপত্র ও সাংবাদিক অসত্য খবর প্রকাশ এবং এ অসত্য খবরকে উপজীব্য করে ক্রমাগত লিখে চলেছেন, টকশোতে অবললীক্রমে অসত্য লেখার উপর ভিত্তি করে কথা বলে চলেন-তখন সত্যি অবাক হই।

চিন্তিত হই। দুঃখ-বেদনায় আহত হই। ভাবি, অসত্য কি পৃথিবী নাচিয়ে বেড়াবে? সত্যকে কি কেউ সহায়তা করবে না? শক্তিশালী মিডিয়ার কাছে দেশের সুনাম এবং আমার অর্জিত সুনাম কি নষ্ট হবে? অসত্য বক্তব্য রাজত্ব করবে?

ভাবি, এটাই মনে হয়, ইয়লো জার্নালিজম। সেই ফাঁদে আমাকে ফেলেছেন, ফেলার চেষ্টা করছেন। আবার ভাবি, মনে করি, সেই প্রবাদের কথা-Truth shall prevail. এ প্রসঙ্গে আমি আপনাকে আপনার পত্রিকার গত ২২শে জুন জনাব হাসান ফেরদৌসের লেখা ‘খোলা চোখে-তথ্যমাধ্যম ও গণতন্ত্র’ শিরোনামে সম্পাদকীয়’র দিকে একটু বিশেষ নজর দিতে অনুরোধ করি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমাকে নিয়ে আপনার এই পরিকল্পিত প্রপাগান্ডার বিষয়ে, অসত্য ও মনগড়া খবর বিষয়ে, আমি আপনাকে আমার সম্পর্কে অসত্য লেখা প্রকাশ বন্ধে বারবার অনুরোধ করেছি।

শুভ্যানুধায়ীদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও আমি এ বিষয়ে মামলা করিনি। মামলা করতে যাইনি। এখনো কোনো মামলা করার ইচ্ছে আমার নেই। আমার পূর্বপুরুষ থেকে এখনো কেউ মামলা করেনি। আমিও মামলা প্রক্রিয়া পছন্দ করি না।

কেউ যদি আমাদের বিরুদ্ধে অসত্য কথা লেখে, কুৎসা রটায়, নিন্দা করে, তাহলে আমি উত্তম ব্যবহার করি, কাজ দিয়ে বিনয়ী ব্যবহার দিয়ে তার জবাব দিই। এর মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি।

আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, প্রথম আলো পত্রিকায় অসত্য লেখার পরও আমি কীভাবে আপনার সাথে সদাচরণ করেছি, কথা বলেছি, সত্য লেখার জন্য তথ্য-উপাত্ত দিয়েছি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য নতুন গাড়ি ক্রয় এবং কালকিনিতে আমার বাড়ি নির্মাণ, দুটি পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়, পদ্মা সেতু নিয়ে মনগড়া অসত্য প্রতিবেদনগুলোর উত্থাপিত বিষয়গুলো ইতিমধ্যে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।

এসব অসত্য, কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ টেনে পরিকল্পিতভাবে বারবার আমাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। অথচ আমার জীবন পুরোপুরি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি সারাজীবন সততা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এসেছি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্বও পালন করেছি।

আল্লাহর রহমতে সমাজে নিজেকে সৎ ও কর্মঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। অনেকে অর্থ উপার্জন করে আরামে-আয়েশে দিন কাটায়, কলকারখানা বানায়, অনেকে টাকা আয়-বর্ধনশীল কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে।

আমি সৎ উপায়ে অর্জিত আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আর্তমানবতার সেবা করেছি, করে যাচ্ছি। প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে আমার কষ্টলব্ধ উপার্জিত অর্থ ব্যয় করেছি। আমার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন দেখতে আসে।

আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সুধীজনরা এসেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকও এসেছিলেন আমার এলাকায়, আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাঁরা আমার শিক্ষা কার্যক্রমে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, বিমোহিত হয়েছেন।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, তারা অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখার জন্য আমি দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের স্বাধীনতা দিবসে আমাকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করে। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারাভাঙ্গা হলে ভাইস-চ্যাঞ্চেলরের হাত থেকে আমি এ পুরস্কার গ্রহণ করি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, মাদারীপুর, কালকিনিতে আমার গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেখার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান, অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী ও শিক্ষার পরিবেশসহ যাবতীয় কার্যক্রম দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন-আমি কীভাবে দেশের শিক্ষাপ্রসার ও উন্নয়নে কাজ করেছি।

সমসাময়িক কালে এভাবে শিক্ষাপ্রসারে কাজ করা লোকের সংখ্যা খুবই কম। আমি শিক্ষার সেই জায়গাটিতে ভিত রচনায় কাজ করেছি।

আমি মনে করি, আমার এলাকায় শিক্ষাপ্রসারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যতিক্রমধর্মী ৬টি কলেজ ও অসংখ্য বিদ্যালয় নিয়ে যদি আপনি একটি গবেষণা করেন তাহলে দেখবেন শিক্ষাপ্রসারে আমার অবদান কতটুকু।

স্বাধীনতার পর যারা এযাবৎ শিক্ষার জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের সাথে আমার অবস্থান আপনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

আমি প্রায় তিন বছর যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। তিন বছর আমি প্রচুর পরিশ্রম করেছি। প্রচুর কাজ করেছি। সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য চ্যানেলাইজ করেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ এবং বর্তমান রেল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন সেতু বিভাগের বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। আমি দায়িত্বে এসে সেতু বিভাগের কার্যক্রমে গতি সঞ্চার করি। কার্যক্রম ত্বরান্বিত করি।

মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি। সেতু বিভাগকে একটি কর্মমুখর বিভাগে উন্নীত করি।

‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নির্মাণে যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ২ বছর লেগেছে। সড়ক বিভাগের অধীনে ১৬০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় যার মধ্যে ৪৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্প।

এর অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। অধিকাংশের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যে শেষ হবে।

অনুরূপভাবে রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর অনেকগুলোর কাজ বাস্তবায়নাধীন। এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের ফিরিস্তি আমি দেব না।

জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি গত তিন বছরে যে কাজ করেছি, যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি, যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে-সে কাজ ১০০ বছরের ভেতরে ৫ বছর মেয়াদি কোনো সরকার করতে পারেনি।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছি, বাস্তবায়ন করেছি তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক এবং একটি ঐতিহাসিক দলিল।

ক্রমান্বয়ে আমার সময়ে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। দেশের জনগণ, ঢাকাবাসী শীঘ্রই এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন। আর আমার কাজের মূল্যায়ন আপনারা, দেশবাসী করবেন।


শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমার উপর আপনি যে অন্যায়, অবিচার করেছেন-এটা যেমন বন্ধ হওয়া দরকার, তেমনি আমার উপর আপনার ধারণাও পরিবর্তন হওয়া দরকার। আপনি যেভাবে আপনার পত্রিকার লেখায় আমাকে চিত্রিত করেছেন- আমি সে লোক নই।

আমি একজন সৎ, সচ্ছ ও নিষ্ঠাবান লোক। জেনেশুনে আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমার কাজের ধরন ও আমার সামাজিক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করতে পারেন, অবলোকন করতে পারেন।

প্রয়োজনে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায় আমার সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত শেখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড কলেজসহ অন্যান্য কলেজ, স্কুল-মাদ্রাসা, এতিমখানা ও সামগ্রিক এলাকা দেখে আপনি আমার সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়ন করতে পারেন।

আপনাকে আমার এলাকা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনি চাইলে আমি আপনার সফরসঙ্গী হতে পারি।

আমি কর্মজীবনে, ব্যবসায়িক জীবনে এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে সর্বদা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইন্ট্রিগ্রিটিতে বিশ্বাসী একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। কোনোদিন, কোনো সময়, আমি কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি।

সরকারি নিয়ম-আইন ভঙ্গ করে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করিনি। আমার কষ্টার্জিত, পরিশ্রমলব্ধ অর্থ গরিব-দুঃখি মানুষের উন্নয়নে, দেশের শিক্ষাবিস্তারে ব্যয় করেছি, করে চলেছি। অর্থ থাকলে অনেক মানুষের যে বদঅভ্যাসগুলোর সৃষ্টি হয়-তাতে আমি জীবনে কখনো সম্পৃৃক্ত হইনি।

আমার শত্রুরাও এ বিষয়ে বলবে না। আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবদ্দশায় না হলেও আমার অবর্তমানে এসব কাজের, আমার সরলতা, আমার সততা ও নিষ্ঠার এবং কর্তব্য ও দায়িত্ববোধের মূল্যায়ন হবে। সত্য, সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিনয়, জবাবদিহিতা আমার কাজের শক্তি, আমার অহংকার।

জানি না, কেন বারবার কলাম লিখে, গল্প বানিয়ে, রস দিয়ে, রং দিয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সম্পাদকীয় লিখে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়, পাশাপাশি আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়।

আমি বিশ্বাস করি, আমার সামগ্রিক দায়িত্ব পালন, আমার সততা একদিন মিথ্যাকে চাপা দেবে এবং আমার সততার কাছে সবাই লজ্জিত হবেন। আজ হোক, কাল হোক, সত্য একদিন উদ্ঘাটিত হবেই।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমি আবারো দৃঢ়ভাবে বলছি আমি আমার কাজে শতকরা ১০০ ভাগ স্বচ্ছ। কখনো কোনো অনিয়ম করিনি। অবৈধ কাজ করিনি। পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে আমি নিজের কাজে পুরোপুরি স্বচ্ছ।

আমার সকল সিদ্ধান্ত যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে, সেতু বিভাগে ডকুমেন্টেড হয়ে রয়েছে। একাজে কারো দ্বারা আমি প্রভাবিত হইনি। কোনো দরদাতাকে কোনোপ্রকার সুবিধা দেয়ার জন্য সুপারিশ বা চাপ প্রয়োগ করিনি। কারো কাছে কমিশন চাওয়ার প্রশ্ন অবান্তর।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনার দক্ষতা আছে, বুদ্ধি আছে, জ্ঞান ও পেশাগত অভিজ্ঞতা আছে। সম্পাদক হিসেবে আপনাকে আমি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। সমাজের উন্নয়নে, সাংবাদিক হিসেবে আপনার অনেক অবদান আছে।

আমি আশা করি, আপনি যেভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে, দক্ষতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন, তেমনি সেই সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে, আমার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, সে বিষয়টি বিবেচনা করে, সত্য প্রচারের মাধ্যমে আমার প্রতি সুবিচার করবেন।

সত্যকে প্রকাশ করবেন। আমার ক্ষুন্ন হওয়া মর্যাদা ও ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার সহায়তা করবেন। উটপাখি নয়, মানুষের জীবন চাই। মাথা তোলো, আওয়াজ ওঠাও- ‘বদলে যাও, বদলে দাও’-প্রথম আলো’র এই স্লোগানকে ধারণ করে আমার প্রতি সুবিচার করবেন, এটাই কামনা করি।

আশা করি, শুধু আপনার হাতে থাকা মিডিয়ার অফুরন্ত শক্তি দিয়ে নয়, সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অসত্য লেখার ক্যাম্পেইন বন্ধ করার জন্য আপনার প্রতি আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি।

এবং ইতিমধ্যে আপনার লেখায় আমার যে ইমেজ নষ্ট হয়েছে তা পুনরুদ্ধারে আপনার সহমর্মিতা ও সহযোগিতা কামনা করি। ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমি খুশি হব।

আমি আগেই বলেছি, আমার পরিবারে মামলার রেওয়াজ নেই। কিন্তু পরিস্থিতি এমনদিকে নিবেন না যাতে করে আমার পারিবারিক ঐতিহ্য ভঙ্গ করে মামলা করতে বাধ্য হই।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী

আরো পড়ুন

Comments to: প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৫

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us