সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ১৪ অক্টোবর ২০১১

জনাব মতিউর রহমান
সম্পাদক,
দৈনিক প্রথম আলো
ঢাকা।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক,
আজ ১৪ অক্টোবর ২০১১ তারিখে আপনার বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘মন্ত্রীর দুর্নীতির কারণে আটকে গেল পদ্মা সেতু’ শীর্ষক সংবাদের প্রতি এবং ‘নাইকো-হোসেন- পদ্মা-হোসেন’ নামে একটি গল্পের প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে (পেপার ক্লিপিং সংযুক্ত)।

প্রতিবেদনটি পড়ে আমি বিস্মিত ও ব্যথিত হয়েছি। প্রতিবেদনটি অনুমাননির্ভর ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে প্রতীয়মান। রিপোর্টটি পড়লে পাঠকের তাই মনে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বরাতে ব্যক্তিপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে গিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে-যাতে অন্য একটি শক্তির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বোধগম্য।

অনুমাননির্ভর বিষয় টেনে এনে একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন এবং নানাভাবে কথিত মিথ্যাকে সত্য প্রমাণের চেষ্টা কতটুকু যৌক্তিক এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাÑতা ভেবে দেখার জন্য খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।

উল্লেখ্য, যোগাযোগমন্ত্রীর অফিসরুম সংস্কারে আনুমানিক ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। অথচ বিষয়টি নিয়ে পত্রিকাটি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ের কথা লিখেছিল। এ নিয়ে প্রথম আলো সংবাদ করেছে, কার্টুন ছেপেছে, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখেছে।

একইভাবে একটি গাড়ি ক্রয়কে কেন্দ্র করে (যে গাড়ি কেনা হয়নি) পত্রিকাটিতেও আমার বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিপর্যায়ে সংবাদ, কার্টুন, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। ১৪ অক্টোবরের অসত্য সংবাদটি ব্যক্তিপর্যায়ে ৩য় সংবাদ।

পদ্মা সেতু’র নির্মাণ বিষয়ে আমি সবসময় সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে এসেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সব তথ্য উন্মুক্ত। আমি বলেছি, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের কাজ সৎ, নির্ভীক, অভিজ্ঞ, স্বনামধন্য এবং কারিগরিভাবে জ্ঞানসম্পন্ন একদল বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে হচ্ছে।

সাধারণত টিইসি কমিটি বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে করা হয়। কিন্তু স্বচ্ছতার জন্য আমি বিভাগীয় কর্মকর্তাদের বাইরে বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে কমিটি গঠন করি। কমিটির সদস্যরা হলেন-ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. শফিউল্লাহ, ড. আইনুন নিশাত এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ড. দাউদ।

দাতাদের নিবাচিত কনসালটেন্ট ও তাদের লিগাল কমিটি মূল্যায়ন করে তা অনুমোদনের সুপারিশ করে। ফলে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রশ্রয় পাওয়ার সুযোগ ছিল না, সুযোগ নেই। এতে কোনো দুর্নীতি ঘটেনি।

ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনের কাজসহ সেতু-নির্মাণে দরদাতা-নির্বাচনে বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন অনুসরণে ও তাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়নি এবং তা বিশ্বব্যাংকও অবহিত।

যেখানে দাতাদের অর্থায়নে সেতুর কোনো কাজ চূড়ান্ত হয়নি, বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন হয়নি, সরকারের অনুমোদন হয়নি, মন্ত্রী পর্যায়ে আসেনি-এক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা কীভাবে আসে?
একথা সত্যিই, সকল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মূল সেতুর দরপত্রে অংশগ্রহণ করে যোগ্য বিবেচিত হয়নি।

আর এটা কারো অজানা নয়, প্রত্যেক আন্তর্জাতিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে স্থানীয় একজন এজেন্ট সম্পৃক্ত থাকে। ফলে যারা কারিগরিভাবে মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে, অযোগ্য হয়েছে, তারা প্রায়শই অহেতুক ক্ষুব্ধ হয়ে অসত্য, অনুমান এবং কল্পনানির্ভর অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠায়, যাতে প্রকল্পের অনুমোদন বিলম্বিত হয় বা পুনরায় দরপত্র আহ্বান করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এসব অযোগ্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও তাদের দেশীয় এজেন্ট ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে এধরনের অনৈতিক ও পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধের খেলায় মেতেছে।

আর বিশ্বব্যাংক এক্ষেত্রে অনুমাননির্ভর বিষয়কে তদন্তের উপজীব্য করে প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটা পত্রিকার প্রকাশিত তদন্তের অংশটুকু অবলোকন করলে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।

এটা স্বীকার্য যে, সাকো আজকের নয়, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। দেশের বিদ্যুৎ জালানী ও অকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে চলেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর সাকো’র এমডি-এর পদ থেকে পদত্যাগের পর, আমার অবর্তমানে একটি অভিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ও কর্মকর্তা এ প্রতিষ্ঠানটিকে অত্যন্ত সুদক্ষভাবে পরিচালনা করে অতীতের সুনাম, সুখ্যাতি ধরে রেখেছে।

দেশের এই প্রতিষ্ঠানটির একদিন আমি কর্ণধার ছিলাম-এ অজুহাতে সাকো’-কে আমার কর্মপরিধির মধ্যে টেনে এনে পদ্মা সেতু’র মূল কাজে প্রাক যোগ্যতায় যারা ব্যর্থ হয়েছে-তারা এবং তাদের সূত্র এবং আপনার পত্রিকায় মনের মাধুরী মিশানো বক্তব্য দিয়ে আমাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।

দেশের পদ্মা সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত ও আটকে দেয়া হচ্ছে। এতে দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আমি আবারো দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমার হাত দিয়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়নি। পদ্মা সেতু’র নির্মাণের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

মন্ত্রী হিসেবে আমার কার্যক্রমের রেকর্ড পর্যালোচনা বা অবলোকন করলে এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে। অযোগ্য ঠিকাদার এবং স্থানীয় এজেন্টদের অসত্য ও কাল্পনিক অভিযোগও সাকো’র হস্তক্ষেপের নামে এ-ধরনের কুৎসা প্রতিবেদন প্রকাশ এবং ব্যক্তির সুনাম, সুখ্যাতি বিনষ্টের প্রয়াস কারো কাম্য নয়।

আমি মনে করি, পত্রিকাটির সম্পাদকও চাইবেনা না-বিনা দোষে, বিনা কারণে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক কেউ অপমানিত হোক। পদ্মা সেতুর মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হোক।

তাই আমার অনুরোধ, দেশের স্বার্থে, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বার্থে এ-ধরনের নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ বন্ধে আপনার হস্তক্ষেপ, আপনার সহযোগিতা চাই।

আমার এই পুরো বক্তব্য আপনার প্রতিবেদনের ন্যায় সমগুরুত্ব দিয়ে পরবর্তী সংখ্যায় প্রকাশের জন্য অনুরোধ করা গেল।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী

আরো পড়ুন: আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি

Comments to: প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us