সিভি তৈরির নিয়ম নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন।
চাকরি প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভালো সিভি তৈরি করা। এমন একটি সিভি যা নিয়োগদাতাদের নজর কাড়ে। যা আপনার সম্পর্কে নিয়োগদাতাদের একটি ভালো ধারণা দেয়। ব্যাপারটি খুব কঠিন কিছু নয়। এর জন্য আপনার প্রয়োজন সিভি লেখার নিয়ম ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারা।
আমাদের দেশের বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী একটা ভুল করেন। সেটা হলো, কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে পাওয়া সিভি চাকরির আবেদনের সময় জমা দেয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলোর মান ঠিক থাকে না। তাই এ ধরনের সিভি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বরং চেষ্টা করলে আপনি নিজের জন্য মানসম্মত একটি সিভি বানাতে পারবেন।
সিভি কী?
সিভি বা কারিকুলাম ভিটা (Curriculum Vitae) হলো ২ – ৩ পাতার একটি ডকুমেন্ট যেখানে আপনার কাজ, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার মূল অংশগুলোর উল্লেখ থাকে। চাকরির পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক কাজেও এর ব্যবহার রয়েছে। এটি সাধারণত ইংরেজিতে লেখা হয়।
সিভিতে কী কী থাকে?
- ব্যক্তিগত তথ্যঃ এ অংশে আপনার নাম, ফোন নাম্বার ও ইমেইল ঠিকানা থাকে। কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হতে পারে। তবে আপনার ছবি দেয়া আবশ্যক নয়।
- সারাংশঃ এ অংশে খুব সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিতে হয়। এটি ইংরেজিতে ‘Personal Statement’ বা ‘Objective’ হিসাবে পরিচিত। আপনি কোন ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চান ও সে ক্যারিয়ারের সাথে বর্তমান চাকরি কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, সে ব্যাপারে ১০০ শব্দের মধ্যে লিখুন।
- কাজের অভিজ্ঞতাঃ আপনি এর আগে কোন ধরনের কাজ করেছেন, তা এ অংশে বর্ণনা করুন। সাম্প্রতিক কাজের কথা সবার আগে লিখুন।
- শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ সাম্প্রতিক ডিগ্রি বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে শুরু করুন। মাস্টার্স ডিগ্রিধারী হলে এইচএসসি বা এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
- দক্ষতা ও অর্জনঃ যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, তার সাথে সম্পর্কিত কোন দক্ষতা থাকলে এ অংশে লিখুন। প্রাসঙ্গিক হলে কোন পুরস্কার, সম্মাননা বা প্রকাশনার কথাও উল্লেখ করতে পারেন।
- রেফারেন্সঃ আপনার কাজ বা দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে ভালো ধারণা রয়েছে এমন ২ – ১ জন ব্যক্তির নাম ও যোগাযোগের তথ্য রেফারেন্স হিসাবে দিন। তবে আগেই তাদের অনুমতি নিয়ে রাখুন। উল্লেখ্য যে, সব চাকরির জন্য রেফারেন্স অংশ থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। প্রয়োজনে নিয়োগদাতারা আপনার কাছে এ ব্যাপারে তথ্য চাইতে পারেন।
সিভি ফরম্যাট কেমন হওয়া দরকার?
- অধিকাংশ চাকরির জন্য ১ – ২ পেইজের সিভি বানানো যথেষ্ট।
- ‘A4’ সাইজের পেইজ ব্যবহার করুন।
- ‘Arial’, ‘Times New Roman’ বা ‘Calibri’ ফন্টে লিখুন।
- ১১/১২ ফন্টের সাইজ বেছে নিন।
- ১ – ২ ধরনের ফন্ট কালারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুন।
- সিভির অংশগুলোকে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে ১৪ – ১৬ ফন্ট সাইজের সাবহেডিং ব্যবহার করুন।
- পড়ার সুবিধার জন্য বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে সারাংশের জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।
- দুই লাইনের মধ্যে যথেষ্ট স্পেসিং বজায় রাখুন।
- বিশেষ কোন দরকার ছাড়া সিভির ডিজাইনে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা থেকে বিরত থাকুন। নিয়োগদাতার কাছে ডিজাইন দৃষ্টিকটু লাগলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা বেশি।
আরো পড়ুন
কোন ধরনের সিভি লিখবেন?
- দক্ষতাভিত্তিক সিভিঃ যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, তার সাথে সম্পর্কিত দক্ষতাগুলোর উপর জোর দিয়ে এ ধরনের সিভি লিখতে পারেন। শিক্ষার্থী ও সদ্য গ্র্যাজুয়েট হয়ে থাকলে বা এক ক্যারিয়ার থেকে অন্য ক্যারিয়ারে যেতে হলে এ ধরনের সিভি প্রযোজ্য।
- কাজের অভিজ্ঞতাভিত্তিক সিভিঃ বর্তমান চাকরি থেকে সিনিয়র কোন পদের চাকরিতে আবেদন করলে এ ধরনের সিভি লিখুন।
- যেসব চাকরিতে কাজের নমুনা বা পোর্টফোলিও থাকা গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর ক্ষেত্রেও এমন সিভি কাজে দেবে।
- কী দায়িত্ব পালন করেছেন, তার বিবরণ দেয়া এ সিভির উদ্দেশ্য নয়। বরং আপনার কাজ কোন ধরনের সাফল্য পেয়েছে বা প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করেছে, তা উপস্থাপন করুন।
সিভি লেখার নিয়ম কী?
- ভুলে ভরা সিভি নিয়োগদাতাদের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। তাই নির্ভুল ভাষা ও বানান নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে অন্য কারো সাহায্য নিন।
- আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, সে চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সিভির ভাষা ও ধরনে পরিবর্তন আনুন।
- যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, সে প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সিভিতে উল্লেখ করুন।
- আপনার সিভির উপর নিয়োগদাতারা ইন্টারভিউর সময় প্রশ্ন করতে পারেন। তাই প্রতিটি অংশে কী লিখছেন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
- যথাসম্ভব সহজ ও ছোট বাক্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করুন। অহেতুক কঠিন শব্দ আর জটিল ভাষার ব্যবহার বিরক্তির জন্ম দেবে।
- অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক কোন কিছু লেখা থেকে বিরত থাকুন।
- বহু পেশাজীবী আর চাকরিপ্রার্থী কিছু শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহার করেন। যেমনঃ “Passionate” কিংবা “Leadership”। এ ধরনের শব্দ সিভিতে না রাখা শ্রেয়।
- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা না থাকলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের লিংক সিভিতে দেয়া অনুচিত। প্রযোজ্য হলে নিজের লিংকডইন অ্যাকাউন্টের লিংক ব্যক্তিগত তথ্যের সেকশনে রাখতে পারেন। তবে তার আগে লিংকডইন প্রোফাইল সাজিয়ে নিন।
সিভি কীভাবে ভালো করা যায়?
- যে ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তার সাথে সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জনে সময় দিন। কোন ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠলে সিভি আপডেট করে ফেলুন।
- কোন কাজে যুক্ত থাকলে অগ্রগতি সম্পর্কে লিখে রাখুন। এতে করে সিভিতে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পারবেন।
- মাঝে মাঝে সিভি রিভিউ করুন। কোন অংশে ঘাটতি থাকলে সময় নিয়ে সে অংশ গোছানো অবস্থায় নিয়ে আসুন।
- সব চাকরি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য একই ধরনের সিভি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বরং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সিভি বানান।
- ইন্টারনেটে সিভির বিভিন্ন টেমপ্লেট পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করার সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিন।
No Comments
Leave a comment Cancel