প্রিয়তমা,
আমি ভাল আছি। প্রথমে আমার কথা বললাম কেন? জানি, আমার কথাই আগে জানতে চাইবে।তোমার কথা আর জানতে চেলাম না। কষ্ট দিয়ে লাভ কি? তুমি যে ভাল নেই তা অজানা নয়। হয়তো অবাক হচ্ছো। মৃত্যুর পরও কি করে চিঠি লিখলাম? হ্যাঁ, আমিই লিখেছি। স্বর্গে আসার পর এখানকার প্রহরীকে অনেক অনুরোধ করলাম যেন, তোমায় শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ দেয়।প্রথমে তিনি কোনভাবেই মানতে নারাজ। অবশেষে আমার একটি পূণ্যের কারণে নাকি এ সুযোগটা দেয়া হল।
ভাবছি, তোমাকে ভালবাসা ছাড়া জীবনে তো কোন পূণ্য করিনি। আমাদের এই ভালবাসার কারণেই হয়ত মৃত্যুর পরও আমি তোমাকে চিঠি লিখতে পারছি। আমায় ছেড়ে একা থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে? ভেবো না, ভীড়ের মাঝে যখন তুমি একা হয়ে পড়বে, কাছে থেকেও যখন সবাই দূরের কেউ হয়ে যাবে, আর নিজেকে খুব একা মনে হবে, ঠিক তখনই আমায় ভেবো, তোমার ভাবনা মাঝেই সঙ্গী হব। ব্যাস্ত এ শহর যখন নিশ্চুপ হয়ে যাবে, ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দও যখন খুব কানে লাগবে, তখন যদি অঝোর ধারার কান্নারা বুকে জমাট বাঁধে, মনে রেখো ,আমি অশ্রু হয়ে তোমার কাছেই ফিরে আসব।
প্রিয় গানটি শুনে যখন উদাস হবে, শুন্য দৃষ্টি যখন আমায় খুঁজবে, তখন যদি চেয়ে দেখো, একটু দূরেই আমায় পাবে। মাঝরাতে যখন জানালার পাশে বসে আমায় ভাববে, আমার ফটোখানি বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরবে, আর কাঁদবে আমি নেই তো কি হয়েছে? দূর আকাশের তারা’রা তো আছে, তাদের একজন হয়েই না হয় তোমার সাথে গল্প করব….।
মারা যাওয়ার পূর্বমুহুর্তে তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছিলাম। কিন্তু হায় কপাল! তোমাকে শুনিয়ে যেতে পারলাম না। তাই আমার লেখা শেষ কবিতাটা এই শেষ চিঠিতেই তুলে দিলাম।
তুমিই আমার ভোরের পাখি
মিষ্টি মধুর ধ্বনি তুমিই আমার স্বপ্নছবি
সুখের হাতছানি তুমিই আমার রঙ্গীন ঘুড়ি
নাটাই সুতার খেলা তুমিই আমার দূর আকাশের
হাজার তারার মেলা তুমিই আমার বর্ষা ঋতু
ইষ্টি-বৃষ্টি বেলা তুমিই আমার স্বর্গপরী
স্বর্গ সুখের ভেলা
তুমিই আমার শেষ বিকেলের শেষ গল্পের ছায়া
তুমিই আমার অবুঝ মনের ভালবাসার মায়া।
ইতি
প্রিয়তম
No Comments
Leave a comment Cancel