২৩.১.৮২ (বিকেল ৩.৩০ মিনিট)

দিলা,
তোমার চিঠি পড়লাম। আজ ‘রোববারে’র চার্জ বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিলো। যে ছেলেটি আমার জায়গায় আসছে সে খুব ভালো ছেলে। আমাকে একটি ‘কলাম’ লেখার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করছে।

মানসিকভাবে যদি ভবিষ্যতে ঠিক থাকতে পারি তো লিখবো। তোমার চিঠি প’ড়ে বিষাদে মন ভরে উঠলো। চারদিকের পৃথিবীতে এমন সুন্দর জীবনপ্রবাহ ব’য়ে যাচ্ছে অথচ আমাদের দু’জনের জীবনের জন্য এতো বিরুদ্ধ পরিবেশ।

আবার চিকিৎসার ব্যাপারে খুবযত্ন নিও, দরকার বোধে আমাকে জানিও। আমি হয়তো ডাক্তারের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবো। প্রোফেসর নূরুল ইসলাম আমাকে খুব ভালোবাসেন।

আমি এ-ব্যাপারে সামান্য সাহায্যে এলে আমার খুব ভালো লাগবে। খুব উদ্বিগ্ন রইলাম। দিলা, তোমার বিপদে আমাকে কাছে ডেকো। তুমি কষ্ট পেলে বেঁচে থাকা আমার অর্থহীন হ’য়ে যাবে—যে ক’রেই হোক আজ না হয় কাল সংকট উত্তীর্ণ হবোই।

দিলা, আমাদের গভীরভাবে, সুন্দরভাবে বাঁচতে হবেই, আমরা কেন বঞ্চিত হবো, বঞ্চিত থাকবো। তোমার মতো আমিও বিশ্বাস করি ‘জীবনের কোনো সমস্যাই থেমে থাকে না।’ আমরাও একটা পথ খুঁজে পাবো। তুমি কষ্ট পেয়ো না, উৎফুল্ল থাকার চেষ্টা করো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ক্রমশই খারাপ হ’য়ে উঠছে। তুমি সাবধানে থেকো। তোমাকে নিয়ে আমার সবদিক থেকেই ভয়। আমাকে মেরে ফেলো না।

সব সময় সাবধানে সর্তক থাকবে।

দিলা, আমার প্রতিটি মুহূর্তে তুমি উপস্থিত আছো—আমি যেখানেই যাই দু’টি বিষণ্ন উজ্জ্বল চোখ আমার পিঠে গেঁথে থাকে। আমি স্পষ্ট তোমার অস্তিত্ব টের পাই আমার শরীর ঘেঁষে। তোমার দুটি চোখ সর্বক্ষণ আমাকে পাহারা দিচ্ছে।

আমার বোধে, আমার অনুভূতিতে, চেতনাবচেতনে তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি সর্বক্ষণ টের পাই। কোনা কাজে মন বসাতে পারছি না। লেখালেখি অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

যদি বাড়ির খবর কুশল হয়, তো টাঙ্গাইল গিয়ে তোমার কাজ সেরে এসো।

সব কাজ সেরে যখন দেখা করা সম্ভব হয়, তখনই দেখা কোরো—আমি জোর করবো না, ধৈর্য ধরার চেষ্টা করবো। কিন্তু, কোমল, না দেখে যে থাকতে পারি না। আজকে তোমাকে দেখে আশঙ্কায় বুক কেঁপে উঠেছিলো—হয়তো কোনো দুঃসংবাদ। হলোও তাই। কতোগুলো খারাপ খবর পেলাম।

লাভের মধ্যে তোমার চিঠি। সে চিঠিও মনটা বিষাদে ভ’রে দিলো। তোমার চিঠি আমার কাছে লাইফ বোর্ট। কিন্তু সে চিঠি  যদি বিষাদময় খবরে ভরা থাকে আমার কি অবস্থা হয় তা তুমি বুঝবে।

কোমল, সারাজীবন কিছুই তো পাইনি, এখন যখন পেয়েছি—আর হারাতে চাই না। আমি সোজা হ’য়ে দাঁড়াতে চাই, একটা লণ্ডভণ্ড করে ফেলতে চাই। এই বেদনার ভার আমি আর বইতে পারবো না।

তুমি আমাকে সাহস দিও।

তোমার
জীবন
২৩.১.৮২

আরো পড়ুন:

রফিক আজাদের চিঠি, দিলারা হাফিজকে

দিলারা হাফিজকেরফিক আজাদের চিঠি

Comments to: রফিক আজাদের চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us