প্রিয়,
মেঘা
চিঠি খুলেই অবাক হয়ে ভাবছো হঠাৎ আমি কেন তোমাকে লিখলাম চিঠি? হুমমম ভালোবাসি যে অনেক তাই তো চিঠি লিখা। কেমন আছে আমার মেঘা জানতে ইচ্ছে করছে খুব বেশি।
সেই যে শৈশব কৈশোর পেরিয়ে দুজনের একসঙ্গে বড় হওয়ার দিনগুলো মনে আছে তোমার?পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ ছায়ায় কৃষ্ণচূড়ার ডালে বাঁধা দোলনায় দোল খাওয়া? কি আনন্দে খিলখিল হাসির বন্যায় ভেসে যেতে তুমি।
বৈশাখের হাওয়ায় লাল ফুল টুপ টুপ করে ঝরে পড়তেই হাসির ফোয়ারা বইতো তোমার ঐ টোল পড়া গালে। মাটিতে ও ফুলের বন্যা। ইশশশ কি সুন্দর দিন ছিল!
আহ্ চাইলেও সেদিন আসবে না আর মেঘা তাই না? আচ্ছা তোমার এখনো ঐ কৃষ্ণচূড়ায় হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়?
তোমার পছন্দ ছিল একটা সাজানো ছিমছাম দোতলা বাড়ি আর সামনে পিছনে কৃষ্ণচূড়ার বাগান যেখানে থাকবে লাল কৃষ্ণচূড়ারা জড়াজড়ি করে । জানালা খুললেই চোখভরে দেখবে সে ফুলের অপার শোভা!
হ্যাঁ তেমনি একটা বাড়ি থেকে এ চিঠি লিখছি। জানালার সামনে বসেই। এই মেঘা, তুমিও কি দেখছো আমার চোখে? জানো সেবার অফিস থেকে সবাই মিলে গিয়ে ছিলাম সাজেক। আরে মেঘেরও যে কত রূপ তা দেখে অবাক হয়েছি!
ঠিক যেন তুমি মেঘা! যেন আমার মেঘালয়ের মেঘা তুমি! যেমন রূপ বদলে ফেলো। মেঘকে ছুঁয়ে মনে হচ্ছিল যেন ছুঁয়েছি আমার মেঘাকেই।
অসাধারণ অনুভূতি! এই শোনো, মেঘা তুমি কি যাবে সঙ্গে আমার ঐ মেঘ ছুঁয়ে দেখবো দুজন দু’হাতে মেঘ নেবো।
বলো নেবে না? আমার জানতে ইচ্ছে করে তুমি ও কি ভাবো আমায় যতটা ভাবি আমি তোমায়?মেঘা মনে আছে? একদিন বলেছিলে কোন দিন ভুলবে না আমাদের ভালোবাসার দিনগুলো আর এই আমাকে।
তবে কেন ভুলে আছো এতটা বছর ধরে? তুমি জানো না মেঘা সব প্রেমিক তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য চুড়ি টিপ আরো কত কি গিফট করে আমি কখনো কিন্তু কিছু দেইনি তোমায় ।তোমার প্রতিটা জন্মদিনে আমার বাড়ির আঙিনায় চারা রোপণ করতাম।
হুমমম তোমার প্রিয় কৃষ্ণচূড়ার চারা।সেগুলোই আজ বড় হয়ে ফুল দিচ্ছে আর স্মরণ করছে আমার মেঘাকে। অপেক্ষায় আছে কখন আসবে মেঘা চোখের আশ মিটিয়ে দেখবে ফুলের শোভা। ফুল ঝরে পুরোটা আঙিনা রক্তাক্ত হয়ে থাকে ঠিক আমার বুকের বামের রক্তাক্ত জমিনের মতোই।
তুমি ভালো আছো? ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে? আচ্ছা তুমি সেদিন এমন করে পালিয়ে গিয়েছিলে কেন আমায় ছেড়ে? এতটা বছর পর জানতে ইচ্ছে করে। আমার কোন অভিযোগ নেই মেঘা।
হয়তো তোমার ভালোবাসার যোগ্যই আমি ছিলাম না। নাকি ছিল আমার ভালোবাসায় ছিল কোন খাদ? জানিনা আমি মেঘা শুধু জানি আজও তোমায় ভালোবাসি সেই প্রথম দিনের মতো। তোমার টোলপড়া গালের ঐ হাসিটা আর কাজলমাখা চোখ জোড়া আজও ভুলিনি।
ঠিকানা পেয়েই দেরি না করে লিখেছি চিঠিটা । না, উত্তর দিতে হবে না ভালো থেকো তুমি ভালো আছি এই আমি একলা একাকী কৃষ্ণচূড়া ভিলায়।
ইতি
দীপ্ত
পুনশ্চ-আমাদের সম্পর্কের মতো নামটাও কি ভুলে গিয়েছো? নাকি মনে আছে দীপ্ত কেউ তো ছিল?
লেখা: সাবেরা সুলতানা সুমী
আরো কিছু চিঠি পড়ুন
No Comments
Leave a comment Cancel