প্রিয়তমেষু
পত্রের প্রথমে আমার ভালোবাসা নিয়ো। প্রায় এক যুগ হয়ে গেল তোমার সঙ্গে যোগাযোগ নেই। নিশ্চয় ভালো আছ। প্রতিটি মুহূর্তে শুধু তোমার কথা মনে পড়ে। যখন একাকী বসে থাকি, তখন তোমার কথা খুব মনে পড়ে। সে সময় আমার মন খুব অস্থির হয়ে পড়ে। বেশিক্ষণ কোথাও বসে থাকতে পারি না। মস্তিষ্কের ট্রিলিয়ন নার্ভগুলো একসঙ্গে নড়াচড়া শুরু করে দেয়। আমি ভীষণভাবে অস্থির হয়ে পড়ি। তুমি জেনে অবাক হবে, আমার মস্তিষ্কের কোনায় কোনায় তোমায় নিয়ে ভাবনাগুলো জ্যাম হয়ে আছে, মাথা খুব ব্যথা করে। আজকাল কোনো নারী দেখলে তাকিয়ে থাকি। এ জন্য অনেক মেয়ে আমাকে লোফার পর্যন্ত বলেছে। মুখ বুজে সব সহ্য করে যাই। বিশ্বাস করো, অনেক মেয়েকে তোমার মতো লাগে। ঠিক তুমি যেভাবে হাঁটতে, আজকাল ওই মেয়েরা সেভাবে হাঁটা শুরু করে দিয়েছে। তোমার হাঁটা এত সুন্দর ছিল যে, আড়চোখে তোমার চলে যাওয়া দেখতাম। তোমার হাঁটা আমাকে ভীষণভাবে মোহিত করত।
ভারী বর্ষা দিনের মধুর দিনগুলো মনে করে, তোমার জন্য আমার হৃদয়ের স্পন্দন এখনো বেড়ে যায়। বিশ্বাস করো তোমার জন্য আমার চোখে কখনো পানি আসে না। চোখের পানির নহর উল্টো পথে গিয়ে বুকের ভেতরে খরস্রোতের সৃষ্টি করেছে। তাই খাওয়া-দাওয়া ও চলাফেরা করছি বুকের ভেতর ধড়ফড়ানি নিয়ে। মিথ্যে বলছি না, বুকের ভেতরের কষ্টগুলো ন্যানো সেকেন্ডের জন্যও থামে না।
আমাকে তো বাঁচতে হবে, তাই হৃদয়ে একটি কৃত্রিম হার্ট সংযোজন করে নিয়েছি। এখন আমি সেই হার্টটি একটি ব্যাগে করে পিঠে নিয়ে বেড়াচ্ছি। ভেতরের হৃদয়ে তোমার স্থান দখল করে আছে আর বাইরের হৃদয় দিয়ে আমার দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।
চাঁদনি রাতকে আজকাল বড় ভয় লাগে। আমার মনে হয়, জ্যোৎস্না আমাকে গ্রাস করে ফেলবে। শুধু জ্যোৎস্না নয়, সব সুন্দরকে আমার এখন ভয় লাগে। কোনো ফুলের দিকে তাকাতে পারি না, বিশেষ করে লাল গোলাপকে কণ্টকযুক্ত মনে হয়। একসময় ছিল, তোমাকে রক্তিম গোলাপের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বিশেষ দিনের অপেক্ষায় থাকতাম। কত বছর ধরে তোমাকে ঈদের ও নতুন বছরের গিফট কার্ড দিতে পারিনি! তোমার নিশ্চয় মনে আছে, সব সময় লাল গোলাপের ঈদকার্ড ও নিউ ইয়ার কার্ড দিতাম।
তোমায় নিয়ে রিকশায় ঘুরে বেড়ানোতে ছিল আমার সুখ। আজ আমি অনেক দূরে, এখানে কোনো রিকশা নেই। তবে লন্ডন শহরে একধরনের পরিব্রাজকদের ঘুরিয়ে আনন্দ দেওয়ার জন্য রিকশা দেখা যায়। যদি কোনো দৈবিক কারণে অক্সফোর্ড সার্কাসে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যায়, তুমি না চাইলেও জোর করে তোমাকে নিয়ে লন্ডন শহরে রিকশা দিয়ে চক্কর দেব। জানি এগুলো আমার দিবাস্বপ্ন। আচ্ছা, তুমি কি জানো, দিবাস্বপ্ন কাকে বলে? আজকাল তোমায় নিয়ে প্রায়ই দিবাস্বপ্ন দেখি।
তোমাকে যখন ভালোবেসেছিলাম, আমি একটি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখনো ঘোরের জগতে বাস করছি। প্রেম অন্ধ, তা আমি জানি। তবুও আমি আজ অন্ধ। আমার অন্ধ দুটি চোখ দিয়ে তোমাকে ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য সৃষ্টিকর্তা বুঝি তোমার অঙ্গে মেখে দিয়েছেন। আমি যখন বন্ধুদের সঙ্গে তোমার রূপের প্রশংসা করি, তারা আমাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে আর বলে, ‘তোমার প্রেয়সীর থেকেও অনেক সুন্দরী মেয়ের জগতে অভাব নেই।’ আমি তাদের বলি, ‘আমার দুটি চোখ যদি তোদের লাগিয়ে দিতে পারতাম!’
হে প্রিয়া
তুমি কখনো বুঝবে না প্রেমে কত জ্বালা। তুমি তো আমাকে ভালোবাসনি। আজ বুঝতে পারছি, সব ছিল তোমার ছলনা। কিন্তু সব বুঝেও কেন একটি মুহূর্তের জন্যও তোমাকে ভুলতে পারছি না! তোমার কাছে কি তার কোনো জবাব আছে? নেই। তবে শোনো, তোমাকে ভালোবেসেছি, ভালোবাসছি এবং আমরণ ভালোবেসে যাব। তোমাকে নিয়ে লিখতে গেলে, আটলান্টিক মহাসাগরের পানির সমপরিমাণ কালি ফুরিয়ে যাবে, তবুও লেখা শেষ হবে না। তাই কথাগুলো আমার হৃদয়ের হার্ডডিস্কে জমা রাখলাম। জিপ ফাইলের মাধ্যমে কম্প্রেস করে সযতনে রেখে দিয়েছি। তোমাকে অনেক কথা বলার ছিল। কখনো কি তোমাকে ফের দেখতে পাব? যদি পাই, অনেক কথা বলার আশা রাখি। অবশ্য যদি তুমি শুনতে চাও…।
ইতি,
ম
পুনশ্চ: আমার চিঠি তোমাকে কোনো প্রকার দুঃখ দিয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। অবশ্য ফেসবুকের দুনিয়ায় প্রেমের চিঠি তোমার কাছে সেকেলে লাগতে পারে বৈকি!
মোহাম্মদ আবদুল মালেক: ইমেইল: malu_safo@yahoo.com
No Comments
Leave a comment Cancel