সুপ্রিয় হলুদীয়া,
তোমাকে চিঠিতে লিখছি একটা কারণ আছে, সেল ফোনে অনেক কথা বলা যায় না, কথাগুলি বললে হয়তো তুমি নানান যুক্তি দিতে আমি যা বলতে চাইলাম তা হয়তো বলা হত না। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে তুমি আমাকেও নানান কথা বলতে, কথাগুলি ঠিক তোমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারতাম না। আজ তোমার বিয়ের প্রায় এক বছর পরে তোমার সাথে আমার দ্বিতীয়বার বসুন্ধরা সোপিং মলে দেখা হলো, এবার তোমার সাথে তোমার বর নেই গতবার বেশ গর্ব করে তোমার বরের সাথে তুমি আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলে।
আজ তোমাকে আগের থেকে সব চেয়ে বেশি সুন্দরী লাগছিল, পড়েনে ছিল হালকা কাঁরু কাজের জামদানি শাড়ী, বেশ ছিপ ছিপে লম্বা লাগছিল তোমাকে, পায়ে ফ্লাট স্যন্ডেল, মাঝারী লম্বা মেয়েদের ফ্লাট স্যন্ডেলে দারুন মানায়, গাঁয়ে রঙটা আরও কাঁচা হলুদের মত আরো উজ্বল হয়েছে হয়তো সোপিং মলের বেশি লাইটিংএর কারণে, তোমার ওয়েট একটু বেড়েছ মনে হলো, তোমার হাত দুইটি বেশি বেশি ভরাট মনে হলো, শুনেছি বিয়ের পর পরেই মেয়েদের নাকি শরীরে ওয়েট বেড়ে যায়।
কি জানি !! কানে স্বর্ণের ঝুমকা দুল, কাঁচের চুড়ি এক হাতে দুই ডজন করে নানান রঙ মিলিয়ে। আমাকে দেখা মাত্র তুমি বেশ অস্থির হয়ে আমার কাছে ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালে আমার একা একা হাঁটা থামিয়ে দিলে যেমন করে তুমি আমাকে থামিয়ে দিতে নিউ মার্কটের বই দোকানের সামনে, থামিয়ে দিয়েই খুব জোড়ে হা.আ.. বলতে, কিন্তু আজ বলনি। মেয়েদের বিয়ের পরে তাঁদের মনে দেহে নানান পরিবর্তন আসে তা আমার কাছে বেশ ষ্পষ্ট হলো, কেন যেন তোমার খুব পাশা-পাশি, কাছি কাছি দাড়াঁতে চাচ্ছিলাম না বরং তুমি চাচ্ছিলে।
দুই একটা কথা জিজ্ঞাসা করলে তুমি, আমিও করলাম তবে মনে মনে অনেক কথা বলা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে কথার ফাঁকে ফাঁকে থেমে যাওয়ার সময়। তোমাকে এক নজরে দেখার সময় হোক আর কিছু সময় ধরে দেখার সময় হোক, আমি বেশ বুঝলাম একজন পাকা শিকারীর মত তুমি তোমার বরকে শিকার করে তোমার খাঁচায় বন্দী করে রেখেছো, আমি খুব খুশি হয়েছি, নিজেও সুখ অনুভব করেছি। তুমি বার বার জানতে চেয়েছ ঠিক কবে আমি মাথায় পাগড়ী পড়ব, বার বার বলতে চেয়েছে তুমি আমার জন্য মেয়ে ঠিক করে দিতে চাও যাতে করে আমিও এক শিকারীর শিকার হয়ে পড়ি, সারা জীবনের বাঁধনে বাঁধা পড়ি কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম না পুরানা দিনের দুঃখ, বেদনা, কষ্টগুলি শুধু তোমার সামনে আজ সামনে দাঁড় করাতে।
অনেকের মত আমিও তো চাই আমার জীবনে দুঃখের পরে সুখ, বেদনার পরে আনান্দ, কষ্টের পরে শান্তি আসুক। আমি কখনো তোমাকে বুঝাতে চাই নি যে, একটি বৃক্ষ বড় বড় দাঁত-ওয়ালা কাঠ কাটা করাত দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অন্য ভাবে বিচ্ছিন্ন হলে হয়তো কথা ছিল না কিন্তু সে দিন সব চুড়ান্ত হলো সেদিন থেকে কয়েক দিন ধরে চলল বড় বড় দাঁত-ওয়ালা কাঠ কাটা করাত দিয়ে আমার বুকের উপর মহড়া। থাক সে সব কথা, অফিস থেকেও চাপ আছে, পরিবার থেকে আরও বেশ চাপ আছে আর আমি আমি ভালো করে জানি যে, বিয়ে করে ব্যস্ত থাকার মধ্যে একটি জীবনের সার্থকতা থাকে, জীবন পরিপূর্ণ হয়; সমাজে, পরিবারে একটি আলাদা মর্যদা পাওয়া যায়।
অফিসে যখন চাকুরী করি তখন তো অফিসের ডেকোরাম মানতে হবে, পরিবারে যখন বাস করি তখন তো পরিবারের নিয়মে থাকতে হবে। পরিবারের বড় সদস্যরা আমার জন্য একটি মেয়ের খোঁজে বেশ ব্যস্ত হয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিবাবকরা যাকে পছন্দ বা মনোনিত করবে সেখানে আমার মত থাকবে। আমারও তোমার মত সুখি হওয়াটা খুব প্রয়োজন, এখন আর আমার একা থাকাটা বে-মানান, আমাদের সমাজের দম্পত্তিদের সুখি হওয়াটাই সকলের বড় লক্ষ্য, আর আমিও সেটাই চাই, আর বুঝি সংসারে সুখি হওয়াটা নিজেদের উপর নির্ভর করে।
অভিবাবকরা মেয়ে পছন্দ করুক তোমার বর সহ তোমাকে বিয়ের কার্ড পাঠাবো। তোমার বরের দিকে খেয়াল রেখো, তাঁকে ঘরমুখি করো, বেশি রাত বাইরে থাকতে দিও না, শাড়ীর আঁচলে বেঁধে রেখো বা ওড়নায়, মনে হলে সময় করে আমার হট মেইলে বাংলায় চিঠি দিও। ফেস বুকে চিঠি দিও না, চিঠি দিও। বড় হোক, ছোট হোক, চিঠি দিও। ভালো থেকো, শরীরের যত্ব নিও। তোমার ফাইনাল পরীক্ষা কবে জানাবে। আমাদের আম গাছটিতে এবার অনেক আম এসেছে। বাগানের নানান ফুল ফুটেছে। ভালো থেকো। অনেক অনেক ভালো থেকো।
ইতি
হলুদ বরণ
No Comments
Leave a comment Cancel