মা,
যদিও ভাবিতেছি কাল ভোরে তুমি আসিবে, তবু তোমার কাছে না লিখিয়া পারিলাম না।তুমি হয়তো ভাবিতেছ, ভগবানের কাছে এত প্রার্থনা করিলাম, তবুও তিনি শুনিলেন না! তিনি নিশ্চয় পাষাণ, কাহারও বুক-ভাঙা আর্তনাদ তাঁহার কানে পৌঁছায় না।
ভগবান কি, আমি জানি না, তাঁহার স্বরূপ কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তবু একথাটা বুঝি, তাঁহার সৃষ্টিতে কখনও অবিচার হইতে পারে না। তাঁহার বিচার চলিতেছে।
তাঁহার বিচারের উপর অবিশ্বাস করিও না, সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার মাথা পাতিয়া নিতে চেষ্টা কর। কি দিয়া যে তিনি কি করিতে চান, তাহা আমরা বুঝিব কি করিয়া?
মৃত্যুটাকে আমরা এত বড় করিয়া দেখি বলিয়াই সে আমাদিগকে ভয় দেখাইতে পারে। এ যেন ছোট ছেলের মিথ্যা জুজুবুড়ির ভয়। যে মরণকে একদিন সকলেরই বরণ করিয়া লইতে হইবে, সে আমাদের হিসাবে দুই দিন আগে আসিল বলিয়াই কি আমাদের এত বিক্ষোভ, এত চাঞ্চল্য?
যে খবর না দিয়া আসিত, সে খবর দিয়া আসিল বলিয়াই কি আমরা তাহাকে পরম শত্রু মনে করিব? ভুল, ভুল। মৃত্যু ‘মিত্র’ রূপেই আমার কাছে দেখা দিয়াছে। আমার ভালোবাসা ও প্রণাম জানিবে।
– তোমার নসু”
আলিপুর সেন্ট্রাল জেল
৩০. ৬. ৩১. কলিকাতা।’
নোট: দীনেশ গুপ্তের জন্ম ৬ ডিসেম্বর, ১৯১১; শহীদ ৭ জুলাই, ১৯৩১। বাবার নাম সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। চার ভাই বোনের কনিষ্ঠের ডাক নাম ছিল নসু।
বিপ্লবী ঢাকা ও মেদিনীপুরে সুভাষচন্দ্র বসুর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য হিসাবে সাংগঠনিক কাজ করতেন। ১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স ভবন আক্রমণ করেন। সঙ্গে ছিলেন বিনয় বসু ও বাদল গুপ্ত।
পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের পর বাদল গুপ্ত আত্মহত্যা করেন, বিনয় বসু আহত হয়ে ধরা পরেও হাসপাতালে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন দীনেশ গুপ্তও।
নিজেকে গুলি করে আহত হয়েও বেঁচে যান তিনি। সুস্থ করে তুলে বিচারের পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালে ৭ জুলাই, মাত্র ১৯ বছর বয়সে ফাঁসি হয় তাঁর।
No Comments
Leave a comment Cancel