সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ২১ জুন ২০১২
জনাব নঈম নিজাম
সম্পাদক
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন
ঢাকা।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই,
টেলিভিশনের টকশোতে আপনার বক্তব্য শুনলাম। সাধারণত আমি রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল পাঁচটায় উঠি। কিন্তু গতকাল পত্রিকাগুলোর অসত্য খবর আমাকে নির্ধারিত সময়ে ঘুমাতে দেয়নি। তাই টিভি দেখতে দেখতে গতকাল ইটিভিতে হঠাৎ আপনার আলোচনাও প্রত্যক্ষ করলাম, শুনলাম, দেখলাম।
সাথে সাথে আজকের এবং গতকালের পত্রিকায় পদ্মা সেতু এবং আমাকে সম্পৃক্ত করে নানা অসত্য লেখাও দেখলাম। দেখে, শুনে অবাক হয়েছি। কী সহজ ভাষায় অবলীলাক্রমে অসত্য খবর, অতিরঞ্জনে ককটেল বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আর আপনাদের এই অসত্য ভাষা ও খবরের চাপে আমরা পিষ্ট হচ্ছি-মনে হয় আমাদের দিকটি দেখার কেউ নেই।
অথচ সংবাদপত্র ও সাংবাদিক জাতির বিবেক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিয়ামক। শিক্ষার পথপ্রদর্শক। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের বাহক। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের হাতিয়ার। সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ।
তাই আমরা যখন দেখি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক অসত্য খবর প্রকাশ এবং এ অসত্য খবরকে উপজীব্য করে ক্রমাগত লিখে চলে, টকশোতে অবলীলাক্রমে অসত্য লেখার উপর ভিত্তি করে কথা বলে চলেন-তখন সত্যি অবাক হই। চিন্তিত হই। দুঃখ-বেদনা এবং আহত হই।
ভাবি, অসত্য কি পৃথিবী নাচিয়ে বেড়াবে? সত্যকে কি কেউ সহায়তা করবে না? শক্তিশালী মিডিয়ার কাছে দেশের সুনাম এবং আমার অর্জিত সুনাম কি নষ্ট হবে? অসত্য বক্তব্য রাজত্ব করবে? ভাবি, এটাই মনে হয়, ইয়লো জার্নালিজম। সেই ফাঁদে আমাকে ফেলা হচ্ছে। আবার ভাবি, মনে করি, সেই প্রবাদের কথা-Truth shall prevail.
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, কথাগুলো বললাম এজন্য যে, চারিদিক দেখেশুনে, সম্প্রতি পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নানা অনৈতিক কথাবার্তা পত্রিকায় দেখে, আপনাদের এ সম্পর্কিত নানা আলোচনা শুনে, এটা মনে হয়েছে যে আমি এক বিরাট ষড়যন্ত্রের শিকার।
অসত্য ও মিথ্যা সংবাদের শিকার। আপনারা সংবাদটি অসত্য জেনেও তা প্রকাশ করছেন এবং প্রকাশিত অসত্য সংবাদের ভিত্তিতে সম্পাদকীয় লিখছেন। জনগণের কাঠগড়ায় আমাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। অথচ আমি পুরোপুরি নির্দোষ। আমি একজন সৎ ও স্বচ্ছ মানুষ, সাধারণ মানুষ। পদ্মা সেতু সম্পর্কিত লেখা-অনৈতিক কাজের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
আমাকে জড়িয়ে কমিশন চাওয়ার যে সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা কোনক্রমেই সত্য নয়। এতে আমি আদৌ সম্পৃক্ত নই। এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দেবার ব্যাপারে অমি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির কাছে কোনো তদবির করিনি বা কাজ দেয়ার জন্য কাউকে বলিনি।
এসএনসি-লাভালিন-এর সাথে আমার কোনো অনৈতিক বিষয়ে কথা হয়নি। এসএনসি-লাভালিন-এর প্রতিনিধির কাছেও অনৈতিক কোনো কথা আমি বলিনি। এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ পুরোপুরি মিথ্যা। তাছাড়া, দুদক যেখানে বলছে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে যে বিষয় নেই-পত্রিকা সে বিষয় নিয়ে ফলাও করে লিখছে। এটা কোনোমতে সাংবাদিকতার নীতিমালায় পড়ে না।
আমি যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। সে কারণে কানাডার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত দুবার এসএনসি-লাভালিন বিষয়ে আমার সাথে দেখা করেছেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও জাপানের রাষ্ট্রদূতও দেখা করেছেন। তাদের রেফারেন্সে বিভিন্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও আমার সাথে বিভিন্ন সময়ে দেখা করেছেন।
আমি এদের সবার সাথে বিভিন্ন সময়ে যখন দেখা করেছি, তখন সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কথা বলেছি। কখনো একা কারো সাথে দেখা করিনি, কথা বলিনি। এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধিরাও, অন্যান্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতো, আমার সাথে দেখা করেছেন। আমি তাদের বক্তব্য শুনেছি।
তাদের বলেছি আইন ও নিয়মানুযায়ী, মেরিট অনুযায়ী, এসএনসি-লাভালিন যোগ্য বিবেচিত হলে এবং আমার পর্যায়ে, উপস্থাপিত হলে আমি বিষয়টি দেখব-যাতে তাদের প্রতি কোনো অবিচার না হয়। মন্ত্রী হিসেবে এর বেশি কোনো কথা আমি তাদের বলিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে আপনার পত্রিকাসহ কতিপয় পত্রিকায়ও পদ্মা সেতুর মূল কাজ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কল্পনাপ্রসূত, বায়বীয় ও অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে দোষারোপ করা হয়েছিল, অহেতুক আমার নাম সম্পৃক্ত করা হয়েছিল, যা দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হয়নি।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক মূল সেতু নির্মাণে কোনো অনিয়ম বা আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, পরামর্শক নিয়োগে এসএনসি-লাভালিন-এর বিষয়ে আমাকে সম্পৃক্ত করে যে অমূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাও তদন্তে অসত্য প্রমাণিত হবে।
কারণ অনৈতিক কোনো কাজের সাথে জড়িত নই। আমি সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে কঠোর ও নিরলসভাবে কাজ করেছি। যারা অসত্য অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর কাজ বিলম্বিত করেছে, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যও একদিন প্রমাণিত হবে। একদিন তাদের মুখোশও উন্মাচিত হবে।
পরামর্শক নিয়োগে যে অনুমোদন প্রক্রিয়া আমি বিশ্বব্যাংকে অগ্রায়ণ করেছি, তা সেতু বিভাগে ডকুমেন্টেড হয়ে আছে। আমার দফতর পরিবর্তনে সে ডকুমেন্ট আমি নিয়ে আসিনি। এখনও তা সেখানে সংরক্ষিত আছে।
প্রয়োজনে বর্তমান মন্ত্রীর কাছ থেকে সেগুলো এনে আপনারা দেখতে পারেন, গবেষণা করতে পারেন-তাতে আপনারা দেখতে পাবেন আমি কীভাবে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করেছি।
একথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় আমি কোনো অনিয়ম করেনি। কোনো অন্যায় ও মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ করিনি। কারো দ্বারা প্রভাবিত হইনি, কোনো দরদাতাকে কোনো প্রকার সুবিধা দেয়ার জন্য সুপারিশ বা চাপ প্রয়োগ করিনি।
আপনার মনে আছে এর আগেও আপনার পত্রিকায় যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, নতুন গাড়ি ক্রয় এবং আমার গ্রামের বাড়িতে অতিথি-ভবন নির্মাণ সস্পর্কে অসত্য খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। আপনার পত্রিকার এসব অসত্য খবর জনমনে আমার সম্পর্কে ভুলধারণা সৃষ্টিতে কাজ করেছে।
আপনার পত্রিকার এসব অসত্য লেখা, উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্টে জনমনে আমাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। যেমনি, সম্প্রতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে পত্রিকান্তরে অসত্য খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, সম্প্রতি জাতীয় সংসদেও স্পীকার কতিপয় পত্রিকার ভুল রিপোর্ট এবং প্রেক্ষিতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে সংসদের অনাকাক্সিক্ষত বিষয়টি রুলিং দিয়ে নিষ্পত্তি করেছেন। পত্রিকার ভুল রিপোর্ট সংক্রান্ত কিছু বিষয়, যেগুলো আমার বেলায়ও ঘটেছে, ঘটে চলেছে।
কতিপয় পত্রিকার অসত্য খবরের উপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবু সায়ীদ সমালোচিত হয়েছেন। এরকম মিথ্যা সমালোচনার শিকার আমি নিজেও। আপনি জানেন, আমাকে গত বছরের ১৮ আগস্ট সংসদে পত্রিকার একটি ভুল রিপোর্ট নিয়ে দোষারোপ করা হয়েছিল।
সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। অথচ এ দোষারোপের বিষয়ে আমার কোনো ভুল ছিল না। অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে গত বছর সড়ক উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কারের অনেক কাজ সময়মতো শেষ করা যায়নি। অতি বর্ষার কারণে কিছু সড়কে যাতায়াতে সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল।
এ নিয়ে সংসদে আলোচনার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি একটি সারসংক্ষেপ প্রেরণ করি। আমার প্রেরিত সারসংক্ষেপের বিষয়ে কতিপয় পত্রিকা অসত্য খবর পরিবেশন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত সারসংক্ষেপে কারো প্রতি কোনো অসৌজন্যমূলক কথা ছিল না।
সারসংক্ষেপের মূল কপিটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আছে। এর একটি ছায়ালিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। আমি যখন যোগাযোগমন্ত্রী, সে সময়ে আমার সম্পর্কে কতিপয় পত্রিকা ঢালাওভাবে অসত্য খবর প্রকাশ করে।
এ অসত্য খবরকে ভিত্তি করে টকশোতে আলোচনা হয়। পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা হয়। অথচ মূল খবর সঠিক ছিল না। অসত্য খবরই পরবর্তীকালে আবার খবর সৃষ্টি করে বের করা হয়েছে। মনে হয়েছেÑএটা আমার বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ প্রপাগান্ডা।
এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনায় আমার দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ এনে, শহীদ মিনারে কচিকাঁচা শিশুদের গলায় ব্যানার ঝুলিয়ে, অনৈতিক দাবি তোলা হয়েছে। মিডিয়ায় ফরমায়েশি লেখা লেখানো হয়েছে। কতিপয় পত্রিকার এসব অসত্য সংবাদের ভিত্তিতে, নামে-বেনামে চিঠি লেখা, স্বাক্ষর সুপার ইম্পোজ করে চিঠি লেখা এবং অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেন, জানেন। পত্রিকায় প্রকাশিত অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়ে আমার সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিয়ে আলোচনা করবেন-তা আমার প্রত্যাশিত ছিল না। আপনি একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও মননশীল সাংবাদিক বলে আমি জানি।
চারিদিকে কারা হলুদ সংবাদিকতায় জড়িত, তা আপনার অজানা নয়। আপনার একজন সহকর্মী, পত্রিকার সাংবাদিক বিএনপি’র আমলে আমার সম্পর্কে অনেক অসত্য খবরভিত্তিক রিপোর্ট করেছে যার ভিত্তিতে যেসময় White Paper তৈরি করা হয়েছে। তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
সেসব মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আমার আমলনামা আপনারা তৈরি করে এখন বারবার বিক্রি করছেন। এবার যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার পর মন্ত্রীর অফিস সংস্কার, নতুন গাড়ি ক্রয় ও কালকিনিতে আমার বাড়ি নির্মাণ নিয়ে পত্রিকা অসত্য খবর প্রকাশ করে, অসত্য খবরের ভিত্তিতে সম্পাদকীয় লেখে, কার্টুন ছাপে।
সেগুলো সব মিলিয়ে, এ অসত্য খবর মিলিয়ে আমাকে বিতর্কিতভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে। আপনার মনে আছে, যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন আপনাকে আমার অফিস দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আপনি আসেননি।
প্রথম আলোর সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান সাহেব এসেছিলেন। অফিস সংস্কার দেখলেন। কিন্তু কোনো মন্তব্য করলেন না। সরি বললেন না। ঐ অফিস এখনো বর্তমান আছে। আপনিও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তা দেখে আসতে পারেন।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমি প্রথমদিন থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততা নিশ্চিত করে কাজ করেছি। একথা বলার জন্য নয়, অসত্য খবরের প্রতিবাদের জন্য নয়- এটা সত্য, সত্য, সত্য কথা।
আমার সময়ে প্রায় তিন বছরে যোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, যে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে, তা বিগত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নির্মাণে যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর জন্য লেগেছে ২ বছর।
পদ্মা সেতু নিয়ে যেসব কল্পনাপ্রসূত, বায়বীয়, ভিত্তিহীন, অসত্য অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা একদিন অসত্য প্রমানিত হবে। এ অভিযোগ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের যে কারসাজি তাও প্রমাণিত হবে। গত জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১১-তিন বছরে যোগাযোগ খাতে যে কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, যে কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, যে কাজ শুরু হয়েছে তা বিগত ১০০ বছরের ভেতরে ৫ বছর মেয়াদি কোনো সরকার গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি।
আমার দায়িত্ব পালন সময়ে এ উন্নয়ন প্রয়াস ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক ও ঐতিহাসিক দলিল বলে বিবেচিত হবে। আমি আশা করি, আমার সহকর্মী, আমার বন্ধু, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন এবং অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণে জাতীয় স্বার্থে মাননীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধে আরো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবেন।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, আপনি জানেন বিগত দিনে আমার সম্পর্কে যেসব পত্রিকা অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করেছে তা দেশের উন্নয়নে বিরাট অন্তরায় হিসেবে যেমন চিহ্নিত হয়েছে, তেমনি আমাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা হয়েছে।
মিডিয়ার এসব অসত্য খবরের ভিত্তিতে সুধীসমাজ পত্রিকায় কলাম লিখেছেন, মধ্যরাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে আলোচনা করেছেন। সংবাদপত্রের অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়ে আমার সম্পর্কে বিরূপ কথা বলেছেন।
আমাকে দর্শকদের কাছে, পাঠকের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এতে দেশের ভাবমূর্র্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে যার পরিণতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
কারণ, এসব অসত্য সংবাদের ভিত্তিতেই, অধিকাংশ সময়, বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরির মাধ্যমে সরকারের, দেশের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে থাকে।
তাই মিডিয়ার অসত্য খবরের বিষয়ে আপনাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা দরকার বলে আমি মনে করি। সম্প্রতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য মিডিয়া বিকৃত করে প্রচার করায় কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আপনার অজানা নয়।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, আমি আপনার লেখা পড়ি। সময় পেলে টকশোতে আপনার আলোচনা দেখি, শুনি। আপনার লেখা ও আলোচনার জন্য পদ্মা সেতু সম্পর্কিত কিছু ঘটনাপঞ্জি ও যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন তিন বছরের কার্যক্রম নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক লেখা ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতায়-যোগাযোগ খাত’ নামক পুস্তিকাটি পাঠালাম।
একে উপজীব্য করে যদি কোনো লেখা লেখেন তাহলে পাঠক উপকৃত হবে, সত্য তথ্য জানতে পারবে। তাছাড়া, আপনি জানেন, আগে মাঝে মাঝে আমি লিখতাম। পত্রিকায় তা প্রকাশিত হতো। যদি আপনি আপনার পত্রিকায় প্রকাশের নিশ্চয়তা দেন, তাহলে আমি লেখা পাঠাবার প্রত্যাশায় রইলাম।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, আমি মনে করি কতিপয় পত্রিকা এবং চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি অসত্য লেখা ও বক্তব্য দিয়ে আমাকে বিতর্কিত করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। আমি একজন সৎ, আদর্শবান ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি। আমি কখনো অন্যায় করিনি। অবৈধ কাজ করিনি। তারপরও কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে কেন বিতর্কিত করেছে-তা বোধগম্য নয়।
এই অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক লেখার জন্য অনেকে আমাকে মামলা করার কথা বলেছেÑআমি বা আমার পরিবারের কেউ মামলা করিনি, করবও না। তবে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে ঋওজ করে রেখেছি।
শ্রদ্ধেয় নঈম ভাই, এ লেখা হয়তো আপনার ভালো লাগবে, হয়তো ভালো লাগবে না। তবুও আমি লিখেছিÑআপনাকে সত্য ঘটনা জানানোর জন্য, সত্য ঘটনা মনে করে দেয়ার জন্য।
হয়তো এ ব্যাপারে আপনি ইতিবাচক কোনো অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। আশা করি, আপনি সার্বিক বিষয় উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
আরো পড়ুন
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২
- আমার দেশ সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ওবায়দুল কাদেরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩
- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি
- আকিদুল ইসলামের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৪
No Comments
Leave a comment Cancel