ক্রেতা হিসেবে আপনার উচিত হবে চুক্তিপত্রটি বারবার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখে নেওয়া। এই চুক্তিপত্রে এমন শর্তাবলি লেখা থাকে, যেগুলো ঠিকভাবে দেখে না নিলে ক্রেতার জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারে এবং আইনি সহায়তার সুযোগ নষ্ট করে দিয়ে ক্রেতাকে বিপদে ফেলে দিতে পারে।
সে জন্য এই চুক্তিপত্রটি বারবার পড়ে দেখে নিন এবং অবশ্যই আপনার সুপরিচিত কোনো আইনজীবী (বিক্রেতার নয়) দিয়ে দেখিয়ে নিন। যদিও চুক্তিপত্রে অনেক কিছুর উল্লেখ থাকে, যথা ফ্ল্যাটের আয়তন, কমন স্পেস, প্রতি স্কয়ার ফুটের মূল্য, ফ্ল্যাটের দাম মেটানোর পদ্ধতি, পজেশনের সময়সীমা ইত্যাদি; কিন্তু যে বিষয়গুলো ক্রেতাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে, সেগুলো নিচে একটু আলোচনা করছি।
ক) সাধারণত চুক্তিপত্রে দেখা যায় যে ফ্ল্যাটের পজেশন হস্তান্তরের সময়সীমা একটা সময় ধরে দেখিয়ে দেওয়া হয়। সেটা দুই বা তিন বছর, কিন্তু নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয় না। ক্রেতার উচিত হবে এটা নিশ্চিত করা যে চুক্তিপত্রে যেন এই সময়সীমা যাতে নির্দিষ্ট থাকে, যথা—কোন বছরের কোন মাসের কোন তারিখের ভেতর ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা হবে।
খ) চুক্তিপত্রে এটা উল্লেখ থাকে যে যদি ক্রেতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাটের দাম মিটিয়ে না দেন, তাহলে তাঁকে শতকরা এত হারে সুদ দিতে হবে।
কিন্তু এটা লেখা থাকে না যে যদি প্রমোটার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাটটি পুরোপুরিভাবে হস্তান্তর না করতে পারেন, তাহলে ক্রেতাকে তিনি কী ক্ষতিপূরণ দেবেন।
গ) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করার সপক্ষে যে শর্তগুলো চুক্তিপত্রে দেখানো হয়, সেগুলো যেমন—প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দেরি, শ্রমিক সমস্যার জন্য দেরি, হাতের বাইরে কোনো পরিস্থিতির জন্য দেরি ইত্যাদি। এগুলো সবই অস্পষ্ট শর্ত।
কারণ ধরুন, ভূমিকম্পের কারণে—যদিও বা ফ্ল্যাটটি নির্মাণে কোনো ক্ষতি হলো না বা শ্রমিকরা কোনো কারণে (যেটাতে ক্রেতার কোনো ভূমিকা নেই) কাজ বন্ধ করে দিল, তখন ওইসব চাতুরীপূর্ণ শর্ত ক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হতে পারে।
তারপর, ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো পরিস্থিতি’—এটা পুরোই একটি অস্পষ্ট শর্ত। পরিস্থিতির নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন।
আরো কিছু দরকারী লেখা পড়ুন
- দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র
- দোকান ঘরের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
- জমি বন্ধকের অঙ্গিকার নামা
- দোকানঘর ভাড়ার চুক্তি পত্র
- চুক্তি করবেন যেভাবে
- ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
- ফ্ল্যাট ক্রেতা বিক্রেতার চুক্তিপত্র
- জমি বন্ধকের চুক্তি নামা
- প্রেসের সাথে চুক্তিপত্র
- কোন চুক্তিপত্রে কত টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হয়?
- পার্টনারশিপ চুক্তিপত্র দলিল
- দলিল বাতিলের মামলা কিভাবে করতে হয়, কি কি লাগে?
- বায়না দলিল বাতিল করার নিয়ম
- সম্পত্তি দান করতে চাইলে যা করবেন
- বায়না দলিলের শর্তাবলি
- হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম
- দানপত্র/হেবাবিল এওয়াজ দলিল রেজিস্ট্রি খরচ
- জমির মাপ
- জমির হিসাব
- ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তির আগে-পরে ভূমি মালিক ও ফ্ল্যাট ক্রেতার করণীয়
- বায়নানামা দলিল লেখার নিয়ম
ঘ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়ের পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার দায় বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, চুক্তির শর্তগুলোর বেশির ভাগই বিক্রেতার বা প্রমোটারের সপক্ষে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে ক্রেতার কী করণীয়?
১. ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে একেবারেই তাড়াহুড়ো করবেন না।
২. প্রমোটারের কথাগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।
৩. অতি অবশ্যই আপনার নিজের পরিচিত একজন দক্ষ আইনজীবীকে আপনার সঙ্গে রাখুন। বিক্রেতা বা প্রমোটারের আইনজীবীকে ভরসা করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন।
৪. অনলাইনে বিভিন্ন আইনি সংস্থার সাইটে ফ্ল্যাট কেনাবেচার চুক্তিপত্র পাওয়া যায়। একবার দেখে নিন।
আরো পড়ুন ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
সূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ
No Comments
Leave a comment Cancel