প্রিয় হিমি তাবাসসুম,
একদিন আপনি আমাকে বলেছিলেন, “কোনো এক অবসরে চিঠি প্রিয় রুদ্রকে চিঠি লিখবো।” কথাটি শুনে দুটো কারণে বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম। এক, চিঠি পাওয়ার আনন্দ, দুই, আমার নামের সম্বোধনে ‘চিঠি প্রিয় রুদ্র’।
সম্বোধনটি নিখুঁত হয়েছে। কারণ আমি ভালোবাসি চিঠি লিখতে, চিঠি পেতে। কিন্তু এই জেনে অবাক এবং দ্বিগুণ আনন্দিত হয়েছি, কেউ যে আমার চিঠি পেতে এতো ভালোবাসেন! এবং যিনি খুব গুছিয়ে অপেক্ষা করেন আমার চিঠির।
আপনার চিঠি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, কেউ কী করে এতো সুন্দর অপেক্ষা করতে পারেন! আপনার অপেক্ষা যেনো নিছক শব্দে লেখা অপেক্ষা নয়, এ-যেনো আশ্চর্য জীবন্ত অপেক্ষা!
চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, এক স্নিগ্ধ তরুণী দৃষ্টিতে কবিতার মতো মোহময় অপেক্ষা নিয়ে দিন গুনছেন আমার চিঠির।
তিনি অপেক্ষা করছেন কাক ডাকা ভোরে, গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে, মন খারাপের বিকেলে, রক্তিম আভায় ছেয়ে থাকা গোধূলিতে, রাতের শেষ প্রহরে। তিনি অপেক্ষা করছেন আষাঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে, শুভ্র শরতে, নবান্নের ধান কাটা মৌসুমে, হাড় কাঁপানো শীতে।
তিনি আরো অপেক্ষা করছেন পাল তোলা নৌকার মাঝির ভাটিয়ালি সুরে, দ্বাদশীর জোছনায়, অষ্টাদশীর আঁধারে। অপেক্ষাগুলো জোনাকির মতো আলো জ্বেলে আমাকে ঘিরলো। অভিভূতের মতো অপেক্ষাগুলোকে দেখতে লাগলাম।
দেখতে দেখতে কখন যেনো ছোট্ট বালকের মতো গুটিসুটি ঘুমিয়ে পড়লাম। তারপর স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন হয়ে লিখতে শুরু করলাম চিঠি। এক স্নিগ্ধ তরুণীর জন্য চিঠি। যিনি দৃষ্টিতে কবিতার মতো মোহময় অপেক্ষা নিয়ে দিন গুনছেন আমার চিঠির।
আমি আচ্ছন্ন হয়ে লিখতে থাকলাম, লিখতে থাকলাম…। লেখা শেষে রঙধনু খামে ভরে চিঠিটি তুলে দিলাম মায়াবী নদীর পাড়ের এক ডাকপিয়নের হাতে। সে হাসি মুখে চিঠিটি তার যাদুর ঝুলিতে রাখলো।
তারপর সোনালী জরিতে সাজানো সাইকেল চালিয়ে ক্রিং ক্রিং শব্দ করে সে যেতে থাকলো মেঠো পথ ধরে স্নিগ্ধ তরুণীর ঠিকানায়। যিনি দৃষ্টিতে কবিতার মতো মোহময় অপেক্ষা নিয়ে দিন গুনছেন আমার চিঠির।
অপেক্ষারত তরুণীটিকে বলতে চাই, চিঠি পাঠিয়েছি জাদুকর ডাকপিয়নের হাতে। ব্যস্ত শহরের সবচেয়ে অনুপম দিনে সে আপনার বারান্দায় রেখে যাবে চিঠি। স্বপ্নের ভেতর স্বপ্ন হয়ে লেখা চিঠি।
ভালো থাকবেন
ইতি
রুদ্র
লেখা: রুদ্র আজাদ
আরো পড়ুন
No Comments
Leave a comment Cancel