প্রত্যয় শব্দের অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস বা আস্থা। কোন ব্যক্তি বা বিষয়ের ওপর নিরপেক্ষভাবে নিজের বিশ্বাস বা আস্থা প্রকাশ করা হয় প্রত্যয়নপত্রে। এখানে কোন আদেশ, সুপারিশ বা অনুরোধ থাকলে তা আর প্রত্যয়নপত্র হয় না।

অথচ প্রায়ই দেখা যায়, ‘প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা যাচ্ছে’- লিখে শুরু করে ‘সুপারিশ করা হলো’ লিখে শেষ হয়। এটা নিতান্তই অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়। যাকে বা যে বিষয়ের ওপর প্রত্যয়ন করা হবে প্রত্যয়নকারী যেন তার বা সে বিষয়ে অবগত আছেন।

প্রত্যয়নপত্র অনেক বিষয়ের ওপর হতে পারে। যেমন- কোন ব্যক্তির চরিত্রের ওপর, অভিজ্ঞতার ওপর ইত্যাদি। মোটকথা প্রত্যয়নপত্র কি কি বিষয়ের ওপর হতে পারে তার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

লক্ষ করুন, একটি ভুল প্রত্যয়ন পত্র, যা অনেকেই সচরাচর লিখে থাকে-

এই মর্মে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা যাচ্ছে যে, আনোয়ার হোসেন, পিতা- আব্দুর রহমান, মাতা- শামীমা পারভীন, ৮৭, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, খুলনা। সে আমার পরিচিত। তাহার নৈতিক চরিত্র ভাল। সে রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোন কাজে জড়িত নয়।

এখানে প্রথমে লেখা হয়েছে ‘এই মর্মে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা যাচ্ছে’- আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রত্যয়ন করা। আর যে কাগজে লিখিতভাবে প্রত্যয়ন করা হচ্ছে সেটিই প্রত্যয়ন পত্র। এখানে উদ্দেশ্য যেহেতু প্রত্যয়ন করা তাই ‘প্রদান করা যাচ্ছে’ কথাটি শুধু বাহুল্যই নয় লেখাটি নিম্নমানের হওয়ার পেছনেও দায়ী।

তাই ‘পত্র প্রদান’ কথাটি বাদ দিয়ে লিখতে হবে ’প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে,’। এর পর দেখুন, আনোয়ার হোসেন থেকে শুরু করে খুলনা পর্যন্ত লিখে দাড়ি দেওয়া হয়েছে। এটা ভুল।

কারণ এখানে ‘আনোয়ার হোসেন থেকে শুরু করে খুলনা’ পর্যন্ত কথাগুলো এক ব্যক্তি বা এই বাক্যের কর্তা। এখানে দাড়ি দেওয়া মানেই বাক্যে আকাঙ্ক্ষা বৈশিষ্ট্যের অভাব। দাড়ি সেখানেই হবে যেখানে বাক্য সম্পন্ন হয়েছে।

তাই বাক্যটি এমন হওয়া উচিত ছিল- ‘‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, আনোয়ার হোসেন, পিতা- আব্দুর রহমান, মাতা- শামীমা পারভীন, ৮৭, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, খুলনা আমার পরিচিত।’’

আরেকটু লক্ষ করুন, লেখাটি শুরু করা হয়েছে চলিত রীতি দিয়ে। কিন্তু এক জায়গায় লেখা হয়েছে ‘তাহার’- যা সাধু রীতির ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য। তাই এটি ভুল। এখানে লিখতে হবে ‘তার’।

প্রত্যয়ন পত্র কত প্রকার?

প্রত্যয়ন পত্র কত ধরণের হবে তার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। তবে সচরাচর যে সকল প্রত্যয়নপত্র লেখা হয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা ও নমুনা উপস্থাপন করছি।

চারিত্রিক সনদপত্র

(কোন ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে প্রত্যয়নকারীর প্রত্যয় ব্যক্ত করা।) যেমন-

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, আনোয়ার হোসেন, পিতা- আব্দুর রহমান, মাতা- শামীমা পারভীন, ৮৭, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, খুলনা আমার পরিচিত। তার নৈতিক চরিত্র ভাল।

আমার জানামতে সে রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোন কাজে জড়িত নয়। আমি তার জীবনেব সাফল্য কামনা করি।

নাগরিকত্ব সনদপত্র

(কোন ব্যক্তির নাগরিকত্ব বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয় ব্যক্ত করা।) যেমন-

এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, শফিকুল ইসলাম, পিতা- মিয়া হোসেন, মাতা- শামীমা পারভীন, গ্রাম- চরেরভিটা, ডাকঘর- তালদিঘী, উপজেলা- তারাকান্দা, জেলা- ময়মনসিংহ এ ইউনিয়নের/এই পৌরসভার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। সে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক।

আমার জানামতে সে রাষ্ট্র বা সমাজবিরোধী কোন কাজে জড়িত নয়।

আমি তার জীবনেব সাফল্য কামনা করি।

একনজরে বেশ কিছু দরখাস্ত দেখে নিন-

Comments to: প্রত্যয়নপত্র লেখার নিয়ম

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us