প্রিয় মিলি,
গতকাল রাতের অসম্পূর্ন কল্পনায় হঠাৎ ঘুমহীন হয়ে গিয়েছিল আমার চোখ, ঘুম চোখ নিয়ে সেলফোনে হাত রাখতেই দেখি ইনবক্সে অচেনা এক চিরকুট! চোখ বুলিয়েই পরেই বুঝতে পেরেছি তোমার পাঠানো। অনেকগুলো মাস পেরিয়ে নতুন নম্বর থেকে তোমার চিরকুট! ভেবেই আমার চোখ জুড়ে দুর্দান্ত উচ্ছাসের ঢেউ! তিনদিন পেরিয়ে গেল, মেঘালয়ের কুয়াশা সাদা রুমাল আর সরছে না। সোমেশ্বরীর স্বচ্ছ পানিতে মাছেরও দেখা নেই! তবুও পাথর কুড়ানীর দল থেমে নেই! জীবন তাদের চলছে! তোমার চিরকুট পড়বার পর মনে হলো সব ঠিকঠাক চলছে; শুধু আমিই পারছিনা। তোমার পাঠানো চার-চারটি চিরকুট যেন ছোট খাটো একটা চিঠির মতো মনে হলো। জানতে পারলাম ঘর-সংসার, নতুন অথিতি, বাড়ির ছাদ আর বাসন মাজার মহারাণী হয়েই কেটে যাচ্ছে তোমার সোনালী দিন গুলো।
অথচ- তুমি একদিন স্বনির্ভর হবার স্বপ্ন দেখতে; তুমি লিখেছ, নরম তুলতুলে হাত দুটোতে পাথরের মতো অসমান কোন চড় জেগেছে, যেন অদৃশ্য কংক্রিট! আলসে ভরা সেই সব ঘুমে ভরা দুপুর তোমার মুঠোতে এখন এনে দিয়েছে হাজার রকম কাজ আর কাজ, দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে তোমার বৈভব। মিলি, ভুলে থাকার আরেক নাম অভিমান! আর সেই অভিমানকেই পাশবালিশ ভেবে জড়িয়ে আছে তুমি। তোমার মতো- মেঘালয়ের পাহাড় গুলোও যেন আজকাল অভিমান করে আছে, তার গায়ে জমে থাকা মেঘগুলো, অবচিত। তিলতিল করে জমে থাকা অভিমান, তোমাকে ছেড়ে আমাকেও গ্রাস করে নিচ্ছে ক্রমশ, তাই বোধ হয়- চোখের উত্তাপে কাছের সম্পর্ক গুলোতে ছড়াচ্ছে ম্লান হবার পূর্বাভাস।
তুমি জানতে চেয়েছ ভালো আছি কিনা? মিলি, ভালো থাকা এখন ততটাই কঠিন-যতটা কঠিন ভুলে থাকা! ভালো থাকার আশায় সিগারেট ছেড়েছি, জায়গা বদলেছি, ঘর-দুয়ার, সঙ্গ সব ছেড়েছি নিজেকে রুটিন মাফিক বেঁধে ধরেও ভালো থাকতে পারিনি; হয়ত পারবো না। নিমাই’দার মেমসাহেব কিংবা গোধূলিয়া পড়তে গেলেই কান্না আসে, আমারও মাটি সরে যায় পা থেকে, যন্ত্রনা আরো বেড়ে যায় এরিখ সেগালের লাভ স্টোরি পড়লে। রানিখং এর গির্জা, ছিমছাং নদী, রামকৃষ্ণ মঠ সব কিছুর সামনেই মিথ্যে অভিনয় করে ভালো থাকার চেষ্টা করি। গঙ্গাসাগর, পালোলাম সৈকত কিংবা ঝাড়খন্ড কোন কিছুতেই পা আর চলে না যেন সব অশ্রেয়!
আমার মতো অক্ষরজীবীদের চোখে অশ্মরী জন্ম নেয় আর জানতে ইচ্ছে হয় তুমি ভালো আছো তো? তুমি হয়ত বলবে ভালো-খারাপ থাকাটা নিজের কাছে, হয়তোবা তাই! কিন্তু নিজেকে কার কাছে রাখবো বলতে পারো? আমার ভালো থাকা আর আকাশ দেখা এখন সমান কথা। তুমি লিখেছ মাঝে মাঝে আমাকে ভাবলে তোমার মন মেঘ হয়ে যায়, জানতে চেয়েছ তোমার মতো আমারও এমন হয় কিনা? সূর্যের মতো সত্যি এই যে, নন্দিত হতে গিয়ে আমি বোধহয় তোমার কাছে নিন্দিত হয়ে গেলাম, নিন্দিত হয়ে পুরোনো কথা ভেবে কি হবে? সেসব কথা ভেবেই না মনকে মেঘ করো না।
কেউ হয়ত জানবেনা কোনদিন, হয়ত আমি আর- খোলা আকাশ জানবে মন খারাপের কথা। জানবে আমার ভাবনাতেও বিরহের তুলির আঁচর পড়ে, বিরহী সুর বাজে; করুণ বিউগলের সাথে সাথে কেউবা সেখানে মার্চ করে বেড়ায়। আমাদের ফেলে দেয়া সোনালী সে সময়কার সব স্মৃতির পাতায় আজ বন্দি। নিজেকে হ্যাংলাটে মনে হয়, আজকাল তোমার মতো কারো মুখায়ব দেখলেই ছুটে যাই, সেই খরগোসের মতো দাঁত, সেই হাসি এই বুঝি তুমি! এখন জীবনের সোনালী দিন খুইয়ে পাথর যুগে এসে গেছি। পাথরের ভারে চোখ মেলতেই যতো যন্ত্রনা। প্রতি মুহূর্তেই সময়ের দাসত্বের অনুবর হয়ে যাচ্ছি ভালো কিংবা ভুলে থাকার চেষ্টায় ক্রমাগত পরাজিত হবার শঙ্কায় ভুগছি। তুমি ভেবে নিও মুদ্রার এ পিঠের মতো জীবন হলেও আমি ভালো নেই; একটু একটু করে বিক্রি হয়ে যাচ্ছি সময়ের কাছে।
মিলি, জানিনা কেন তোমাকে- খুব গভীরে, খুব গোপনে লোকচক্ষুর আড়াল করেছিলাম; তবে মনে হতো তুমি যেন আমার পিদিম; এ আলো শুধু আমার একার। তোমাকে নিয়ে কোনদিন কিছু লেখা হয়ে উঠেনি শুধু অচল পয়সার মতো করে লুকিয়ে রেখেছি বুকের পাশ পকেটে আজ শুধু বলবো, মৃত্তিকার মতো আনন্দ তোমার মুকুট হোক; যা আছে সুখ আমার তোমাতে মিশে যাক, তুমি কুসুম্ভরানী হয়ে থেকো, তোমার পৃথিবীতে, তোমার গহীনে…।
No Comments
Leave a comment Cancel