প্রিয়তমা ডাকবো নাকি নাম ধরে সম্বোধন করবো, সেটাই তো ভেবে পাচ্ছি না। অধিকার টা তো নিজেই বিসর্জন দিয়েছি। তবুও আমি আজ লিখবো শুধু তোমার জন্য।
জেবিন আক্তার বিথী নামটা মনে থাকে সারাক্ষণি কিন্তু মুখ ফোটে বলতে পারি না। সেটার কারণও আমি নিজের দোষে হারিয়েছি। আচ্ছা আমি যা আজ লিখতে যাচ্ছি তুমি কি সেটা পড়বে নাকি এড়িয়ে চলে যাবে? যাই হোক তবুও আমি লিখবো কারণ তোমাকে ছেড়ে যাবার কারণ তোমাকে যে জানতেই হবে, না হলে চিরদিন আমায় ধোঁকাবাজ মনে করবে।
মনে পড়ে তোমার যখন আমাদের প্রথম দেখা হয় আমাদের নতুন বাড়ি তৈরি করার সময় তুমি এসেছিলে পাশের ঘরে তোমার বান্ধবীর কাছে। ও তো আবার আমার চাচতো বোন হয়। আমি তখন সদ্য রিলিজ হওয়া হাবিবের ভালোবাসবো গানটা শোনছিলাম মোবাইলে লাউড স্পিকারে।
তুমি বাকা চোখে তাকিয়ে মন ভরে সেই গান শোনছিলে আর হাসছিলে। তখন তোমাকে নীল পরীর মতো লাগছিলো। আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে পরদিন সকাল বেলাই আবার কনস্ট্রাকশন সাইটে উপস্থিত। অবাক ব্যাপার এসেই তোমার সাথে দেখা!
তুমি তখন স্কুলে যাচ্ছিলে। পরের সিনটা আমায় রাগান্বিত করে তুলে কোথাকার কোন বখাটে ছেলে তোমাকে টিজ করছিলো। বারংবার শীষ ‘ও পাখি আমার পাখি’ বলে চেচামেচি করছিলো। আমি অবাক, কেউ কোনও প্রতিবাদ করছে না।
তুমি তো ভয়ে চুপসে গিয়েছিলে। এলাকায় আমি নতুন। এখনি যদি ঝগড়া বা মারপিট করি তাহলে এলাকার লোকজন ভাববে আরেক বখাটে চলে আসছে তাই কিছুই না বলে সোজা তোমার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল থামালাম। তখন তোমার চাহনি দেখে আমার খুব মায়া লাগছিলো। যেন তুমি আমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছো।
আমি তোমার পাশে থাকা আমার চাচতো বোনকে জিজ্ঞেস করলাম কিরে মাকসুদা কোনও সমস্যা? সে বললো না ভাইয়া কোনও সমস্যা নাই। অথচ তুমি পরিস্কার বলতে চাচ্ছো ওই বখাটেগুলোকে শায়েস্তা করেন। মুখে না বললে কি হবে আমি বুঝে গিয়েছিলাম। আমি ওদের দিকে তাকাতেই ওরা কেমন যেনও অন্য মনস্ক হয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আর কোনও কথা বা ডিস্টার্ব করলো না। আমি বললাম চলো আজ তোমাদের স্কুলে দিয়ে আসি। এভাবেই প্রতিদিন তোমাদের স্কুল দিয়ে আসতাম। মাঝে মাঝে নিয়ে আসতাম। আশ্চর্য ব্যাপার এরপর থেকে ওরা আর ডিস্টার্ব করেনি।
উল্টো তোমার আমার প্রেম কাহিনি সারা এলাকায় ছড়িয়ে দিলো। তাতে আমার বেশ সুবিধা হলেও প্রথম প্রথম তুমি লজ্জায় বের হতে চাইতে না বাসা থেকে। যদিও তুমিও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলে। আমার সুবিধা কেন বললাম, কারণ আমি মুখ ফোটে বলতে পারছিলাম না আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এলাকার লোকেরাই বলে দিলো। একদিন আমরা আমার চাচার বাসায় তুমি আমি আর মাকসুদা মিলে মিটিং করলাম কি করা যায়। আমি তোমাকে বললাম এটা কি সত্যি করা যায় না। ওমা তুমি মুচকি হেসে মাথা নিচু করে বসে রইলে!
আমার তখন কি যে আনন্দ লাগছিলো! সেই দিনটি স্মৃতির পাতা থেকে কোন দিন মুছবে না। এভাবেই আমাদের ভালোবাসা ১টি বছর পার হলো তারপর হঠাৎ আমার একটি রোগ ধরা পড়লো। ডাক্তার বললো অপারেশন করতে হবে। পায়ুপথ কেটে ফেলে দিতে হবে নতুবা এটা কমবে না আস্তে আস্তে বাড়বে।
একটা সময় এটা এমন পর্যায়ে যাবে যে রক্ত পরতে থাকবে। তখন কিছু করার থাকবে না। বিশ্বাস করো কথাটা মা বাবা কাউকে বলি নাই। তোমাকেও না। তুমি তখন আমার জন্য পাগল হয়ে গেছো। কারণ শুনেছো আমার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বাস করো বিয়েতে আমি মত দেইনি। আমার পরিবারও জোর করতে লাগলো কোনও মতেই আমাকে রাজি করাতে পারে নি। হঠাত আমার মায়ের ক্যানসার ধরা পড়লো আমরা সবাই ভেঙ্গে পড়লাম। কিন্তু প্রথম দিকে আমরা কাউকেই আম্মার ক্যান্সার শোনাইনি।
এমনকি আমার যে চাচা আমাদের সামনের বাসায় থাকতো উনাদেরকেও না। কারণ তখন উনাদের সাথে আব্বার ঝগড়া হয়েছিলো। আম্মার কান্নাকাটিতে এবং উনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়াতে আমি উনার অনুরোধ ফেলতে পারি নি।
বিয়েতে মত আমি এমনি দেইনি। এক তো আমারও একটা কঠিন রোগ আছে আর ২য় তে আম্মাও আব্বার সাথে ঝগড়াঝাটি করেছেন তোমাকে নিয়ে এই সময়ে আমি বিয়ে করবো বলে আব্বাকে কোনওভাবে রাজি করানো যায় নি। আর আম্মার ক্যান্সার আরও ভয়াবহ রুপ ধারন করছে তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছি।
বিশ্বাস করো, আমি তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে আমার পরিবারের সাথে জড়াতে চাই নি। আমি চেয়েছি তুমি সুখি হও। আমার কারণে তুমি যেন কোন কষ্টতে না পরো। কারণ বড় ভাবী, আব্বা এমনকি মাকসুদার মাও চাননি তোমাকে আমি বিয়ে করি।
এখন যদি তোমাকে নিয়ে আসতাম ওরা তোমার শত্রু হয়েই থাকতো। আমি অনেক ভেবেই তোমাকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি রাজি হও নি। তাই কোনও উপায় দেখে আর তোমার ভালোর চিন্তা করে আমি অসুস্থ হওয়া সত্বেও আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করি।
আশ্চর্য বিষয় কি জানো, আমার রোগটি আর বাড়ে নি। কিন্তু আম্মাকেও বাঁচাতে পারি নি। আমার বিয়ের ৩ বছরের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আব্বাও মাকে হারিয়ে শোকে আপ্লূত হয়ে ঢাকা চলে যান।তোমরাও সিলেট ছেড়ে তোমাদের বাড়িতে চলে যাও।
আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তুমি তোমার বাবা মাকে রাজি করাতে পারলেও আমি আমার পরিবারের সম্মতি আদায় করতে পারি নি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করো। আমি আজও তোমায় ভুলতে পারি নি। আমি আজও প্রতিটি সেকেন্ডের জন্য তোমাকে মিস করি।
ইতি
তোমার হারানো ভালোবাসা
লিখেছেন: মনসুর আহমেদ
No Comments
Leave a comment Cancel