মাপ হল কোন কিছুর পরিমান নির্নয় করা। মাপ সাধারণত তিন প্রকারে হতে পারে:
ক) রৈখিক বা আর এফ টি
খ) বর্গ বা স্কয়ার
গ) ঘনফুট বা সিএফটি
এটাকে অনেকে শিকল পদ্ধতি বলে। এডমন্ড হান্টার এই শিকলের আবিস্কারক। এটা ৬৬ ফুটলম্বা এবং ১০০ টি সমান ভাগে বিভক্ত। প্রতি ভাগেরদৈর্ঘ্য ০.৬৬ ফুট বা ৭০৯২ ইঞ্চি। প্রতি ভাগকে ১ লিংক বলে।
৮০ শিকল = ১ মাইল১০ শিকল = ১ ফালংডায়াগনার স্কেল বা গান্টার স্কেলইহা একটি চার কোনা বিশিষ্ট তামার ব্রোঞ্জের তৈরি স্কেল। ইহার চার পাশে ১০ টি ঘর বা কক্ষ থাকেপ্রতিটি ঘরের মান ১০০ লিংক।
১৬”=১ মাইল স্কেলেইহা তৈরি করা হয়। এবং গান্টার চেইনর সাথে মিল আছে বলে একে হান্টার স্কেল বলা হয়।
আইভার অফসেট এটি একটি প্লাষ্টিকের তৈরি স্কেল এই স্কেলেরসাথে গান্টার স্কেলের মিল আছে। ইগার দৈর্ঘ্য ২” এবং প্রস্থ .৫” (ইঞ্চি) এই স্কেলের সাহায্যে নকশার সংকোচিত দূরত্ব সহজে মাপা যায়।
এটা ছাড়া অফনেট নেয়ার ক্ষেত্রে ইহা বিশেষ সুবিধা। গুনে গুনে সংখ্যা হিসাব করা যায় বলে একে গুনিয়া বলা হয়। ডিভাইডার বা কাটা কম্পাসইহা একটি জ্যামিতিক কম্পাস।
ইহার সাহায্যে নকশার সংকোচিত দূরত্ব নিয়ে ডাইগোনাল স্কেলে মাপ নেয়া যায় এবং দূরত্ব গুনিয়া গুণে সংখ্যা বুঝা যায়।
খতিয়ান সংশোধন পদ্ধতি এবং কেন?
১৫০ সালের জমিদারী উচ্ছেদ এবং প্রজাস্বত্ব আইনে খতিয়ান পরিবর্তন , পরিমার্জন সম্পর্কে বলা হয়েছে। খতিয়ান সংরক্ষণের দায়িত্ব কালেক্টরের। যে সকল কারণে খতিয়ানে সংশোধন করা যার তা নিচে আলোচনা করছি।
জমি বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্থান্তর বাউত্তরাধীকারের ফলে জমির মালিকানা হস্তান্তরিত হলে তার জন্য নাম খারিজ করা হলে খতিয়ান সংশোধন হয়। সরকারকৃত জমি ক্রয়কৃত হলে নতুন খতিয়ান সংশোধন হয় জমি পরিত্যাগ বা বিলুপ্তি বা অর্জনের কারণে খাজনা মউকুফ হলে খতিয়ান সংশোধন হয়।
একটি খতিয়ান তৈরী হলে যদি তাতে ভুল থাকে তাহলে তা সংশোধনের জন্য, যে ব্যাক্তি বা জমির মালিক সংশোধনের জন প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ স্থানীয় দেয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
দেয়ানী আদালত যদি মনে করে খতিয়ানে ভুল আছে তাহলে প্রয়োজনীয় শুনানী শেষে সংশ্লিষ্ট প্রমাণ পত্র বিশ্লেষণ করে সংশোধনের আদেশ দিবেন।
শিকল জরিপ
ভূমি জরিপের জন্য শিকল জরিপ সবচেয়ে সহজ। যে জায়গায় জরিপ করতে হবে তা কতকগুলো ত্রিভুজে ভাগ করে নিতে হয় এবং ত্রিভুজের বাহুগুলোর দৈর্ঘ্য শিকল দিয়ে মাপ করা হয়। জ্যামিতি কক্ষে ত্রগুলির মধ্যে ত্রিভুজ অংক পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ। পুরো জায়গাটিকে সারি সারি ত্রিভুজে ভাগ করে নিতে হয়। ত্রিভুজের কোণগুলি ৬০ ডিগ্রির কর বা ১২০ ডিগ্রির বেশি না হয় তা দেখতে হবে। মাঠের মাঝামাঝি দিয়ে একটি বা দুটি মেরুদন্ড রেখা টেনে নেয়া যায়। এই মেরুদন্ড রেখার সালে প্রধান প্রধান ত্রিভুজগুলো আবদ্ধ থাকবে এবং এরপর বড় বড় ত্রিভুজগুলোকে আরো ছোট ছোট ত্রিভুজে বিভক্ত করতে হবে। এভাবেই শিকল জরিপ সম্পন্ন করা হয়।
আরো কিছু দরকারী লেখা পড়ুন
- দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র
- দোকান ঘরের চুক্তিপত্র লেখার নিয়ম
- জমি বন্ধকের অঙ্গিকার নামা
- দোকানঘর ভাড়ার চুক্তি পত্র
- চুক্তি করবেন যেভাবে
- ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
- ফ্ল্যাট ক্রেতা বিক্রেতার চুক্তিপত্র
- জমি বন্ধকের চুক্তি নামা
- প্রেসের সাথে চুক্তিপত্র
- কোন চুক্তিপত্রে কত টাকার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হয়?
- পার্টনারশিপ চুক্তিপত্র দলিল
- দলিল বাতিলের মামলা কিভাবে করতে হয়, কি কি লাগে?
- বায়না দলিল বাতিল করার নিয়ম
- সম্পত্তি দান করতে চাইলে যা করবেন
- বায়না দলিলের শর্তাবলি
- হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম
- দানপত্র/হেবাবিল এওয়াজ দলিল রেজিস্ট্রি খরচ
- জমির মাপ
- জমির হিসাব
- ডেভেলপারের সঙ্গে চুক্তির আগে-পরে ভূমি মালিক ও ফ্ল্যাট ক্রেতার করণীয়
- বায়নানামা দলিল লেখার নিয়ম
কম্পাস জরিপ
কম্পাসের সাহায্যে যে জরিপ পরিচালিত হয় তার নামকম্পাস জরিপ। এতে দুই ধরনের কম্পাস ব্যাবহার করা হয়। এ কম্পাস দুটি হল প্রিজমেটিক কম্পাস এবং সার্ভেয়াস কম্পাস। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, রাস্তা, নদী এবং ধারাবাহিক রেখার নকশা প্রণয়ন কাজে প্রিজমেটিক কম্পাস ব্যাবহার করা হয়। আর বড় নদী বা সমুদ্র এলাকায় যখন বিশাল চর জেগে উঠে তখন তা নরম থাকে যে তার উপর দিয়ে চলাফের করা যায় না । তখন কম্পাস জরিপের মাধ্যমে তার অবস্থান, সীমানা এবং আয়তন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তবে এ জরিপের বর্তমানে কোন ব্যবহার নেই বললেই চলে ।
প্রত্যেকটি এলাকায় বা প্রত্যেক মৌজায় জমি পরিমাপের জন্য মানচিত্র আছে এবং তার একটি দাগ নং আছে। প্রত্যেক মৌজায় প্রত্যেক প্রজার এক বা ততোধিক ভূমি জন্য একত্রে যে রেকর্ড সৃষ্টি করা হয় তাকে খতিয়ান বলা হয়। ভুমি জরিপের মাধ্যমে খতিয়ান সৃষ্টি করা হয়। এগুলি ক্রমিক সংখ্যাদ্বারা সাজানো হয়। এই সংখ্যাকে খতিয়ান নম্বর দ্বারা সাজানো হয়। খতিয়ানের ক্রমিক নং বা খতিয়ান নম্বর জমির মালিকের নাম, পিতার বা স্বামীর নাম মালিকের অংশ বা মালিকের মোট জমির পরিমান দাগ নং বা যে দাগে জমিটি অবস্থিত উক্ত দাগে মোট জমির শ্রেণি তার মানে নাল বা উচু জমি বা বসত বাড়ি উক্ত দাগে মোট জমির পরিমাণ মোট জমির মধ্যে অত্র খতিয়ানের অংশ রাজস্ব প্রদেয় জেলার নাম বা যে জেলায় জমিটি অবস্থিত থানা বা উপজেলার নাম জে এল নাম্বার (জুরিসডিকশন লিস্ট) তৌজি নাম্বার মন্তব্য মূলত আমরা খতিয়ান বলতে ভূমি মালকানার বিবরনকেইবলি। তাই সাবেক খতিয়ান এবং বর্তমান খতিয়ান পর্যালোচনা করলেই আমরা ভূমি মালিকানার ধারাবাহিকতা দেখতে পারব। মূলত খতিয়ান হতেই আমরা উক্ত ভুমির মালিক কখন কে ছিল বা বর্তমানে কে কে মালিক তা অনায়াসেই বের করতে পারব। ভূমি জরিপ পদ্ধতি-৩ আজকে আমি পরবর্তীকালে যে সকল জরিপ কাজ সংঘটিত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমেই আর. এস. জরিপ ১৯৬৫ সালে সমগ্র দেশে সরকার খতিয়ান হালনাগাদ করণের উদ্দেশ্যে সংশোধনী পরিপ কার্যক্রমশুরু করেন। ২০ বছরের মধ্যে সমগ্র দেশে একার্যক্রম সমাপ্ত করার লক্ষ্য থাকলে বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। ধীরে ধীরে এটার গ্রহণযোগ্যতা কমতে থাকে।
জোনাল জরিপ
এবার আমি জোনাল জরিপ নিয়ে আলোচনা করব। ভূমি সংস্কার কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক রিভিশনাল সেটেলমেন্ট পদ্ধতির পরিবর্তে ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে স্থায়ী পদ্ধতির জোনাল সেটেলমেন্ট আরম্ভ হয়। ১০ টি বৃহত্তর জেলায় জরিপ কাজ হয় এবং এ জরিপে সৃষ্ট খতিয়ানকে বাংলাদেল সার্ভে বা বি.এস. খতিয়ান বলে। কেউ আবার একে আর. এস.খতিয়ান বলে।
দিয়ারা জরিপ
এবার আমি দিয়ারা জরিপ নিয়ে আলোচনা করব। দরিয়া শব্দ থেকে দিয়ারা শব্দের উদ্ভব। যে সকল এলাকায় নদী বা সাগরের কারণে জমির ভাঙ্গাগড়া বেশি হয় সে অঞ্চলে দিয়ারা জরিপ পরিচালিত হয়।
সিএস জরিপ
সি এস হচ্ছে সংক্ষিপ্ত রুপ এর সম্পুর্ন নাম হচ্ছে কেডেস্ট্রাল সার্ভে । ১৮৮৮ সাল হতে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত সময় কালে বর্তমান বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাসমূহ এবং সিলেট ছাড়া সমগ্র দেশে জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জমি কিস্ত কিস্তা বা খন্ড খন্ড করে জরিপ করা হয় বলে এ জরিপকে কিস্তোয়ার জরিপ বলা হয়। জরিপকৃত জমি ছিল শতকরা ১০০ ভাগ এবং প্রতি খন্ত ভূমি জরিপের সাথে সাথে জমির পরিমান, শ্রেণি, জমিদার, ভোগদখলকারী মালিকের নাম প্রদেয় খাজনার বিবরণ সম্বলিত খতিয়ান প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কারণে এ জরিপের মাধ্যমে প্রণীত নকশা এবং খতিয়ানের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। এ জরিপকে ডিএসবা ডিস্ট্রিক্ট সেটেলমেন্ট জরিপ বলা হয় এবং খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলা হয়।
১৯৫৬ হতে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে একটা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সমগ্র দেশে একই সাথে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে স্বত্বলিপি প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় নি। ফলে স্বত্বলিপি প্রকাশনার পর সমগ্র দেশে ভুলভ্রান্তির অভিযোগ উঠে এবং জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। ফলে এস এ খতিয়ানের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। ভুমির বিভিন্ন জরিপ পদ্ধতি আজকে আমি ভূমির বিভিন্ন জরিপ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। ভূমি জরিপ পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা বেশিরভাগ মানুষই অজ্ঞ। তাই ভূমি জরিপ সম্পর্কে আমাদের জানা অতিব জরুরি।
জরিপ কি
জরিপ শব্দের অর্থ সমীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ। কোন এলাকার সকল বা নির্দিষ্ট ভূখন্ড পরিমাপ করে এর অবস্থান আয়তন এবং পরিসীমা নিরুপণ করার কার্যক্রমকে জরিপ বলে। এখন ভূমি জরিপের উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। জরিপ কার্যক্রম সাধারণত জেলা ভিত্তিক পরিচালনা করা হয়। জেলার বা সুনির্দিষ্ট কোন এলাকা বা মৌজার প্রত্যেক ভূখন্ড সরেজমিনে পরিমাপ করে নির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে এর অবস্থান এবং আয়তন সম্বলিত একটি মৌজা নকশা প্রণয়ন করে প্রত্যেক ভূখন্ডের মালিক, দখলদার, জমির পরিমাণ, খাজনার পরিমাণ, জমির শ্রেণি এবং চৌহদ্দি নির্দেশ করে কর্ড বা খতিয়ান প্রনয়ন করাই জরিপ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য। নতুন মৌজা নকসা প্রণয়ন এবং জমির মালিকানা জমির বিবরণ সম্বলিত খতিয়ান প্রণয়ন করা জরিপের অন্যতম কাজ। এ ২টি মিলে স্বত্বলিপি প্রস্তুত করা হয়। কাজেই স্বত্বলিপি তৈরিতে ভূমি জরিপের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।
নামজারি বা মিউটেশন কি?
নামজারি বা মিউটেশন একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় যা জমি ক্রয়ের পর বা মালিকানা পরিবর্তন ক্রেতাকে করতে হয়। নামজারি অর্থ মালিকানার পরিবর্তন। এক বা একাধিক দাগের সম্পুর্ন বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ভূমিস্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। বিক্রয়, দান, বিনিময় ইত্যাদির মাধ্যমে খতিয়ানভুক্ত জমি হস্তানন্তর করা হলে উক্ত খতিয়ান হতে হস্তান্তরিত ভূমির পরিসাণ ঐ খতিয়ান হতে বাদ দিয়ে হস্তান্তরগ্রহীতার বা যে ব্যাক্তি জমি ক্রয় করেছেন বা ক্রেতা নামে খতিয়ান খুলে তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় একে ‘’নামজারি বা মিউটেশন’’বলে। হস্তান্তরিত ভূমির প্রকৃত প্রজাকে এবং যার নিকটহতে খাজনা আদায় করা হবে তার জন্য স্বত্বলিপি বা খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। কাজেই নামজারি করলে সরকারি রেকর্ডে পুর্বের স্বত্বাধিকারীর নামই থেকে যাবে হস্তান্তরগ্রহীতার নাম অজ্ঞাত থেকে যাবে। তাই অন্তবর্তীকালিন রেকর্ড পরিবর্তন, সংশোধন এবং হালনাগাদ করণের প্রক্রিয়াকে নামজারি বলা হয়।
ইংরেজ শাসন আমলে ভূমি আইন১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়াকোম্পানি বাংলার দেয়ানী শাসন বা রাজস্ব আদায়ের অধিকার অর্জন করে। কোম্পানির আমলে ভূমি ব্যবস্থা এবং রাজস্ব আদায় পদ্ধতি মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকে। বিন্তু ইংরেজ শাসন সুপ্রতিষ্ঠত হবার পর এ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়। প্রথমেই পাচসালার প্রবর্তর করা হয়।সর্বোচ্চ ডাককারীর নিকট পাচ বছরের জন্য ভূমি নিলামে বন্দোবস্ত করা হয়। কিন্তু দুই বছর অতিক্রান্ত হবার পরই তা বাতিল করে একসালার প্রবর্তন করা হয়।
এরপর গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নঅয়ালিশ ১৭৮৯ সালে ১০ সালার প্রবর্তন করেন। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী ১০ বছরের জন্য নির্দিষ্ট খাজনার ভিত্তিতে জমিদারগণের নিকট ভূমির স্বত্ব দানকরা হয়। এর পরে বহু ভূমি অনাবাদী থেকে যায়। সকল অনাবাধী ভূমি চাষের আয়তায় এনে একটি কৃষি বিপ্লব সাধনের লক্ষ্যে লর্ড কর্নোয়ালিশ ১০ সালা বাতিল করে ১৭৯৩ সালে নির্দিষ্ট শর্তাবলীর ভিত্তিতে জমিদারগণকে স্থায়ীভাবে স্বত্ব প্রদান করা হয় এ ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা’ প্রবর্তনের মাধ্যমে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্রিটিশ শাসনামলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমিদারগণ ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি ছাড়াই যে কোন সম্পত্তি বিক্রি, দান, ইজারা, বন্ধক এবং অন্য যে কোন ভাবে হস্তান্তর করতে পারতেন। রায়ত ছিল জমিদারদের অধীনস্ত প্রজা।
সরকার আশা করেছিলেন যে, নির্দিষ্ট ভূমি রাজস্ব প্রদানের বিনিময়ে জমিদারগণকে ভূমির মালিকানা প্রদান করা হলে, তারা নিজেদের স্বার্থেই তাদের অধীনস্থ রায়তদের সাথে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে এবং সকল অনাবাদী ভূমি চাষের এলাকায় আনা হবে। কিন্তু জমিদারদের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা প্রদান করায় কৃষক প্রজাকূলের মধ্যে নিদারুন বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন রেগুলেশন ঘোষণা করে প্রজাকুলের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করেন। অবশেষে জমিদার শ্রেণির বিরোধিতা সত্বেও ব্র্রিটিশ সরকার ১৮৮৫ সালে বংগীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাস করেন, যার ফলে প্রজাদের অধিকার বহুলাংশে সুরক্ষিত হয়।
এভাবেই বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন শাসনামলে বাংলাদেশের ভূমি আইন পরিবর্তিত হতে থাকে। বাংলাদেশের ভূমি আইনের ক্রমবিকাশ-২ মুসলিম আমলে ভূমি আইন আমি মুসলিম আমলে যে সকল ভূমি আইনগুলো ছিল তা আজকে আলোচনা করব। মুসলমানদের দ্বারা ভারত বিজয়ের পর মুসলমান শাসকগণ প্রচলিত হিন্দু ভূমি আইনগুলো বাতিল না করে এর অনেক নীতি অনুসরণ করতে লাগল। ভূমি প্রশানের ব্যাপারে মুসলিম সম্রাটদের বিশেষ করে সুলতাল আলাউদ্দিন আল খিলজী, সুলতান মুহাম্মাদ বিন তুগলক, সম্রাট আকবর এবং সম্রাট শের শাহের অবদান ছিল অপরিসীম। কবুলিয়াত এবং পাট্টা প্রদানের ব্যবস্থা যা কিছুদিন পূর্বে এদেশে প্রচলিত ছিল এবং তা ছিল সম্রাট শের শাহের সৃষ্টি।
এ ব্যবস্থায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কৃষকদেরকে ভূমির মালিকানা হস্তাস্তর করা হতো এবং খাজনার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেয়া হতো। সম্রাট আকরর এবং শের শাহ প্রবর্তিত পদ্ধতির অধিকতর উতকর্ষ সাধন করেন। মোগল আমলে ভূমি এবং রাজস্ব আইনের প্রয়োগ হতো ন্যায় নীতির উপর ভিত্তি করে। বাদশাহী আমলে নিস্কর ভূমি বন্টনের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। বাদশাহের অনুগত্যভাজন ব্যক্তিকে এরুপ নিস্কর ভূমি দান করা হতো। ইংরেজ রাজত্ব কায়েম হবার পর এরুপ নিস্কর বা লাখে রাজ ভূমির উপর খাজনা ধার্য করা হয় ।
বাংলাদেশের ভূমি আইনের ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশ
আমাদের এই বাংলাদেশের ৯০% লোকই আমরা আইন সম্পর্কে জানিনা, এই জন্যই আইন সম্পর্কে এদেশের মানুষকে সচেতন করার জন্যই আমার এই ব্লগ সাইট ।এই ব্লগ সাইটটি পড়ে যদি কারো উপকার হয় তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক । আমি প্রথমেই ভূমি আইন সম্পর্কে অলোচনা করব। কারণ ভূমি আইন সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ একেবারেই অজ্ঞ বলা চলে ।
ভুমি আইন
বাংলাদেশে বর্তমানে যে ভূমি আইন তা পাকিস্তানি আমলের। যা ১৯৭১ সালের পূর্বে প্রবর্তিত হয়েছিল এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে এ দেশ প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনে ছিল। মূলত ব্রিটিশ শাসন আমল হতেই ভুমি আইনের সৃষ্টি এর পর মুসলমান শাসন আমল এবং তারপর হিন্দু শাসন আমল ছিল। আজকে আমি হিন্দু আমলের ভুমি আইন সম্পর্কে আলোচনা করব।
হিন্দু আমল
মুলত হিন্দু আমলে এ দেশে ভূমির কোন একছতত্র মালিক কেউ ছিলনা। সে সময় জনসখ্যা খুবই কম ছিল। যার ফলে অনেক জমিই অনাবাদী থাকত। তাই তখন যে ঝোপ-জঙ্গল পরিস্কার করে ফসল করত সেই জমির মালিক হত। জমি হতে যা ফসল হতো তা ৩ ভাগে ভাগ হতো, যার মধ্য হতে চাষী পেতো মূলভাগ। গ্রাম্য প্রধান পোতো ১ ভাগ। রাজা পেতো ১ ভাগ। আসলে সে সময় চাষী জমির উপর একছত্র কোন মালিকানা ছিল না কারণ তখন ভূমির কেনা বেচার কোন প্রচলন ছিল না। প্রাচীন গ্রাম বাংলার জনগণ রাষ্ট্রীয় রাজনীতি হতে বিচ্ছিন্ন ছিল। যৌথপরিবার ছিল হিন্দু সমাজের সর্ব নিম্ন ইউনিট। একজন উচ্চ বর্ণের হিন্দু ব্রাক্ষণ ছিলেন গ্রাম্য প্রধান এবং তার নেতৃত্বে যে সকল প্রথার সৃষ্টি হয় তাই কালক্রমে আইনে রুপ নেয় ।
No Comments
Leave a comment Cancel