চিঠির কথা বললেই বাঙালির মনে পড়তে বাধ্য ‘পথের পাঁচালি’ ছবিতে চিঠির আগমনে ছোট্ট অপুর সেই শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনা। ঠিক আগের প্রজন্মও এই উত্তেজনার সঙ্গে ভীষণ পরিচিত ছিল। একটি চিঠি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটত কত জনের।
প্রিয়জনের থেকে একটি খবর মিললেই আশ্বস্ত হত মন। আর ছিল প্রেমপত্র নিয়ে আহ্লাদ। যাদের হাতের লেখা আর লেখার হাত উভয়ই ভাল, তাদের চাহিদা তখন তুঙ্গে। সকলেরই দাবি, তাদের জন্য লিখে দিতে হবে প্রেমপত্র।
চিঠির প্রাথমিক দুই শর্তই হয়তো দূরত্ব ও অপেক্ষা। একবিংশ শতকের প্রযুক্তিনির্ভর যাপনে যার আর অস্তিত্ব নেই। হাতের কাছে ভিডিয়ো কলের সুবিধা আমাদের দূরত্বের অনুভুতি আর বোধ করতে দেয় না। সামাজিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উত্তর পাওয়ার যুগে এক সপ্তাহের অপেক্ষা কেবল অর্থহীন নয়, অপ্রয়োজনীয়ও।
তবে প্রযুক্তিতে নেই প্রিয়জনের হাতের স্পর্শ, গন্ধ। প্রেমনিবেদনে নিঃসন্দেহে চিঠির জুড়ি মেলা ভার আজও। ফলে অনেকেই পুরনো অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে চাইছেন আজকাল। কিন্তু চিঠি লেখাও একটি শিল্প। এও রপ্ত করতে হয় যত্ন নিয়ে। চিঠি লেখার সময়ে কী কী বিষয় মাথায় রাখবেন?
১) ভাষা: ভাষা হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ভাষায় বেশি স্বচ্ছন্দ, সেই ভাষাতেইচিঠি লিখুন। অযথা লেখার মধ্যে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় চলে গেলে ছন্দপতন হয়।
২) হাতের লেখা: সুন্দর হাতের লেখার এক আলাদা আকর্ষণ আছে। সেই বোর্ডের পরীক্ষার সময় থেকে আমরা শুনে আসছি, হাতের লেখার গুরুত্বের কথা। চিঠিতেও কিন্তু এর গুরুত্ব অস্বীকার করার জায়গা নেই।
৩) মনের ভাব প্রকাশ: মুখের ভাষায় মনের গভীরতম অনুভুতি প্রকাশ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে অনেক সময়ে। চিঠিতে এক প্রচ্ছন্ন ও নিরাপদ আড়াল থাকে, যা অনেক অব্যক্ত কথাই বলে ফেলতে সাহায্য করে। তাই যতটা সম্ভব নিজেকে প্রকাশ করুন।
ভাষার দিকে নজর দিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখুন মনের কথা। তবে খেয়াল রাখবেন ভাষাকে অতিরিক্ত প্রাধান্য দিতে গিয়ে আপনার ভাব প্রকাশ যেন কৃত্রিম না হয়ে প়ড়ে। ব্যক্তিত্বের স্বকীয় ছোঁয়াই কিন্তু চিঠির অন্যতম সম্পদ।
৪) কবিতা: প্রেমপত্রে সম্বোধনের জন্য এক সময়ে বাংলা কবিতার কালজয়ী নায়িকা বনলতা বা সুচেতনাদের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। চিঠি লেখার অবলুপ্তির সঙ্গে এই হিড়িক কমে গেলেও, প্রেমনিবেদনে কবিতার গুরুত্ব এখনও কমেনি। ভাষায় যেখানে নিজের কথা প্রকাশ করা হয়ে পড়ে অসম্ভব, তখন শিল্পই আজও ভরসা— তা কবিতাই হোক, কিংবা গানের লাইন।
৫) খোঁজ-খবর ও শুভেচ্ছা: যাকে চিঠি লিখছেন তার খোঁজ তো নেবেনই, তার সঙ্গে আত্মীয়-পরিজন বা পরিবারের খোঁজ নেবেন। শুভেচ্ছা জানানোর সময়েও পরিবারের কথা উল্লেখ করবেন।
কৃতজ্ঞতা: আনন্দবাজার পত্রিকা
No Comments
Leave a comment Cancel