আনওয়ার হোসেন-কে লেখা চিঠি
১মার্চ, ১৯২৬
ভাই!
… আমার স্বাস্থ্য ছিল অটুট, – জীবনে ডাক্তার দেখাইনি। এই আমার প্রথম অসুখ ভাই, বড্ড ভোগাচ্ছে। প্রায় সাত মাস ধরে ভুগেছি জ্বরে। বড্ড জীবনী-শক্তি কমে গেছে। বাইরে থেকে খুব দুর্বল হইনি। এতদিন সুস্থ হয়তো হয়ে উঠতাম, কিন্তু অবসর বা বিশ্রাম পাচ্ছিনে জীবনে কিছুতেই।
এই শরীর নিয়েই আবার বেরুব ৬ মার্চ দিনাজপুরে। সেখানে ডিস্ট্রিক্ট কনফারেন্স, সেখান থেকে মাদারিপুর Fishermen’s conference attend করতে যাব। ওখান থেকে খুব সম্ভব ঢাকা যাব। যদি যাই দেখা হবে। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে হচ্ছে স্বাস্থ্যভঙ্গের জন্য। এত দুর্বল আমি এখনও যে, ধৈর্য ধরে একটা চিঠি পর্যন্ত লিখতে পারিনি।
আমাদের বাঙালি মুসলমানের সমাজ, নামাজ পড়ার সমাজ। যত রকম পাপ আছে করে যাও – তার জবাবদিহি করতে হয় না এ সমাজে, –কিন্তু নামাজ না পড়লে তার কৈফিয়ত তলব হয়। অথচ কোরানে ৯৯৯ জায়গায় জেহাদের কথা এবং ৩৩ জায়গায় সালাতের বা নামাজের কথা বলা হয়েছে।
আমার লেখার পূর্ব তেজ ইত্যাদির কথা, – আপনি কী আমার বর্তমান লেখাগুলো পড়েছেন? আমি জানি না – লেখা প্রাণহীন হচ্ছে কিনা। হলেও আমি দুঃখিত নই। আমি যার হাতের বাঁশি, সে যদি আমায় না বাজায় তাতে আমার অভিযোগ করবার কিছুই নেই।
কিন্তু আমি মনে করি – সত্য আমায় তেমন করেই বাজাচ্ছে, তার হাতের বাঁশি করে। আমার লেখার উদ্দামতা হয়তো কমে আসছে–তার কারণ আমার সুরের পরিবর্তন হয়েছে। আপনি কি আমার ‘সাম্যবাদী’ পড়েছেন? তা হলে বুঝবেন সব কথা। আপনার অভিযোগ আর যার হোক না কেন, সাহিত্যিকের নয় – রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ আমায় অধিকতর উৎসাহ দিচ্ছেন।
তাছাড়া আমি আমার মনের কুঞ্জে আমার বংশীবাদকের বিদায়-পদধ্বনি আজও শুনতে পাইনি। তবে তার নবীনতর সুর শুনছি। সেই সুরের আভাস আমার ‘সাম্যবাদী’তে পাবেন। বাংলা সাহিত্যে আমার স্থান সম্বন্ধে আমি কোনোদিন চিন্তা করিনি। এর জন্য লোভ নেই আমার। সময়ই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সমালোচক। যদি উপযুক্ত হই, একটা ছালা-টালা পাব হয়তো।…
–নজরুল ইসলাম
No Comments
Leave a comment Cancel