সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ২২ জুন ২০১২
ড. ইফতেখারুজ্জামান
নির্বাহী পরিচালক
টিআইবি, ঢাকা।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
আমি যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছি। এই তিন বছরের কার্যক্রম নিয়ে ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতায়- যোগাযোগ খাত’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
এই বইয়ে যোগাযোগ খাতের (সড়ক খাত, সেতু বিভাগ, বিআরটিএ, বিআরটিসি ডিটিসিবি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে) গৃহীত কার্যক্রম, বাস্তবায়িত কার্যক্রম ও বাস্তবায়নাধীন কার্যক্রমের একটি চিত্র পাওয়া যাবে।
বইটি বর্তমান সরকারের যোগাযোগ খাতের তিন বছরের কার্যক্রমের একটি নিখুঁত দলিল। বইটি নভেম্বর ২০১১ প্রকাশ করা হলেও আমার দফতর পরিবর্তনের পর তা বিতরণ করা হয়নি। একটি বই আপনার জন্য পাঠালাম।
আপনি জানেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমার কার্যকালীন সময়ে নানা বিষয় নিয়ে, বিশেষ করে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক কথাবার্তা হয়েছে, সমালোচনা হয়েছে। সেসব কথাবার্তায় ও সমালোচনায় বাস্তবতার প্রতিফলন ছিল না।
এমনকি পরিকল্পিতভাবে হলুদ সংবাদিকতার আড়ালে, বিক্ষুব্ধ পক্ষের কথায় প্রভাবিত হয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। তবুও আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়েছি। ‘সাফল্যের ধরাবাহিকতায়-যোগাযোগ খাত’ বইটি এর প্রমাণ বহন করবে।
উন্নয়ন-যোগাযোগ এবং উন্নয়ন-সাংবাদিকতাÑবর্তমান মিডিয়া জগতে দুটি জনপ্রিয় শব্দ। শব্দদুটি উন্নয়ন ও অগ্রগতির সমার্থক। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সুধীজনের পাশাপাশি বইটি সাংবাদিকদের তথ্য জানার অধিকারের পথ আরো সম্প্রসারিত করবে।
বইটির তথ্যমূলক বর্ণনা গবেষণার দাবি রাখে। তিন বছরে যোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, যে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে, তা বিগত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নির্মাণে যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ২ বছর লেগেছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে যেসব কল্পনাপ্রসূত, বায়বীয়, ভিত্তিহীন, অসত্য অভিযোগ তোলা হয়েছেÑতা একদিন অসত্য প্রমাণিত হবে। এ অভিযোগ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের কারসাজি তাও প্রমাণিত হবে।
গত জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১১-তিন বছরে যোগাযোগ খাতে যে কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, যে কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, যে কাজ শুরু হয়েছে তা বিগত ১০০ বছরের ভেতরে ৫ বছর মেয়াদি কোনো সরকার গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি।
আমার দায়িত্ব পালন সময়ে এ উন্নয়ন প্রয়াস ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক ও ঐতিহাসিক দলিল বলে বিবেচিত হবে।
আমি আশা করি, আমার সহকর্মী, আমার বন্ধু, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন এবং অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণে জাতীয় স্বার্থে মাননীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধে আরো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবেন।
আপনি জানেন, সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল পেশা। আমি সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ প্রসঙ্গে ভলটেয়ার-এর একটি বিখ্যাত উক্তি টেনে আমি বলতে চাই- I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it. ভল্টেয়ার-এর বিখ্যাত উক্তিটি আমি সমর্থন করি, ব্যক্তিগতভাবে আমি অনুসরণ করি।
মানুষের কথাবলার অধিকার আছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, সেটা সত্য হোক আর অসত্য হোক। কিন্তু অন্যায়, অসত্য ও ভিত্তিহীন খবর প্রচার না করাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শিষ্টাচার বলে আমি মনে করি।
আবার অসত্য সংবাদের প্রতিবাদের অধিকার সবার আছে। উইলিয়াম সেক্সপিয়ারের ভাষায়- The nature of bad news infect the teller. অনৈতিক খবর বা ইয়োলো জার্নালিজম যেমন সংবাদপত্রের সুনাম- সুখ্যাতি নষ্ট কাজ করে, তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে।
দেশের অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরাান্বিত করে।
আপনি জানেন, বিগত দিনে আমার সম্পর্কে যেসব পত্রিকা অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করেছে তা দেশের উন্নয়নে বিরাট অন্তরায় হিসেবে যেমন নিশ্চিত হয়েছে, তেমনি আমাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা হয়েছে।
মিডিয়ার এসব অসত্য খবরের ভিত্তিতে সুধীসমাজ পত্রিকায় কলাম লিখেছেন, মধ্যরাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে আলোচনা করেছেন। সংবাদপত্রের অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়ে আমার সম্পর্কে বিরূপ কথা বলেছেন।
আমাকে দর্শকদের কাছে, পাঠকদের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে যার পরিণতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।
কারণ, এসব অসত্য সংবাদের ভিত্তিতেই, অধিকাংশ সময়, বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরির মাধ্যমে সরকারের, দেশের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে থাকে।
তাই মিডিয়ার অসত্য খবরের বিষয়ে আপনার নতুন করে চিন্তাভাবনা দরকার বলে আমি মনে করি। সম্প্রতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মন্তব্য মিডিয়া বিকৃত করে প্রচার করায় কী পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে তা আপনার অজানা নয়।
আমি আশা করি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন দলিল সম্বলিত এ বইটিতে আপনি চোখ বুলাবেন এবং পড়বেন। বইটি পড়ে যদি মনে হয়, আমার প্রতি মিডিয়া সুবিচার করেনি, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার ইতিবাচক পদক্ষেপ কামনা করি। আপনার ঐকান্তিক সহযোগিতা চাই।
গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
আরো পড়ুন
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২
- আমার দেশ সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ওবায়দুল কাদেরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩
- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি
- আকিদুল ইসলামের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৪
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হেসেনের চিঠি
No Comments
Leave a comment Cancel