সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ১৪ জুন ২০১২

জনাব বদরুদ্দীন উমর
বিশিষ্ট কলামিস্ট
ঢাকা।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
গত ১৩ মে ২০১২ রবিবার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সম্পাদকীয় কলামে আপনার লেখা ‘মন্ত্রিসভা না ঘুষ দুর্নীতির আখড়া’ শীর্ষক লেখার প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে (পেপার কাটিং সংযুক্ত: সংযুক্তি-১)।

বিশেষ করে, আমাকে টার্গেট করে আপনার যুক্তিহীন, মনগড়া বক্তব্য, আমার চরিত্রহনন, আমার ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ, আমার সম্পর্কে গভীরভাবে না-জেনে সুইপিং কমেন্টগুলো এবং আপনার নিজস্ব মতামতগুলো আমাকে ব্যথিত করেছে। আপনার প্রতিটি মন্তব্য অযাচিত, যুক্তিহীন, মনগড়া, প্রভাবান্বিত এবং অসত্য ও মিথ্যা।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি সমাজের একজন সচেতন নাগরিক, বিশিষ্ট ও বিদগ্ধ জন। আপনার ক্ষুরধার সমালোচনা, বিশ্লেষণ আমি পড়ি। প্রভাবান্বিত হই।

জীবনে সৎ, ন্যায় পথে চলার উৎসাহ পাই, পেয়েছি। আমি সবসময় আপনার লেখা, আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি ও সমাজ-বিশ্লেষণের বিষয়গুলোর মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করি।

কিন্তু আপনার এ লেখা আমাকে পরিপূর্ণভাবে হতাশ করেছে, ব্যথিত করেছে। এ লেখা আপনারÑ একথা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়।

মনে হয়, কেউ জোড়তালি দিয়ে লিখে, তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে, আপনার নাম ব্যবহার করেছে। এধরনের একটি যুক্তিহীন এবং ব্যক্তি-আক্রোশমূলক লেখা আপনি লিখেছেনÑতা কী করে হয়?

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, সংবাদ ও সাংবাদিকরা লেখার মাধ্যমে তিলকে তাল করতে পারে। সত্যকে মিথা দিয়ে ঢেকে অপপ্রচার করে জনগণকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করতে পারে। কিন্তু সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না।

Truth Prevails. আমি সারাজীবন সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। সরকারি দায়িত্ব পালনে, মন্ত্রী হিসেবে কর্তব্য পালনে সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার বাইরে কিছু করিনি। মন্ত্রণালয়ের নথিতে আমার সিদ্ধান্তগুলো ডকুমেন্টেড হয়ে আছে।

আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রতিটি নথি, প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমার সততা ও নিষ্ঠার প্রমাণ দেবে। প্রয়োজনে এগুলো ওয়েবসাইটে দিয়ে উন্মুক্ত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

এছাড়া, আমি মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিভিন্ন সময়ে যে ইউনোট দিয়েছি-তাও প্রমাণ করবে আমার কাজের গতি-প্রকৃতি। আপনার জ্ঞাতার্থে ইউনোটগুলো সংযুক্ত করা গেল (সংযুক্তি-২)।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, সরকারি নিয়ম-কানুন, সরকারি কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। কাজের জন্য দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছি। এবার যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ, ষড়যন্ত্র, কাল্পনিক অভিযোগ, অনুমানভিত্তিক কথা শুরু হয়।

কতিপয় পত্রিকায় আমাকে অসত্য ও কাল্পনিক লেখা লেখে জনমনে একটি মিথ্যা ধারণা বা পারসেপশন সৃষ্টিতে কাজ করে। সাংবাদিকতার নীতিমালা অগ্রাহ্য করে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে, আমার বিরুদ্ধে অশোভন, অসত্য ও মিথ্যা লেখা লিখেছে।

অনেক সময় তাদের এ লেখা একটি পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন বলে মনে হয়েছে। তাদের এই লেখার পারতপক্ষে আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি। ভেবেছি, আমি আমার কাজ দিয়ে, আমার সততা ও স্বচ্ছতা দিয়ে, তাদের অসত্য খবরের উত্তর দেবো।

আপনার এই লেখা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করার ইচ্ছে আমার ছিল না। কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যা, অসত্য খবরের উপর ভিত্তি করে আপনার লেখার কারণে আমাকে কলম ধরতে হলো। আমি মনে করি, সত্য আপনার জানা দরকার।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনার মনে আছে, মানিকগঞ্জে এক সড়ক-দুর্ঘটনায় দেশের চলচ্চিত্রের নতুন ধারার পরিচালক তারেক মাসুদ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক মিশুক মুনির মৃত্যুবরণ করেন। একথা সত্যি, তাদের অকালমৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্র ও সংবাদ জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তদন্তে দেখা যায়, দুই গাড়ির ড্রাইভার দু’জনের অসতর্কতা ও অতিবৃষ্টির কারণে ‘ভিজিবিলটি’ না-থাকায় এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এক্ষেত্রে ঐ সড়কে কোনো খানাখন্দক ছিল কিংবা গর্ত ছিল না, কোনো সমস্যা ছিল না।

অথচ এতে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে দায়ী করে পদত্যাগ চাওয়া হলো। শহীদ মিনারে কচিকাঁচা ছোট্ট শিশুদের গলায় আমার পদত্যাগ লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হলো। দুর্ঘটনার দায় আমার ওপর চাপিয়ে মিডিয়ায় তুলকালাম বাধানো হলো।

এখন প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। কৈ তেমন উচ্চবাচ্য তো শুনা যায় না! অর্থাৎ কেন জানি আমাকে টার্গেট করে কেউ কিছু অর্জন করতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, দুর্ঘটনা রোধে আমাদের অনেক কাজ করার আছে, আমাদের এখনো অনেকদূর যেতে হবে।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের নামে-বেনামে চিঠি লেখা, স্বাক্ষর সুপার ইমপোজ করে চিঠি লেখা এবং কাল্পনিক ও অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে চিঠি লিখে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

আর আপনার মতো গুণীলোক-বিশ্বব্যাংকের কাজের ধরন সম্পর্কে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল। আপনি জানেন, বিশ্বব্যাংকের সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্যে বাঘাত ঘটলে, তাদের মরুব্বিদের ইশারা না-পেলে-তারা কত নিম্ন-পর্যায়ে যেতে পারে। তার উদাহরণ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে রয়েছে।

তারা যে কাউকে অপদস্থ করতে পারে। আপনি জানেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ বর্তমান সরকারের একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ সেতু দ্রুত নির্মাণে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমি কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অংশীদার।

এ প্রকল্পে প্রথম থেকেই স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহিতা শতভাগ নিশ্চিত করে কাজ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ডকুমেন্টে তা প্রতিফলিত। এক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি, অবৈধ পথ অবলম্বন করার সুযোগ ছিল না।

প্রতিটি পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে অনুমোদনে বিশ্বব্যাংক কখনো দুর্নীতির অভিযোগ করেনি। মূল সেতুর কাজের উপদেষ্টা নিয়োগ এবং দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে শেষের দিকে হঠাৎ কাল্পনিক ও অসত্য দুর্নীতির কথা বলে বিশ্বব্যাংক।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা কল্পনাপ্রসূত ও বিদ্বেষমূলক এ অভিযোগ করে। যেখানে বিশ্বব্যাংকের একটি টাকাও ছাড় হয়নি- সেখানে দুর্নীতি হয় কীভাবে? ইতিমধ্যে দুদক মূল ব্রিজের দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করেছে এবং রিপোর্টে কোনো ধরনের দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি।

বিষয়টি জানার পরও আপনারা, সংবাদপত্র একই কথা বারবার প্রচার করছেন এবং আমাকে দুর্নীতির পরিম-লে জড়ানোর চেষ্টা করছেন যা উদ্দেশ্যমূলক। মূলত একটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের অপপ্রচারে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করা হয়েছে।

ষড়যন্ত্রকারীদের অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্র্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত।

এই কল্পনাপ্রসূত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে আপনার লেখায়ও রং লাগিয়ে লেখা হয়েছে। আমি সামগ্রিক বিবেচনায় মনে করি, ঠুনকো ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগের অজুহাতে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ নির্মাণে ঋণদান স্থগিত করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের কারসাজির ফল।

প্রসঙ্গত আপনাকে জানাতে চাই যে, সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন-২০১২তে সংস্থাটির বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে আমি যোগদান করি। অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট বি. যোয়েলিক-এর সাথে আমার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে।

তাঁকে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে আমি একটি চিঠি দিই। তাঁর অফিসের মাধ্যমে সম্প্রতি তিনি তার উত্তর দিয়েছেন। আমিও এর জবাব দিয়েছি। আমি মনে করি, এর ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে নেয়া বিশ্বব্যাকের উত্তর, আমার জবাবের চিঠির কপিগুলো মন্ত্রিত্বের গোপনীয়তার কারণে দেয়া সম্ভব হলো না।

আমি মনে করি, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমি শতভাগ স্বচ্ছ। বোয়াও ফোরাম এশিয়া সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে তোলা দুটি ছবি সংযুক্ত করা গেল (সংযুক্তি-৩)।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, সাকো ইন্টারন্যাশনাল লি. যা ১৯৭৫ সালে সৃষ্টি এবং জন্মলগ্ন থেকে সুনামের সাথে কাজ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।

আমি মন্ত্রী হওয়ার পর, কোনোভাবেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজে সাকো অংশগ্রহণ করেনি। এটা দিবালোকের মতো সত্য। আর আমি মন্ত্রী হওয়ার আগেই সাকো’র এমডি’র পদ থেকে পদত্যাগ করি।

এগুলো অবহিত থাকা সত্ত্বেও, বারবার নতুন করে পুরাতন বিষয়াবলি পাঠকের কাছে নিয়ে আসা কতটুকু যুক্তিসংগত। আমার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, কোনোক্রমেই সাংবাদিকতার নীতি হতে পারে না। আপনার লেখার বিষয়বস্তু হতে পারে না।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, কতিপয় মিডিয়া আমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত করতে সহায়তা করে আসছে। আগের মেয়াদে আমার বিরুদ্ধে দুটি পাসপোর্র্ট সংক্রান্ত অভিযোগ এনে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা হয়েছে।

অথচ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। আমার জনৈক কর্মকর্তার ভুলের জন্য বিষয়টি ঘটেছিল। তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলাম [পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট আমার হস্তগত হয়েছে, যা সংযুক্ত করা গেল (সংযুক্তি-৪)]। তদন্তের অধিকতর স্বচ্ছতার জন্যই তখন পদত্যাগ করেছিলাম।

কিন্তু এজন্য আপনার লেখা বা পত্রিকাগুলো আমার প্রশংসা করেননি। এবারও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সময় যোগাযোগমন্ত্রীর অফিসরুম সংস্কারে আনুমানিক ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে বলে আমাকে জানানো হয়েছিল।

অথচ বিষয়টি নিয়ে, উপসম্পাদকীয় ছেপে আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছে। একইভাবে যোগাযোগমন্ত্রীর বিলাসবহুল গাড়ি কেনা নিয়ে (যে গাড়ি কেনা হয়নি) পত্রিকা লিখেছে। আমার ট্যাক্স প্রদত্ত অর্থ দিয়ে আমার গ্রামের বাড়ি কালকিনিতে নির্মিত ‘অতিথি ভবন’ নিয়ে পত্রিকা ব্যানার-হেড করেছে।

আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখা-দুটি পাসপোর্ট, যোগযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য নতুন গাড়ি ক্রয় এবং কালকিনিতে আমার বাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি অসত্য কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ টেনে বারবার আমাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। অথচ আমার জীবন পুরোপুরি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি সততা, নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে দায়িত্ব পালন করি। আমি সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এসেছি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্বও পালন করেছি। আল্লাহ রহমতে সমাজে নিজেকে সৎ, পরিশ্রমী ও কর্মঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি।

অনেকে অর্থ উপার্জন করে আরামে-আয়েশে দিন কাটায়, কলকারখানা বানায়, অনেকে টাকা আয়বর্ধনশীল কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে। আমি সৎ উপায়ে অর্জিত আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আর্তমানবতার সেবা করেছি, করে যাচ্ছি।

প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে আমার কষ্টলব্ধ উপার্জিত অর্থ ব্যয় করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মাথা ছাড়া দেহের যেমন দাম নেই, শিক্ষা ছাড়া জাতির কোনো মূল্য নেই। এই বিশ্বাস থেকে আমি শিক্ষাপ্রসারে আমার সাধ্যমতো কাজ করে চলেছি।

আমার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন দেখতে আসে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সুধীজনরা এসেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকও এসেছিলেন আমার এলাকায়, আমর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

তাঁরা আমার শিক্ষাকার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, বিমোহিত হয়েছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, তারা অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখার জন্য আমি দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের স্বাধীনতা দিবসে আমাকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করে। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা হলে ভাইস চ্যাঞ্চেলরের হাত থেকে আমি এ পুরস্কার গ্রহণ করি। প্রসঙ্গত, মাদারীপুর, কালকিনিতে আমার গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেখার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণে জানাচ্ছি।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি প্রায় গত তিন বছর যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। তিন বছর আমি প্রচুর পরিশ্রম করেছি। প্রচুর কাজ করছি। সরকারি প্রকল্পের জন্য প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য চ্যানেলাইজ করেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ, সেতু বিভাগ এবং বর্তমান রেল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন সেতু বিভাগের বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। আমি দায়িত্বে এসে সেতু বিভাগের কার্যক্রমে গতি আনি। কার্যক্রম ত্বরান্বিত করি। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি।

সেতু বিভাগকে একটি কর্মমুখর বিভাগে উন্নীত করি। ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নির্মাণে যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ২ বছর লেগেছে। সড়ক নির্মাণের অধীনে ১৬০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় যার মধ্যে ৪৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।

অধিকাংশের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যে শেষ হবে। অনুরূপভাবে রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর অনেকগুলোর কাজ বাস্তবায়নাধীন। এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের ফিরিস্তি আমি দেব না।

জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি গত তিন বছরে যে কাজ করে দিয়ে এসেছি, যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি, সেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে, সে কাজ ১০০ বছরের ভেতরে ৫ বছর মেয়াদি কোনো সরকার করতে পারেনি।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছি, বাস্তবায়ন করেছি, তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক এবং একটি ঐতিহাসিক দলিল। ক্রমান্বয়ে আমার সময়ে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। দেশের জনগণ, ঢাকাবাসী শীঘ্রই এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন। আর আমার কাজের মূল্যায়ন দেশবাসী করবেন।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি কর্মজীবনে এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে সর্বদা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইন্ট্রিগ্রিটিতে বিশ্বাসী একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। কোনোদিন, কোনো সময় আমি কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। সরকারি নিয়ম-আইন ভঙ্গ করে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করিনি।

আমার কষ্টার্জিত, পরিশ্রমলব্ধ অর্থ গরিব-দুঃখি মানুষের উন্নয়নে, দেশের শিক্ষাবিস্তারে ব্যয় করেছি, করে চলেছি। অর্থ থাকলে অনেক মানুষের যে বদঅভ্যাসগুলোর সৃষ্টি হয়-তাতে আমি জীবনে কখনো সম্পৃক্ত হইনি। আমার শত্রুরাও এ বিষয়ে বলতে পারবে না।

আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবদ্দশায় না হলেও আমার অবর্তমানে এসব কাজের, আমার সরলতা, আমার সততা ও নিষ্ঠার এবং কর্তব্য দায়িত্ববোধের মূল্যায়ন হবে। হেনরি ডেভিডের ভাষায়, আমি মনে করি, Goodness is the investment that never fails. সত্য, সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিনয়, জবাবদিহিতা আমার কাজের শক্তি, আমার অংহকার।

জানি না কেন, বারবার আপনারা গল্প বানিয়ে, রস দিয়ে, রং দিয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে, সম্পাদকীয় লিখে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন, পাশাপাশি আমার সুনাম ক্ষুন্ন করেন। আমি বিশ্বাস করি, আমার সামগ্রিক দায়িত্ব পালন, আমার সততা একদিন আপনাদের মিথ্যাকে চাপা দেবে এবং আপনারা আমার সততার কাছে লজ্জিত হবেন।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন আদর্শবান লোক বলে জানি। আমি আপনাকে আদর্শবান ও সৎ এবং মিথ্যার প্রতি সোচ্চার দেখতে চাই। কিন্তু কোনোকিছু লেখার আগে আপনারা এতটুকু ভাবেন না, এর প্রভাব একজন ব্যক্তি বা তার পরিবারের ওপর কীভাবে পড়বে।

একজন ব্যক্তি কীভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। আমি দেশের জন্য অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করি। সরকারি নিয়ম-কানুন কঠোর অনুসরণের মাধ্যমে কাজ করি। ব্যক্তিস্বার্থকে কখনো টেনে আনি না। অসত্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানোয়াট খবর-সৎকাজের গতিকে কমিয়ে দেয়, নিরুৎসাহিত করে।

আমার এ বক্তব্য আপনার পরবর্তী লেখায় স্থান পাবে-এ প্রত্যাশায়।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী

অনুলিপি
জনাব মাহমুদুর রহমান মান্না, সভাপতি, নাগরিক ঐক্য পরিষদ।

আরো পড়ুন

Comments to: বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us