সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ২৬ মে ২০১২

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সিলেট।

খোলা চিঠি

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, ২৬ মে ২০১২ শনিবার ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় আপনার লেখা ‘রাজনীতি নিয়ে ভাবনা’ শীর্ষক লেখার প্রতি আমার মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে (পেপার কাটিং সংযুক্ত)।

বিশেষ করে, আমাকে টার্গেট করে আপনার যুক্তিহীন, মনগড়া বক্তব্য, আমার চরিত্র হনন, আমার ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ, আমার সম্পর্কে গভীরভাবে না-জেনে সুইপিং কমেন্ট এবং আপনার নিজস্ব মতামতগুলো আমাকে ব্যথিত করেছে। আপনার প্রতিটি মন্তব্য ও কথা যুক্তিহীন, মনগড়া, প্রভাবিত এবং অসত্য ও মিথ্যা।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, আপনি সমাজের একজন সচেতন নাগরিক, বিশিষ্ট ও বিদগ্ধ জন। দেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষক। দেশের যুবশ্রেণিসহ সবাই আপনার লেখা পড়ে। আপনার লেখা সবাইকে প্রভাবিত করে।

আপনার সাদাসিধে লেখা, কথাবার্তা ও ক্ষুরধার সমালোচনা, বিশ্লেষণ আমি পড়ি। প্রভাবিত হই। জীবনে সৎ, ন্যায়পথে চলার উৎসাহ পাই, পেয়েছি। আমি সবসময় আপনার লেখা, আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি ও সমাজ-বিশ্লেষণের বিষয়গুলো, বিশেষ করে, শিক্ষাবিষয়ক গবেষণামূলক লেখার মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করি।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, কিন্তু আমার সম্পর্কে আপনার এ বিষয়ভুক্ত লেখা আমাকে পরিপূর্ণভাবে হতাশ করেছে, ব্যথিত করেছে। আমাকে সম্পৃক্ত করে লিখেছেন-এজন্য আমাকে ব্যথিত করেনি, আমাকে ব্যথিত করেছে এজন্য যে, আপনার লেখাটি মনগড়া ও তথ্যনির্ভর নয় বলে।

আপনার মতো তথ্যসমৃদ্ধ একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এ লেখা লিখেছে-একথা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়। সরকারি কাজ কীভাবে হয়, কীভাবে বাজেট বরাদ্দ হয়, বাজেট কিভাবে ব্যয় করা হয় ইত্যাদি আপনি ভালো জানেন। বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে সড়ক সংস্কার ও মেরামত কীভাবে হয়- তাও আপনি নিশ্চয় ভালো জানেন।

গত বছর ঈদের সময় মানুষ যথারীতি বাড়িতে গিয়েছে এবং ফিরেও এসেছে। অতিবৃষ্টির কারণে সড়কে সাময়িক খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছিল। সেসময়ে তা দ্রুত চলাচল-উপযোগী করা হয়েছিল। একথা সত্যিই, এটা বৃদ্ধির আগেই করা যেত।

এ ব্যাপারে যথাসময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ চেয়েছি। বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও তাৎক্ষণিক সারসংক্ষেপ প্রেরণ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব উপলব্ধি করে বরাদ্দের জন্য অর্থ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ না করায় দ্রুত সড়ক মেরামতের কাজ করা সম্ভব হয়নি। সেসময়ে এ বিষয়টি দেশবাসী সবাই জানেন। এ নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। আপনি জানেন, বাজেটের এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া, পদ্মা সেতু নিয়ে যা লিখেছেন তাও সত্যের অপলাপ।

তথ্য না জেনে, কতিপয় পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট বা ধারণার উপর ভিত্তি করে এ ধরনের একটি মনগড়া এবং ব্যক্তি-আক্রোশমূলক লেখা আপনার কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, কলাম লেখক, সংবাদ ও সাংবাদিকরা লেখার মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে, মনের মাধুরী মিশিয়ে, নানা ভাষা প্রয়োগ করে লিখেও জনগণকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করতে পারে।

কিন্তু সত্যকে কখনো মিথ্যা দিয়ে স্থায়ীভাবে ঢাকা যায় না। Truth Prevails. আমি সারাজীবন সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। সততার সাথে ব্যবসা করে, সরকারকে কর দিয়ে, নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছি।

সরকারি দায়িত্ব পালনে, মন্ত্রী হিসেবে কর্তব্য পালনে সততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহির বাইরে কিছু করিনি। মন্ত্রণালয়ের নথিতে আমার সিদ্ধান্তগুলো ডকুমেন্টেড হয়ে আছে। আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রতিটি নথি, প্রতিটি সিদ্ধান্ত আমার সততা ও নিষ্ঠার প্রমাণ দেবে। প্রয়োজনে এগুলো ওয়েবসাইটে দিয়ে উন্মুক্ত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

এছাড়া, আমি মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিভিন্ন সময়ে যে ইউনোট দিয়েছি-তাও প্রমাণ করবে আমার কাজের গতিপ্রকৃতি। আপনার জ্ঞাতার্থে ইউনোট গুলো সংযুক্ত করা গেল।

শ্রদ্ধেয় আধ্যাপক, সরকারি নিয়ম কানুন, সরকারি কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। কাজের জন্য দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছি। এবার যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ, ষড়যন্ত্র, কাল্পনিক অভিযোগ, অনুমানভিত্তিক কথা শুরু হয়।

কতিপয় পত্রিকায় আমার সম্পর্কে অসত্য ও কাল্পনিক লেখা লেখে জনমনে একটি মিথ্যা ধারণা বা পারসেপশন সৃষ্টিতে কাজ করে। যে মিথ্যা লেখায় আপনিও প্রভাবিত হয়েছেন। সাংবাদিকতার নীতিমালা অগ্রাহ্য করে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে, আমার বিরুদ্ধে অশোভন, অসত্য ও মিথ্যা লেখা লিখেছে, অনেক সময় তাদের এ লেখা একটি পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন বলে মনে হয়েছে।

তাদের এই লেখার পারত পক্ষে আমি কোন প্রতিবাদ করিনি। এমনকি মামলার কথাও ভাবিনি। ভেবেছি, আমি আমার কাজ দিয়ে আমার সততা ও স্বচ্ছতা দিয়ে, তাদের অসত্য খবরের উত্তর দেবো। আপনার এই লেখা সম্পর্কেও কোন মন্তব্য করার ইচ্ছা আমার ছিল না।

কিন্তু সর্ম্পূণ মিথ্যা, অসত্য খবরের উপর ভিত্তি করে আপনার লেখার কারণে আমাকে কলম ধরতে হলো। আমি মনে করি, সত্য আপনার জানা দরকার।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, আপনার মনে আছে, মানিকগঞ্জে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের চলচ্চিত্রের নতুন ধারার পরিচালক তারেক মাসুদ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক মুশীক মুনির মৃত্যুবরণ করেন। একথা সত্যি, তাদের অকাল মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্র ও সংবাদ জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

তদন্তে দেখা যায়, দুই গাড়ির ড্রাইভার দুজনের অসতর্কতা ও অতিবৃষ্টির কারণে ‘ভিজিবিলিটি’ না থাকায় এ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এক্ষেত্রে ঐ সড়কে কোন খাদাখন্দক কিংবা গর্ত ছিল না, কোন সমস্যা ছিল না। অথচ এতে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে দায়ী করে পদত্যাগ চাওয়া হলো।

দুর্ঘটনার দায় আমার ওপর চাপিয়ে মিডিয়ায় তুলকালাম বাধানো হলো। এখন প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটে। কই তেমন উচ্চবাচ্য তো শুনা যায় না? অর্থাৎ কেন জানি আমাকে টার্গেট করে কেউ কিছু অর্জন করতে চায়। তবে আমি বিশ্বাস করি, দুর্ঘটনা রোধে আমাদের অনেক কাজ করার আছে, আমাদের এখনো অনেকদূর যেতে হবে।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। সে অভিযোগের ভাষায় আপনি আপনার লেখায় আমাকে দায়ী করেছেন। বিষয়টি এবং আমার সম্পর্কে গভীরভাবে না জেনে কিংবা প্রভাবিত হয়ে অসত্য কথা লিখেছেন।

বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। বিশ্বব্যাংকে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের নামে-বেনামে চিঠি লেখা, স্বাক্ষর সুপার ইমপোজ করে চিঠি লেখা এবং কাল্পনিক ও অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে চিঠি লিখে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আর আপনার মত গুণীলোক বিশ্বব্যাংকের কাজের ধরন সম্পর্কে নিশ্চয়ই ওয়াকিবহাল।

আপনি জানেন, বিশ্বব্যাংকের সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটলে, তাদের মুরব্বীদের ইশারা না পেলে-তারা কত নি¤œ পর্যায়ে যেতে পারে। তার উদাহরণ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে রয়েছে। তারা যে কাউকে অপদস্থ করতে পারে।

আপনি জানেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ বর্তমান সরকারের একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ সেতু দ্রুত নির্মাণে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমি কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অংশীদার।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রথম থেকেই স্বচ্ছতা, সততা ও জবাবদিহি শত ভাগ নিশ্চিত করে কাজ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের ডকুমেন্টে তা প্রতিফলিত। এক্ষেত্রে কোন দুর্নীতি, অবৈধ পথ অবলম্বন করার সুযোগ ছিল না। প্রতিটি পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে অনুমোদনে বিশ্বব্যাংক কখনো দুর্নীতির অভিযোগ করেনি।

মূল সেতুর কাজের উপদেষ্টা নিয়োগ এবং দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে শেষের দিকে হঠাৎ কাল্পনিক ও অসত্য দুর্নীতির কথা বলে বিশ্বব্যাংক। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা কল্পনাপ্রসূত ও বিদ্বেষমূলক এ অভিযোগ করে।

যেখানে বিশ্বব্যাংকের একটি টাকাও ছাড় হয়নি-সেখানে দুর্নীতি হয় কিভাবে? ইতোমধ্যে দুদক মূল সেতুর দরদাতা নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করেছে এবং দুদকের রিপোর্টে কোন ধরনের দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি।

মূলত একটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপের অপপ্রচারে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ সর্ম্পূণ কল্পনাপ্রসূত।

এই কল্পনাপ্রসূত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে ‘রাজনীতি নিয়ে আপনার নিজস্ব ভাবনা’ লেখা হয়েছে। আমি সামগ্রিক বিবেচনায় মনে করি, ঠুনকো ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগের অজুহাতে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ নির্মাণে ঋণদান স্থগিত করা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের কারসাজির ফল।

প্রসঙ্গত আপনাকে জানাতে চাই যে, এ বছর এপ্রিল মাসে চীনে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন-২০১২-তে সংস্থাটির বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে আমি যোগদান করি। অনুষ্ঠানটি চলাকালীন সময়ে সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রবার্ট বি. যোয়েলিক-এর সাথে আমার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। তাঁকে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে আমি একটি চিঠি দেই।

তাঁর অফিসের মাধ্যমে সম্প্রতি তিনি তার উত্তর দিয়েছেন। আমিও এর জবাব দিয়েছি। আমি মনে করি, এর ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে নেয়া বিশ্বব্যাংকের ভুল ধারণা দূর হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে আমার চিঠি, বিশ্বব্যাংকের উত্তর, আমার জবাবের চিঠির কপিগুলো মন্ত্রীত্বের গোপনীয়তার কারণে দেয়া সম্ভব হলো না।

আমি মনে করি, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমি শতভাগ স্বচ্ছ। বোয়াও ফোরাম এশিয়া সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সাথে তোলা দুটি ছবি সংযুক্ত করা গেল।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, সাকো ইন্টারন্যাশনাল লি. যা ১৯৭৫ সালে সৃষ্টি এবং জন্মলগ্ন থেকে সুনামের সাথে কাজ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর, কোনভাবেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কোন কাজে সাকো অংশগ্রহণ করেনি। এটা দিবালোকের মত সত্য।

আর আমি মন্ত্রী হওয়ার আগেই সাকো’র এমডি’র পদ থেকে পদত্যাগ করি। এগুলো অবহিত থাকা সত্ত্বেও, বারবার নতুন করে পুরাতন বিষয়বলী পাঠকের কাছে নিয়ে আসা কতটুকু যুক্তি সংগত। আমার সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, কোনক্রমেই আপনার লেখার বিষয়বস্তু হতে পারে না।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, কতিপয় মিডিয়া আমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত করতে সহায়তা করে আসছে। আগের মেয়াদে আমার বিরুদ্ধে দুটি পাসপোর্ট সংক্রান্ত অভিযোগ এনে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা হয়েছে। অথচ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এতে আমার কোন সম্পৃক্ত তা ছিল না।

আমার জনৈক কর্মকর্তার ভুলের জন্য বিষয়টি ঘটেছিল। তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলাম (পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট আমার হস্তগত হয়েছে, যা সংযুক্ত করা গেল)। তদন্তের অধিকতর স্বচ্ছতার জন্যই আমি তখন পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু এর জন্য পত্রিকাগুলো আমার প্রশংসা করেনি।

এবারও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সময় যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস রুম সংস্কারে আনুমানিক ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ব্যয় করেছে বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। অথচ বিষয়টি নিয়ে, কতিপয় পত্রিকা অনেক অনেক বাড়িয়ে লিখেছে।

এ নিয়ে প্রতিবেদন, কার্টুন, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় ছেপে আমার বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে। একইভাবে যোগাযোগমন্ত্রীর বিলাসবহুল গাড়ি কেনা নিয়ে (যে গাড়ি কেনা হয়নি) পত্রিকা লিখেছে। আমার ট্যাক্স প্রদত্ত অর্থ দিয়ে আমার গ্রামের বাড়ী কালকিনিতে নির্মিত ‘অতিথি ভবন’ নিয়ে পত্রিকা ব্যানার হেড করেছে।

আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লেখাদুটি পাসপোর্ট, যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য নতুন গাড়ি ক্রয় এবং কালকিনিতে আমার বাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি অসত্য প্রতিবেদনগুলোর উত্থাপিত বিষয়গুলো ইতোমধ্যে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।

এসব অসত্য, কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ টেনে পরিকল্পিতভাবে বারবার আমাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। অথচ আমার জীবন পুরোপুরি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, আমি সততা, নিষ্ঠা স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করি। আমি সারা জীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এসেছি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্বও পালন করেছি। আল্লাহর রহমতে সমাজে নিজেকে সৎ, পরিশ্রমী ও কর্মঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি।

অনেকে অর্থ উপার্জন করে আরামে-আয়েসে দিন কাটায়, কলকারখানা বানায়, অনেকে টাকা আয়বর্ধনশীল কর্মসূচীতে বিনিয়োগ করে। আমি সৎ উপায়ে অর্জিত আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আর্তমানবতার সেবা করেছি, করে যাচ্ছি।

প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে আমার কষ্টলব্দ উপার্জিত অর্থ ব্যয় করেছি। আমি বিশ্বাস করি, ‘মাথা ছাড়া দেহের যেমন দাম নেই, শিক্ষা ছাড়া জাতির কোন মূল্য নেই।’ এই বিশ্বাস থেকে আমি শিক্ষাপ্রসারে আমার সাধ্যমত কাজ করে চলেছি।

আমর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন দেখতে আসে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সুধীজনরা এসেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের মত সাহিত্যিকও এসেছিলেন আমার এলাকায়, আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

তাঁরা আমার শিক্ষাকার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। বিমোহিত হয়েছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, তারা অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন।

শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখার জন্য আমি দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের স্বাধীনতা দিবসে আমাকে পুরস্কার প্রদান করে। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা হলে ভাইস চ্যাঞ্চেলরের হাত থেকে আমি এ পুরস্কার গ্রহণ করি।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, মাদারীপুর, কালকিনিতে আমার গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেখার জন্য আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার গুণগত মান, অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী (যারা অনেকেই আপনার সহকর্মী) ও শিক্ষার পরিবেশসহ যাবতীয় কার্যক্রম দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন, আমি কীভাবে দেশের শিক্ষাপ্রসার ও উন্নয়নে কাজ করেছি।

সমসাময়িক কালে এভাবে শিক্ষাপ্রসারে কাজ করা লোকের সংখ্যা খুবই কম। আপনি আপনার লেখায় আশাবাদী হয়ে লিখেছেন, আমাদের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে। লেখাপড়ার মধ্যে একটা বিপ্লব শুরু হতে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশ যা পারেনি আমরা সেটা পেরেছি।

মেয়েদেরকে ছেলেদের পাশাপাশি সমান জায়গায় নিয়েছি। আমি আপনার সেই আশাবাদী জায়গায় আমি ভিত রচনায় কাজ করেছি। আমি মনে করি, আমার প্রতিষ্ঠিত ৬টি কলেজ ও অসংখ্য বিদ্যালয় নিয়ে যদি আপনি একটি গবেষণা করেন তাহলে দেখবেন শিক্ষাপ্রসারে আমর অবদান কতটুকু।

স্বাধীনতার পর যারা এ যাবত শিক্ষার জন্য স্বাধীনতা ও একুশে পদক পেয়েছেন, তাদের সাথে আমার অবস্থান আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন।

শ্রদ্ধের অধ্যাপক, আমি প্রায় গত তিন বছর যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। তিন বছর আমি প্রচুর পরিশ্রম করেছি। প্রচুর কাজ করেছি। সরকারী প্রকল্পর জন্য প্রচুর বৈদেশিক সাহায্য চ্যানেলাইজ করেছি। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভগ, সেতু বিভাগ এবং বর্তমান রেল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে নানা কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

আমি যখন দায়িত্ব নেই, তখন সেতু বিভাগের বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায় ছাড়া কোন কাজ ছিল না। আমি দায়িত্বে এসে সেতু বিভাগের কার্যক্রমে গতি আনি। কার্যক্রম ত্বরান্বিত করি। মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু (মন্ত্রীসভা কমিটির ২০.৭.২০১১ তারিখের সভায় অনুমোদিত) নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করি। সেতু বিভাগকে একটি কর্মমুখর বিভাগে উন্নীত করি।

বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে যে প্রস্ততিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ২ বছর লেগেছে। সড়ক বিভাগের অধীনে ১৬০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয় যার মধ্যে ৪৪টি অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। অধিকাংশের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যে শেষ হবে।

অনুরূপভাবে রেলওয়ের উন্নয়নে ৪৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর অনেকগুলোর কাজ বাস্তবায়নাধীন। এসব উন্নয়ন কার্যক্রমের ফিরিস্তি আমি দেবো না। জোর দিয়ে বলতে পারি, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি গত তিন বছরে যে কাজ করে দিয়ে এসেছি, যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছি, সেসব প্রকল্পর কাজ শুরু হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে, সে কাজ ১০০ বছরের ভেতরে ৫ বছর মেয়াদি কোন সরকার করতে পারেনি।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমি সেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছি, বাস্তবায়ন করেছি, তা হবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইল ফলক এবং একটি ঐতিহাসিক দলিল। ক্রমান্বয়ে আমার সময়ে গৃহীত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। দেশের জনগণ, ঢাকাবাসী শীঘ্রই এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবেন। আর আমার কাজের মূল্যায়ন আপনারা, দেশবাসী করবেন।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, আমি কর্মজীবনে, ব্যবসায়িক জীবনে এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে সর্বদা স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও ইন্ট্রিগিটিতে বিশ্বাসী একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। কোনদিন, কোন সময়, আমি কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি। সরকারী নিয়ম-আইন ভঙ্গ করে কোন নথিতে স্বাক্ষর করিনি।

আমার কষ্টার্জিত, পরিশ্রমলব্ধ অর্থ গরীব-দুঃখী মানুষের উন্নয়নে, দেশের শিক্ষাবিস্তারে ব্যয় করেছি, করে চলেছি। অর্থ থাকলে অনেক মানুষের যে বদঅভ্যাসগুলোর সৃষ্টি হয় তাতে আমি জীবনে কখনো সম্পৃক্ত হইনি। আমার শত্রুরাও এ বিষয়ে বলতে পারবে না।

আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবদ্দশায় না হলেও আমার অবর্তমানে এ সব কাজের, আমার সরলতা, আমার সততা ও নিষ্ঠার এবং কর্তব্য ও দায়িত্ববোধের মূল্যায়ন হবে।

হেনরি ডেভিডের ভাষায়, আমি মনে করি, Goodness is the investment that never fails. সত্য, সততা, স্বচ্ছতা, ন্যায়পরাণয়তা, বিনয়, জবাবদিহি আমার কাজের শক্তি, আমার অহংকার, জানি না কেন, বারবার কলাম লিখে, গল্প বানিয়ে, রস দিয়ে, রং দিয়ে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে, সম্পাদকীয় লিখে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়, পাশাপাশি আমার সুনাম ক্ষুন্ন করা হয়।

আমি বিশ্বাস করি, আমার সামগ্রিক দায়িত্ব পালন, আমার সততা একদিন মিথ্যাকে চাপা দিবে এবং আমার সততার কাছে আপনারা লজ্জিত হবেন। আজ হোক, কাল হোক, সত্য একদিন উদঘাটিত হবেই।

শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, আপনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন সৎ, নির্ভীক ও আদর্শবান লোক বলে জানি। আমি আপনাকে আদর্শবান ও সৎ এবং মিথ্যার প্রতি আরো সোচ্চার দেখতে চাই। কিন্তু কোন কিছু লেখার আগে আপনারা এতটুকু ভাবেন না, এর প্রভাব একজন ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের ওপর কীভাবে পড়বে।

একজন ব্যক্তি কীভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়। আমি দেশের জন্য করি। ব্যক্তিস্বার্থকে কখনো টেনে আনি না। আপনি আপনার লেখায় আমাকে যে ভাবে চিত্রিত করেছেন-আমি আদৌ সে ধরনের ব্যক্তি নই।

আমার এ বক্তব্য আপনার পরবর্তী লেখায় স্থান পাবে-এ প্রত্যাশায়।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী

আরো পড়ুন

Comments to: অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us