সৈয়দ আবুল হোসেন
সংসদ সদস্য
২২০, মাদারীপুর-৩
(কালকিনি-মাদারীপুর)
তারিখ: ২৩ এপ্রিল ২০১৩

জনাব গোলাম রহমান
চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশন
সেগুনবাগিচা, ঢাকা।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
আপনি দেশের অন্যতম সিনিয়র সিটিজেন। সজ্জন ব্যক্তি। দেশে-অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনের লক্ষ্যে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন সম্মানিত অভিভাবক। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মেধাবী ব্যক্তি।

দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর থেকে কিছু স্বাতন্ত্রিক কাজ করে আপনি আপনার এই অভিজ্ঞতা ও মেধার পরিচয় দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। দুদকের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি আপনি এবং আপনার কমিশনই প্রথম ২৬ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহের প্রবর্তন করেছেন।

প্রবর্তন করেছেন দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। এবারই প্রথম ৫ জন বিশিষ্ট তারকা সাংবাদিক সেই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বলে পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।

আপনার কমিশন সারাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে সততা সংঘ গঠন এবং স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ/অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল গঠন; স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য দুর্নীতি বিরোধী থিম সং প্রণয়নসহ দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক আরও অনেক দৃশ্যমান কাজ শুরু করে গেছে-এসব কাজগুলোর মাধ্যমে আপনি দীর্ঘকাল সবার মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আমি মনে করি, এসব ইন্যুভেটিভ কাজ একজন মেধাবী, দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাধ্যমেই গ্রহণ করা সম্ভব। সে কারণে বলছি, আপনার কথা এবং আপনার সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে অনুসরণযোগ্য। আপনি দেশ-বিদেশের, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যক্রম, চালচিত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকেবহাল। পদ্মা সেতুর ঘটনাপ্রবাহও আপনার জানার মধ্যে রয়েছে।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি আপনাকে দৃঢ়তার সাথে অবহিত করতে চাই যে, আমি সারাজীবন স্বচ্ছতা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। সৎভাবে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করেছি। অসৎ পথে কখনো যাইনি, অসৎ পথে কোনো সম্পদ অর্জন করিনি।

অথচ কতিপয় পত্রিকায় নানা সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং সেইসাথে পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রমে বিশ^ব্যাংকের অসত্য অভিযোগে আমি আজ ক্ষত-বিক্ষত। এসব অভিযোগে আমি কোনোক্রমেই অভিযুক্ত নই।

আমি আপনার কাছে প্রত্যাশা করব দুদকের তদন্ত নিরপেক্ষভাবে সম্পাদিত হবে। আমি পদ্মা সেতুর কোনো কোনো অনিয়ম, দুর্নীতি ও এসএনসি-লাভালিনের মিসকন্ডাক্টের সাথে সম্পৃক্ত নই। দুদকের নিরপেক্ষ তদন্তে আমি অবশ্যই নির্দোষ প্রমাণিত হবইনশাল্লাহ।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি কোনোক্রমেই এসএনসি-লাভালিনের মিসকন্ডাক্টের সাথে সম্পৃক্ত নই। এসএনসি-লাভালিনের যেসব কর্মকর্তা সৌজন্যভাবে আমার সাথে দেখা করেছেন-তারা বলতে পারবেন না আমি তাদের কাছে অনৈতিক দাবি করেছি।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, যিনি তাদের সাথে আমার দেখা করিয়েছেন-তিনিও বলতে পারবেন না যে আমি কারো সাথে কোনো অনৈতিক দাবি করেছি। কাজেই এসএনসি-লাভালিনের কোনো কর্মকর্তার সাথে অনৈতিক দাবির প্রশ্ন অবান্তর, অসত্য ও প্রতারণা।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, কেউ যদি ডায়রিতে কোনকিছু লিখে থাকে-তা প্রমাণ করে না যে, আমি কারো কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করেছি। এসএনসি-লাভালিন ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার ইচ্ছা পোষণ ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারে; এর অর্থও এই নয় যে, আমি তাদের ইচ্ছায় সাড়া দিয়েছি।

কেউ অনৈতিক প্রস্তাব নিয়েও আমার কাছে আসেনি। অনৈতিক দাবি নিয়ে কোনও কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়নি এবং কথা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে কথিত কোনো অনিয়ম, ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নই।

আমি শুধুমাত্র দেশের প্রচলিত কালচার ও ভদ্রতা অনুযায়ী মন্ত্রী হিসেবে উন্মুক্ত বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। একই সৌজন্যতার দাবিতে বিভিন্ন প্রতিযোগী দেশের রাষ্ট্রদূতগণের সাথে বিভিন্ন সময় কথা বলেছি।

এই সৌজন্য সাক্ষাতের সুবাদে কেউ যদি ব্লাকমেইল করে, আমার নাম ভাঙিয়ে অনৈতিক কোনও কিছু দাবি করে থাকে, সেজন্য আমাকে দায়ী এবং অভিযুক্ত করা যথাযথ কাজ হবে না। অনেক সময় পত্রিকায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে চাঁদাবাজির খবর দেখা যায়-এর অর্থ এই নয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চাঁদাবাজ।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি জানেন, এসএনসি-লাভালিন শুধু বাংলাদেশে নয়; লিবিয়া, ভারত, কম্বোডিয়ায় ব্যবসা করতে গিয়ে অসদাচরণ করেছে। পদ্মা সেতুসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটির সাথে বিশ্বব্যাংকের সমঝোতার ভিত্তিতে এসএনসি-লাভালিন দোষ স্বীকার করেছে এবং শাস্তি মেনে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, এ সমঝোতা হয়েছে শর্তসাপেক্ষে এবং শর্ত গোপনীয়। কতিপয় পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, এসএনসি-লাভালিনের রমেশ শাহ ও ইসমাইলের মধ্যে একজন রাজসাক্ষী হচ্ছেন-এটা গোপনীয় শর্তের একটা কিনা-কে বলবে? বিশ্বব্যাংক ও এসএনসি-লাভালিনের সমঝোতায় প্রমাণ হয় না যে, আমি পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার সাথে সম্পৃক্ত।

এ ধরনের একটি সেনসেশনাল, অসত্য ও বানোয়াট খবর প্রচার করে কতিপয় পত্রিকা আমার এবং বাংলাদেশের ভাবর্মূতি ক্ষুন্ন করছে। সরকারকে একটি অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত করতে চাইছে। মিডিয়ার ওই সংবাদ দুদকের উপরও চাপ সৃষ্টি করছে বলে আমি মনে করি।

কিন্তু দুদক সচেতন থাকলে, আইনের মধ্যে থেকে তার দায়িত্ব পালন করলে, আশা করি, মিডিয়ার চাপের কাছে মাথানত করবে না। মিডিয়ার উদ্দেশ্যমূলক অসত্য সংবাদে দুদক বিভ্রান্ত হবে না।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের ওপর বিশ্বব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও এসএননি-লাভালিনের ‘মিসকন্ডাক্ট’ বিষয়ে দোষ স্বীকারের সূত্র ধরে দেশের অধিকাংশ পত্রিকা অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

পত্রিকাগুলো কাল্পনিকভাবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বের অসত্য অভিযোগ টেনে এনে আমার নাম ব্যবহার করে লাল অক্ষরে ব্যানার করেছে। কারো সাথে হোটেলে বৈঠক, কারো মুখোমুখি কথা বলা, ডিনার করা ইত্যাদি কল্পনাপ্রসূত বিষয় নতুনভাবে সংযুক্ত করে খবর প্রকাশ করেছে। অথচ আমি কারো সাথে এককভাবে বৈঠক করিনি, কারো সাথে কোনো হোটেলে দেখা করিনি।

কোনো ক্লাবে কারো সাথে ডিনার করিনি। উল্লেখ্য, আমি কোনো ক্লাবের মেম্বার নই। কোনো ধরনের ক্লাবে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। তবুও কতিপয় পত্রিকা রিপোর্ট প্রকাশ ও সম্পাদকীয় লিখে যেন আমাকে দোষী সাব্যস্ত ও বিচার ট্রায়াল করে ফেলেছে।

এ ধরনের খবর ইতিপূর্বেও প্রকাশ করে আমাকে অনাহুত ও পরিকল্পিতভাবে পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির আশঙ্কার সাথে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।

বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও; বিবৃি দিয়ে, চিঠি দিয়ে সত্য ঘটনা জানানো হলেও একইভাবে নেতিবাচক খবর প্রকাশ অব্যাহত রাখা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিমূলক এবং সাংবাদিকতার নৈতিকতাকে অমান্য করার শামিল বলে আমি মনে করি।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি জানেন, পিপিআর অনুযায়ী এবং বাস্তবে মন্ত্রী ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ নয়। চূড়ান্ত অনুমোদনকারীও নয়। মন্ত্রী মূল্যায়ন কমিটির কোনো সদস্যও নয়। মূল্যায়নের কর্তৃপক্ষ ও চূড়ান্ত সুপারিশকারী হলো ‘টিইসি’ কমিটি।

আর চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তাই কোনো প্রকল্পে মন্ত্রী কাউকে সহায়তা করতে চাইলে মন্ত্রীকে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের দ্বারস্থ হতে হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির কোনো সদস্য বলতে পারবে না, সাক্ষী দিতে পারবে না যে, আমি কাউকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে তদবির করেছি। কাজেই পরামর্শক নিয়োগে আমাকে জড়ানো একটি ষড়যন্ত্র, একটি অপচেষ্টা। আমি এক্ষেত্রে কোনো অনিয়মে সম্পৃক্ত নই।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি জীবনে কারো অপকার করিনি। কারো বিরুদ্ধে গিবত করিনি। কারো চরিত্র হনন করিনি। কাউকে গালাগাল করিনি। কারো বিরুদ্ধে মন্দ বলিনি। কারো বিরুদ্ধে অশোভন কথা বলিনি। কারো কোনো ক্ষতি হোক-এরকম কাজ করিনি।

জীবনে অন্যায় ও অসত্যের পথে হাঁটিনি। সাম্প্রতিককালে অনেকে আমাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, পদ্মা সেতুর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না। পদ্মা সেতুর অতীত ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যাবে, পদ্মা সেতুর কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত হয়েছে।

যেখানে ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর’ প্রস্তুতিকাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ২ বছরে সে কাজ শেষ করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি ষড়যন্ত্র পদ্মা সেতুকে ২০১৩ সালে চালু করার পথকে রুদ্ধ করেছে।

এছাড়া আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে বিগত তিন বছরে যে কাজ করেছি, ১০০ বছরের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি যে-কেনো সরকারের সময় তা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে যে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন হচ্ছে, কার্যক্রম চলছেÑতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার প্রচেষ্টায় গৃহীত প্রকল্প।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, আমি যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর অভিযোগ তৈরির সেই স্বার্থান্বেষী মহল থেমে ছিল না। তারা বরাবরই আমার খুঁত ধরার কাজে লেগেছিল। বেনামি চিঠি অব্যাহত ছিল।

কতিপয় পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে অসত্য রিপোর্ট প্রকাশও অব্যাহত রেখেছিল। অতীতের অসত্য রিপোর্টগুলো কতিপয় পত্রিকা নতুনভাবে প্রকাশ করে। কোনো এক বিশিষ্ট সাংবাদিক আমাকে অবহিত করেছিলেন, পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে যেসব অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, বাংলা পত্রিকার সংবাদ ইংরেজি অনুবাদ করে ও ইংরেজি পত্রিকার কাটিংসহ বিশ্বব্যাংকে এবং কানাডার পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।

শেষাবধি বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে আশঙ্কা টেনে এনে মিথ্যা অভিযোগে সেতু নির্মাণে অর্থায়ন স্থগিত করে। পদ্মা সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করে। সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি, কিন্তু দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় ঋণসহায়তা বন্ধ বিশ^ব্যাংকের ইতিহাসে, পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম। আমি মনে করি, বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক হয়নি।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পৃথিবীর বড় আদালত মানুষের বিবেক। আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। আমি আমার বিবেকের সেই আদালতেও পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন। সারাজীবন স্বচ্ছতা ও সততার সাথে কাজ করেছি।

কারো সমালোচনার ভয়ে নয়; নিজের বিবেকের কাছে, নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে কাজ করেছি। সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনাকে এ চিঠি লেখা কতটুকু সমীচীন হয়েছে জানি না। তবে আপনাকে সত্য ঘটনা জানানো এবং আমার বিবেকের তাড়নায় এ চিঠি লেখা। আমি আপনার সুস্বাস্থ্য, সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি

আরো পড়ুন

Comments to: গোলাম রহমানের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us