সৈয়দ আবুল হোসেন
সংসদ সদস্য
২২০, মাদারীপুর-৩
(কালকিনি-মাদারীপুর)
তারিখ: ১৯ এপ্রিল ২০১৩
জনাব এম কে আনোয়ার
মাননীয় সংসদ সদস্য
২৩৬, নিউ এলিফ্যান্ট রোড
ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫
শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে অসদাচরণের জন্য কানাডীয় পুরকৌশল ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে ১০ বছরের জন্য বিশ্বব্যাংক নিষিদ্ধ করার বিষয়ে গতকাল গণমাধ্যমে দেয়া আপনার বক্তব্য আমি শুনেছি।
যে ভাষায়, যে বাক্যবিন্যাসে আপনি কথা বলেছেন, তা আপনার মতো দীর্ঘ প্রশাসন-অভিজ্ঞ ও রাজনীতি করা ব্যক্তির কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না। আপনার কথাগুলো ছিল কটাক্ষপূর্ণ ও শ্লেষাত্মক।
আপনি অবজ্ঞাভরে আমার নাম ধরে ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দিয়ে কথা বলেছেন। আমি আপনাকে একজন সৎ ও ইতিবাচক কর্মকর্তা এবং প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে শ্রদ্ধা করি। আপনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রী ছিলেন।
আপনার মতো কোনো অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কারো ব্যক্তিচরিত্র হরণ করে, কাউকে ইচ্ছেমাফিক কটাক্ষ করে কথা বলতে পারেন না, যা নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। অথচ প্রতিনিয়ত আপনি অসত্য তথ্য দিয়ে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন। এটা কাম্য নয়।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, অসত্য সংবাদ পরিবেশন করা ও সেই অসত্য তথ্যকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে আলোচনা করা; বক্রভাবে, অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করে কারো চরিত্রহরণ করা-জীবন্ত মানুষকে খুন করারই শামিল। আপনি প্রতিনিয়ত সেই কাজটিই করে চলেছেন। একটু গভীরে চিন্তা করলে, মানবিক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে,আপনি বিষয়টি সহজেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি জীবনে কারো অপকার করিনি। কারো বিরুদ্ধে গিবত করিনি। কারো চরিত্র হনন করিনি। কাউকে গালাগাল করিনি। কারো বিরুদ্ধে মন্দ বলিনি। কারো বিরুদ্ধে অশোভন কথা বলিনি। কারো কোনো ক্ষতি হোক-এরকম কাজ করিনি। জীবনে অন্যায়ের পথে হাঁটিনি।
ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সরকারি কাজে অনিয়ম করিনি। তবুও নানা ষড়যন্ত্রের কারণে আজ আমাকে আপনার আলোচনার মাধ্যমে, কতিপয় পত্রিকা অসত্য খবর ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রকাশ করে, আমাকে ভিলেন বানিয়েছেন। বলতে পারেন আমি এজন্য কার কাছে প্রতিবাদ করব?
আপনাদের কাছে, পত্রিকার কাছে নানাভাবে আমার কথাগুলো, সত্য কথাগুলো জানানোর পরও আপনারা, পত্রিকাওয়ালারা সত্য পথে আসছেন না, আমার কথা বিশ্বাস করছেন না। তাহলে আমি এর প্রতিকার পাব কোথায়?
এখন তাহলে ভরসা একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালা, যিনি আমাদেরও সৃষ্টি করেছেন, আমাদের আহার জোগাচ্ছেন এবং আমাদের হেদায়েত করার ক্ষমতা রাখেন। তাই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ তুমি মিথ্যা সমালোচকদের হেদায়েত করো এবং সত্যের পথ দেখাও।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল, একটি নির্দিষ্ট অযোগ্য কোম্পানিকে মূল সেতু নির্মাণে কোয়ালিফাই করার জন্য বিশ^ব্যাংকের চেষ্টা, বিশ্বব্যাংক প্যানেলের কার্যক্রম এবং আমার অনিয়ম না-থাকা সত্ত্বেও পরামর্শক নিয়োগের কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে শুধুমাত্র আমাকে অভিযুক্ত করলেই ঋণ পাওয়ার বিশ্বব্যাংকের নিশ্চয়তা-এ সবকিছু প্রমাণ করে আমি এবং বাংলাদেশ একটি বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার।
আমি এটা নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাই, আমি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির (টিইসি) সুপারিশকৃত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান-এসএনসি-লাভালিনের কোন কর্মকর্তার সাথে এককভাবে কখনো দেখা করিনি। কোন কর্মকর্তার সাথে দরকষাকষি ও অনৈতিক পার্সেন্টেইজ দাবির প্রতি অবান্তর, অসত্য ও প্রতারণা।
তাছাড়া, কেউ যদি তার ডাইরিতে কোনো পার্সেন্টেইজের বিষয় লিখে থাকেÑতা প্রমাণ করে না যে আমি তার কাছে অনৈতিক দাবি করেছি। আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে কথিত কোনো অনিয়ম, ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির সাথে জড়িত নই। এসএনসি-লাভালিন ঘুষ দিয়ে কাজ পাওয়ার ইচ্ছে পোষণ ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়ে থাকতে পারে-এর অর্থ এই নয় যে, আমি তাদের ইচ্ছেয় সাড়া দিয়েছি।
তারা এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো প্রস্তাব দেয়নি, প্রস্তাব দেয়া অবান্তর। আমি এ ব্যাপারে তাদের সাথে কোন কথা বলিনি। এ ধরনের অনৈতিক ইচ্ছে কখনো আমার মধ্যে জাগেনি, জাগার প্রশ্ন আসে না।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন করেছি। আমি নিয়মিত সরকারকে ট্যাক্স দিই। আমি দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলি। সৎভাবে ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন কি অন্যায়? দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরে আমি বর্তমান অবস্থানে এসেছি। রাজনীতি করি।
এর অর্থ এই নয়, সব ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা অন্যায় পথে চলেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদও যে সৎ ও নৈতিকতাসম্পন্ন লোক হতে পারেন-তা কি বিশ্বাসযোগ্য নয়? শুধুমাত্র বিদেশি বা বিদেশি সংস্থা বিশ্বব্যাংক কিছু বললে সত্য হবে, আর আমরা বললে সত্য হবে না-এ মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। আমরাও পারি। আমরা সততা ও স্বচ্ছতার অধিকারী। আমি স্বচ্ছ ও সৎ মানুষ-এটা উচ্চস্বরে বলতে পারি।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, টিভি আলোচনা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্য ও কথাবার্তায় মনে হয়, বিশ^ব্যাংকের অভিযোগে আমাকে সম্পৃক্ত না করলে-দুদক স্বচ্ছতা পাবে না। বিশ্বব্যাংকের প্যানেলেরও বক্তব্য ছিল-আমাকে সম্পৃক্ত করলেই ঋণসহায়তা পাওয়া যাবে।
এটি কি শোভনীয়, এটি কি দাদাগিরি নয়? আমি অন্যায়, অনিয়ম করিনি-তবুও কেন কারো দাদাগিরি আমার ওপর ফলবে? বিষয়গুলো ভাবার সময় এসেছে। একটু ভাবুন, একটু ভাবার অনুরোধ করছি।
তবে আমি আপনাকে আবারো নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি, পদ্মা সেতুর কোন কার্যক্রমে আমি কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। কারো কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করিনি। এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ ছিল-সৌজন্যতার, যেভাবে অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূতগণ আমার সাথে এ বিষয়ে দেখা করেছেন।
পদ্মা সেতুর বিষয়ে পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে, বিশ^ব্যাংক যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে-তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নির্দোষ।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, ১৯৯০-তে দেশে পুনঃগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসলে আমি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। এ সময় আমি লক্ষ্য করেছি, রাজনীতিতে আসার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে বেনামি লেখা, পত্রিকায় যেনতেন বিষয়ে অসত্য খবরের দাবদাহ।
আপনার বিএনপির সরকারের আমলে এসব বিষয়ে সরকার তদন্ত করে। তদন্তে কিছু পায়নি। পরবর্তী আমাদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বিভিন্ন সময়ে অসত্য খবর প্রকাশিত হয়। এসব খবর দিয়ে ২০০১ সালে আপনার বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে একটি শ্বেতপত্র বের করে, যার অধিকাংশ পাতা জুড়ে ছিল-আমার বিরুদ্ধে পত্রিকার অসত্য খবর।
এ নিয়ে বিএনপি সরকার ৫ বছর তদন্ত করে। তদন্তে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এরপর আসে ভয়ংকর ১/১১। এ সময়ে আমার জন্ম থেকে ১/১১ এর আগ পর্যন্ত পত্রিকার খবর ও বেনামি চিঠি ও বিএনপি’র শ্বেতপত্রের ওপর তদন্ত হয়। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, এবার যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর অভিযোগ তৈরির সেই স্বার্থান্বেষী মহল থেমে ছিল না। তারা বরাবরই আমার খুুঁত ধরার কাজে লেগেছিল। বেনামি চিঠি অব্যাহত ছিল। মন্ত্রীর অফিস সংস্কার, নতুন গাড়ি ক্রয়, সড়ক দুর্ঘটনা, সড়ক সংস্কার ইত্যাদি নিয়ে অসত্য খবর প্রকাশ অব্যাহত ছিল। শেষাবধি পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা টেনে এনে মিথ্যা অভিযোগে সেতু নির্মাণ বিলম্বিত করে।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি আগেই বলেছি, ১/১১-এর ভয়ংকর সরকারের তদন্তে আমার জন্ম থেকে ১/১১ পর্যন্ত উত্থাপিত অভিযোগে আমি নির্দোষ বলে প্রমাণিত হই। আমি চাই, এবার সরকারের আসার পর কতিপয় পত্রিকায় যেসব মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে (পদ্মা সেতুসহ), সে সম্পর্কে একটি তদন্ত হোক।
তদন্তে নিশ্চয়ই আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব। কারণ, আমি কোনো দুর্নীতি, কোনো অনিয়ম করিনি। আমি সব সময় সত্যের পথে হেঁটেছি।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ। আপনার বিবেক আছে, বুদ্ধি আছে-দেশ শাসন পরিচালনায় অভিজ্ঞতা আছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। সমাজ, দেশ উন্নয়নে আপনার অবদান স্বীকৃত।
আমি আশা করি, আপনি যে সাহসিকতা নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করছেন, সেই সাহসিকতা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রচারিত অপপ্রচার বন্ধে উদ্যোগী হবেন, ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন। আমার সততাকে, আমার স্বচ্ছতাকে উচ্চকিত করতে সাহায্য করবেন-এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
আমি আপনার সহযোগিতা চাই। আপনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
অনুলিপি
১. ড. দেবপ্রিয় ভট্টচারিয়া
উপদেষ্টা, সেন্টার ফর পলিসি ডাইলগ (সিপিডি)
ঢাকা।
২. ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা
বিশিষ্ট আইনজীবী, ঢাকা।
৩. ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, ঢাকা।
৪. জনাব শামসুজ্জামান দুদু
চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, ঢাকা।
আরো পড়ুন
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২
- আমার দেশ সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ওবায়দুল কাদেরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩
- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি
- আকিদুল ইসলামের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৪
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হেসেনের চিঠি
- ড. ইফতেখারুজ্জামানের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৫
- ড. কামাল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- কাজী সিরাজের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
No Comments
Leave a comment Cancel