সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ১৮ জানুয়ারি ২০১২

জনাব মতিউর রহমান
সম্পাদক
দৈনিক প্রথম আলো
কাওরান বাজার
ঢাকা।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক,
আজকে একটি দুঃখবোধ নিয়েই আপনাকে লিখছি। জানি, আমার এ লেখার কোনো গুরুত্ব, কোনো সহানুভূতি আপনার মনে হয়তো জাগাবে, হয়তো জাগাবে না। আমি লক্ষ্য করেছি যে, কোনো প্রকাশিত সংবাদের কোন প্রতিবাদ সাংবাদিকতার Ethics মেনে অনেক সময় আপনারা তা ছাপেনও না।

এর আগে আপনার পত্রিকায় প্রকাশিত অসত্য সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। কখনো সংশোধন করে ছাপিয়েছেন। কখনো ছাপেননি। কখনো আপনার সাথে কথা বলতে চাইলে, আলোচনা করতে চাইলে, বিষয় সম্পর্কে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে আপনাকে অবহিত করতে চাইলে, আপনি এড়িয়ে গেছেন।

আমি জানি, সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর সাংবাদিকতার গুরুত্বের কারণে মিডিয়ার অনেক দায়িত্ব, অসীম ক্ষমতা। প্রবাদ আছে, ‘A government reigns for 4 or 5 years, but journalism governs for ever and ever.’ যে কারণে আপনারাও এক্ষেত্রে অসীম ক্ষমতা ভোগ করেন।

আপনারা সমাজে কারো প্রতিষ্ঠিত মর্যাদা ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে পারেন। আবার অনেককে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তাও করতে পারেন। সমাজের উন্নয়ন, দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারেন।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনি ভাবছেন একথা কেন আমি লিখছি। কারণ, আমি এর ভুক্তভোগী। আপনাদের লেখনীর কারণে আজ আমি দুর্নীতি না করে, অন্যায় ও অবৈধ কাজ না করেও অন্যায়কারী হিসেবে, সমাজে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে, আপনারা আমাকে চিহ্নিত করার প্রয়াস নিয়েছেন।

অথচ আমি সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এসেছি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্বও পালন করেছি। আল্লাহর রহমতে সমাজে নিজেকে সৎ ও কর্মঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। অনেকে অর্থ উপার্জন করে আরামে-আয়েশে দিন কাটায়, কলকারখানা বানায়, অনেকে টাকা আয়-বর্ধনশীল কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করে।

আর আমি সৎ উপায়ে অর্জিত আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে আর্তমানবতার সেবা করে যাচ্ছি। প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মাথা ছাড়া দেহের যেমন দাম নেই, শিক্ষা ছাড়া জাতির কোনো মূল্য নেই। এই বিশ্বাস থেকে আমি শিক্ষাপ্রসারে আমার সাধ্যমতো কাজ করে চলেছি।

আমার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দেশ-বিদেশ থেকে লোকজন দেখতে আসে। আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সুধীজনরা এসেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সাহিত্যিকও এসেছিলেন আমার এলাকায়, আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তাঁরা আমার শিক্ষা কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন, বিমোহিত হয়েছেন।

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যারা শিক্ষাগ্রহণ করেছেন, তারা অনেকেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখার জন্য আমি দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের স্বাধীনতা দিবসে আমাকে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করে। এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা হলে ভাইস-চ্যাঞ্চেলরের হাত থেকে আমি এ পুরস্কার গ্রহণ করি।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমি কর্মজীবনে, ব্যবসায়িক জীবনে এবং সরকারি দায়িত্ব পালনে সর্বদা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইন্ট্রিগ্রিটিতে বিশ্বাসী একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। কোনদিন, কোনো সময়, আমি কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিইনি।

সরকারি নিয়ম-আইন ভঙ্গ করে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করিনি।। আমার কষ্টার্জিত, পরিশ্রমলব্ধ অর্থ গরিব-দুঃখী মানুষের উন্নয়নে, দেশের শিক্ষাবিস্তারে ব্যয় করেছি, করে চলেছি। অর্থ থাকলে অনেক মানুষের যে বদঅভ্যাসগুলোর সৃষ্টি হয়-তাতে আমি জীবনে কখনো সম্পৃৃক্ত হইনি।

আমার শত্রুরাও এ বিষয়ে বলবে না। আমি বিশ্বাস করি, আমার জীবদ্দশায় না হলেও আমার অবর্তমানে এসব কাজের, আমার simplicity, আমার সততা ও নিষ্ঠার এবং কর্তব্য ও দায়িত্ববোধের মূল্যায়ন হবে। হেনরি ডেভিডের ভাষায়, আমি মনে করি, Goodness is the investment that never fails.

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, জানি না, কেন, প্রথম আলোসহ কতিপয় পত্রিকার সাংবাদিক বন্ধুরা আমার এই পরিচ্ছন্ন চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছেন। অনেক লেখালেখি করেছেন। আমার বিরুদ্ধে দুটি পাসপোর্ট সংক্রান্ত অভিযোগ এনে বিস্তর লিখেছেন।

অথচ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এতে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। জনৈক কর্মকর্তার ভুলের জন্য বিষয়টি ঘটেছিল। তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলাম। অধিকতর স্বচ্ছতার জন্যই আমি তখন পদত্যাগ করেছিলাম।

এজন্য সাংবাদিক বন্ধুরা আমার প্রশংসা করেননি। এবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সময় যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস নিয়ে বড় গল্প ফেঁদে লিখেছেন। যোগাযোগমন্ত্রীর অফিসরুম সংস্কারে আনুমানিক ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল।

কিন্তু পত্রিকায় আপনারা ১ কোটি ২০ লাখ ব্যয়ের কথা লিখে। এ নিয়ে প্রতিবেদন, কার্টুন, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ছেপেছেন। আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। একইভাবে যোগাযোগমন্ত্রীর বিলাসবহুল গাড়ি কেনা নিয়ে (যে গাড়ি কেনা হয়নি) লিখেছেন। কার্টুন ছেপেছেন।

আমি আমার আয়ে, Tax paid money দিয়ে ২০০৫ সাল থেকে আমার গ্রামে, কালকিনিতে শেখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ সংলগ্ন যে অতিথি-ভবন নির্মাণ করেছি-যার কাজ এবছর সমাপ্ত হয়েছে, যে বাড়িতে আমি এখনো বসবাস করিনি, সে-সম্পর্কেও প্রথম আলো পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যনার হেডে, বাড়ির ছবি দিয়ে আমার সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ রচনা লিখেছেন।

আমার নির্বাচনী এলাকায় জনসভা করলেও তা নিয়ে নেতিবাচক গল্পের অবতারণা করেছেন। এছাড়া, নামে-বেনামে চিঠি দিয়েও কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী মহল আমার সম্পর্কে wrong perception সৃষ্টি করেছে।

অব্যাহত ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমার সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা একটি wrong perception, প্রথম আলোসহ, কোনো কোনো পত্রিকার কিছু সাংবাদিক বন্ধুরা, জনমনে গড়ে তুলতে প্রয়াস পেয়েছেন।

অনুমাননির্ভর ধারণার ওপর ভিত্তি করে কোনো প্রতিবেদন লেখা, সৎ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে, এমনকি নৈতিকতার প্রশ্নেও সমর্থনযোগ্য নয়।

আর আপনাদের এ অনুমাননির্ভর লেখা এবং তাতে গড়ে ওঠা wrong perception-এর ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে একটি কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে, less than honest ধারণার ভিত্তিতে, একটি অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমার বিরুদ্ধে আপনাদের পত্রিকায় লেখা দুটি পাসপোর্ট, যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, যোগাযোগমন্ত্রীর জন্য নতুন গাড়ি ক্রয় এবং আমার গ্রামে ‘অতিথি ভবন’ নির্মাণে আপনাদের অসত্য প্রতিবেদনগুলোর উত্থাপিত বিষয়গুলো ইতিমধ্যে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাকের অনুমাননির্ভর অভিযোগের ভিত্তিতে দেশে এবং দেশের বাইরে তদন্ত হচ্ছে। এবং গভীরে গিয়ে তথ্য উদ্ঘাটনসহ এর সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, এ সেতু নির্মাণে, আমি সর্বাধিক স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কাজ করেছি।

পদ্মা সেতু নির্মাণে আমার হাত দিয়ে কোনো অনিয়ম ও কোনো দুর্নীতি হয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো ঠিকাদার এখনও নির্বাচিত হয়নি। কোনো কার্যাদেশ দেয়া হয়নি।

দাতা সংস্থাদের কোন অর্থ ছাড় হয়নি। সেক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রশ্ন অবাস্তব, অবান্তর। অন্য কথায়, যে গাছের বীজ রোপণ করা হয়নি, সে গাছে কীভাবে ফল পাকে এবং তা কাকে খায়- কীভাবে তা বিশ্বাসযোগ্য হয়।

আমি বিশ্বাস করি, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে অনুমান নির্ভর অভিযোগ করেছে- তাও তদন্তে অসত্য প্রমাণিত হবে। এ অসত্য অভিযোগের জন্য বিশ্বব্যাংক একদিন লজ্জিত হবে, দুঃখ প্রকাশ করবে।

কাল্পনিক ও অনুমাননির্ভর অভিযোগগুলো অসত্য প্রমাণিত হবেই। Truth shall prevail আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব ইনশাল্লাহ।

শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমি আজও জানি না, আপনারা কেন, কতিপয় মিডিয়া কেন আমার বিরুদ্ধে অনুমাননির্ভর অসত্য লেখার ক্যাম্পেইন শুরু করলেন।

জানি না, কেন আপনারা অসত্য খবরগুলোকে হাইলাইট করে, আপনাদের মিডিয়ার ক্ষমতা ও সুযোগ ব্যবহার করে, আমাকে অহেতুক বিতর্কিত করলেন।

আমার পরিচ্ছন্ন চরিত্রকে বিতর্কিত ও জনমনে বিরূপ ধারণা পোষণে সহায়তা দিলেন। অনেক শ্রদ্ধেয় সুধীজন শহীদ মিনারের মতো পবিত্র জায়গায় দাঁড়িয়েও অনুমাননির্ভর অভিযোগ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন।

আল্লাহ আমাদের মুখ দিয়েছেন কথা বলার জন্য। চোখ দিয়েছেন দেখার জন্য। কান দিয়েছেন শোনার জন্য। বিদ্যা দিয়েছেন শেখার জন্য। আল্লাহ প্রদত্ত মুখ, কান, চোখ ও বিদ্যাকে মানুষের উপকারে, মানুষের সেবায় ও সৎকাজে ব্যবহার করা আমাদের সকলের অবশ্যকর্তব্য বলে আমি বিশ্বাস করি।

কেউ যদি আমায় কোনো অপবাদ দেয়, আমার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে, তা আমি আমার নিজ ব্যবহার ও কাজ দ্বারা প্রতিবাদ করি। এটি আমার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। আমি কাউকে নিন্দা করি না।


শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমি বিশ্বাস করি, আপনার দক্ষতা আছে, বুদ্ধি আছে, জ্ঞান ও পেশাগত অভিজ্ঞতা আছে। আজ আপনি মিডিয়ার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। মিডিয়ার একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, শক্তিধর ব্যক্তি।

সম্পাদক হিসেবে আপনাকে আমি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। সমাজের উন্নয়নে, সাংবাদিক হিসেবে আপনার অনেক অবদান আছে। আমি আশা করি, আপনি যেভাবে সাহসী ভূমিকা নিয়ে, দক্ষতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন, তেমনি সেই সততা ও আন্তরিকতা নিয়ে, আমার প্রতি যে অবিচার হয়েছে, সে বিষয়টি বিবেচনা করে, সত্য প্রচারের মাধ্যমে আমার প্রতি সুবিচার করবেন।

সত্যকে প্রকাশ করবেন। আমার ক্ষুন্ন হওয়া মর্যাদা ও ভাবমূর্তি পুনরুজ্জীবিতকরণে সহায়তা করবেন। আমি প্রকৃতপক্ষে যা, তাই আমার সম্পর্কে জনগণকে জানাবেন।

এজন্য আপনার ঐকান্তিক সহযোগিতা চাই। ‘বদলে যাও, বদলে দাও’-প্রথম আলো’র এই স্লোগানকে ধারণ করে আমার প্রতি সুবিচার করবেন, এটাই কামনা করি।

আমার সম্পর্কে এযাবৎ যেসব অসত্য খবর পত্রিকায় গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছেন, ঠিক তেমনি সমগুরুত্ব দিয়ে আমার এ চিঠি আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করলে খুশি হব।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী

অনুলিপি
জনাব গোলাম রহমান
চেয়ারম্যান
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
সেগুনবাগিচা, ঢাকা।

আরো পড়ুন:

Comments to: প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us