সৈয়দ আবুল হোসেন
সংসদ সদস্য
২২০, মাদারীপুর-৩
(কালকিনি-মাদারীপুর)
তারিখ: ১৮ মার্চ ২০১৩
সৈয়দ আবুল মকসুদ
গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক
আজিজ এপার্টমেন্ট
ফ্ল্যাট/ডি-৫, বাড়ি নং-২৫, রোড নং-১১ (নতুন)
৩১ পুরাতন, ধানমন্ডি আ/এ, ঢাকা।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
গত ১৬ মার্চ ২০১৩ তারিখে কুমিল্লায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার খবর দেখে মর্মাহত হয়েছি। এ দুর্ঘটনায় একই গ্রামের ৭ জন শিশু ছাত্রছাত্রী অকালে মারা গেছে। শোকের মাতম হাতিমারা এই গ্রামে এখন। স্কুল ছুটি শেষে স্কুলভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিল শিশুরা।
একটি ট্রাকভ্যানের চাপায় ৭ জন শিশুর প্রাণ অকালে ঝরে যায়। এ দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের পরিবার এক অসহায় পরিস্থিতির শিকার। পরিবারগুলোর আশা-আকাক্সক্ষা চিরতরে নিভে যায়। এ ঘটনা মর্মান্তিক, বেদনাদায়ক।
এজন্য আমি মর্মাহত, গভীর শোকাভিভূত। এ ঘটনার পর সারারাত ভেবেছিÑএ থেকে আমরা কীভাবে মুক্ত হব-কিন্তু সরাসরি কোনো পথের সন্ধান পাইনি।
তবে এই ঘটনা নিয়ে কোনো পত্রিকা এবং টকশোতে তেমন কোনো বক্তব্য বা আলোচনা বা কোন সুধীজনের মর্মাহতের কথা শুনতে বা দেখতে পাইনি। এ ব্যাপারে আপনার তরফ থেকে কোনো শোকবাণী পাওয়া যায়নি।
কাউকে দোষারোপের বিষয় নয়-ঘটনাটি যে আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে, আপনি এ নিয়ে টেলিভিশনের টকশোতে বা শহীদ মিনারে যাননি-এ বিষয় দেখে ভালো লেগেছে। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই।
একে যত কমিয়ে আনা যায়, সতর্ক হওয়া যায়, ড্রাইভারদের সচেতন করা যায়, ততই মঙ্গল। দুর্ঘটনাবিহীন দিন, অকালমৃত্যুবিহীন দিন-সবার কাম্য।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, সড়ক দুর্ঘটনা বিশে^র সর্বত্র ঘটে থাকে। আফ্রিকার পর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি। এ নিয়ে আলোচনা, উদ্যোগ সর্বত্র পরিলক্ষিত। সড়ক দুর্ঘটনা কারো কাম্য নয়। আপনারও না, আমারও না।
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীর মারা যাওয়ার পর আপনি যেভাবে টিভির পর্দায় আমাকে জড়িয়ে কথা বলেছেন, শহীদ মিনারে বক্তব্য দিয়েছেন-তা আজও আমার মনে আছে।
যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আপনি আমার পদত্যাগ চেয়েছিলেন। শেষাবদি আমি পদত্যাগও করেছি। কিন্তু যে দুর্ঘটনার কারণে আপনি আমার পদত্যাগ চেয়েছেন, সেজন্য আমাকে কি সরাসরি দায়ী করা যায়? তদন্তে দেখা গিয়েছে, দুই গাড়ির ড্রাইভার দুজনের অসর্তকতা ও অতিবৃষ্টির কারণে ভিজিবিলিটি না-থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঐ সড়কে কোনো খানাখন্দক কিংবা গর্ত ছিল না, কোনো সমস্যা ছিল না। অথচ যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে দায়ী করে পদত্যাগ চাইলেন। গুরুত্ব বাড়াতে শহীদ মিনারে ঈদের দিনে শিশুদের গলায় ‘মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’-ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।
একথা ঠিক দেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির অকালমৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সেজন্য আমি মর্মাহত হয়েছি। দুঃখ পেয়েছি।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পরও বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমার পদত্যাগের পরপরই ঢাকা-বরিশাল রুটে একসাথে ১৪ জন একই গাড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই জায়গায় মারা যান। এরপর সড়ক দুর্ঘটনা, প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনা।
পরিসংখ্যানে দেখা যাবে, যে ঈদে শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়া হয়েছিল, সে ঈদের পরবর্তী গত ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। এবং এখনো প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব দুর্ঘটনা নিয়ে আর কোনো সরব আলোচনা হয়নি। কথা হয়নি। লেখালেখি হয়নি। মিছিল হয়নি।
‘পদত্যাগ চাই’-ব্যানার নিষ্পাপ অবুঝ শিশুদের গলায় ওঠেনি। তাহলে তারেক মাসুদ ও শিশুক মুনীরের অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার পদত্যাগ চাওয়া পরিকল্পিত ছিল কিনা, সমীচীন ছিল কিনা, মনে হয়, তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতু নিয়ে লেখালেখি, আলোচনা হয়েছে-তা একদিন অসত্য প্রমাণিত হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে আমি কোনো অবৈধ কাজ করিনি। কোনো অনৈতিক কাজ করিনি। এক্ষেত্রে আমাকে জড়িয়ে, আমার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে জড়িয়ে অসত্য খবর পরিবেশন ও আলোচনার মাধ্যমে যে সন্দেহের আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে- তাও মিথ্যা।
বিশ্বব্যাংক অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে যে অভিযোগনামা তৈরি করেছেÑতাও একদিন মিথ্যা প্রমাণিত হবেÑইনশাল্লাহ। মূলত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার পদ্মা সেতু। এক্ষেত্রে কতিপয় সংবাদপত্র সত্যের অনুসন্ধান না করে, অসত্যকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করে পদ্মা সেতুর নির্মাণকে বিলম্বিত করেছে।
দেশের কোনো মানুষ, কোনো মন্ত্রী যে সৎ হতে পারে, দায়িত্বশীল হতে পারে-সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে অক্ষম। বিদেশি দাতাদের আমরা অনেকে সবসময় শ্রেষ্ঠ মনে করি, দাতারা যে অবৈধ কাজে কত পারদর্শী-তা বুঝতে আমাদের কতিপয় সাংবাদিক এবং কতিপয় শ্রদ্ধেয় আলোচক বুঝতে অক্ষম।
আমি বিশ্বাস করি, অপসংবাদের অচিরেই মৃত্যু ঘটবে। গণতন্ত্র বিকাশের সাথে সাথে সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অগ্রগামী হবে। দেশে সততা প্রতিষ্ঠা পাবে।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি আমাকে চিনেন এবং জানেন। আমিও আপনাকে চিনি, জানি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টকশোতে আপনার আলোচনা শুনি, পড়ি। প্রভাবান্বিত হই। আপনি আমার পছন্দনীয় ব্যক্তিত্ব। আপনি জানেন, আমি কী ধরনের ব্যক্তি।
আমার পাসপোর্ট ব্যবহার (তদন্তে প্রমাণিত ত্রুটি ছিল একজন কর্মকর্তার), যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত ও নতুন বাড়ি ক্রয়, কালকিনিতে বাড়ি নির্মাণ, সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যে ব্যাপক লেখালেখি পত্রিকায় হয়েছে-তা কত অসার, কত অসত্য।
অথচ এ অসত্য লেখাগুলো আমার ব্যক্তিগত ইমেজ নষ্টে সুদূরপ্রসারী কাজ করেছে। পদ্মা সেতুর অসত্য অভিযোগ দাঁড় করানোতেও এসব অসত্য তথ্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এসব অসত্য তথ্যই পদ্মা সেতুর অভিযোগের মূলভিত্তি।
আপনি এটাও জানেন, বিএনপি’র শাসনামলে শে^তপত্র তৈরি, আমার স্বাক্ষর জাল করে উদ্দেশ্যমূলক চিঠি (এ আমলেও এ ঘটনা ঘটেছে) এবং ১/১১-এর সরকার আমার অর্জিত সম্পত্তি এবং পত্রিকার নানা অসত্য প্রতিবেদন ও বিএনপি’র শ্বেতপত্র নিয়ে চুলচেরা তদন্ত করে এবং তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই।
আমার মতো একজন সৎ, নিরীহ ব্যক্তিকে নানা উছিলায় নানা ঘটনায় সম্পৃক্ত করে অসৎ বানানোর প্রচেষ্টা কেন-এটা আমি বুঝি না। তবে এতটুকু বুঝি, ’৯১ সনে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর থেকে আমাকে এসব অসত্য সংবাদের প্রতিক্রিয়া বইতে হচ্ছে।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনাকে এতটুকু বলতে পারি, পদ্মা সেতু এবং কতিপয় পত্রিকার উত্থাপিত অভিযোগে আমি সম্পৃক্ত নই। আমি সারাজীবন সততা, স্বচ্ছতা বজায় রেখে সরকারি ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছি।
কোনো সময়, কোনো অন্যায় ও অনিয়মের সাথে আপোষ করিনি। আমার বিরুদ্ধে বর্তমানে যে অসত্য অভিযোগের উপাত্ত নিয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সকল অসত্য সংবাদ তদন্তে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হবে। সঠিক, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্তে সত্য প্রকাশ পাবে এবং আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব ইনশাল্লাহ।
দেশের উন্নয়নে, সত্য প্রচারে আপনার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করি। আপনার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করি।
গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
আরো পড়ুন
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২
- আমার দেশ সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ওবায়দুল কাদেরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩
- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি
- আকিদুল ইসলামের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৪
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হেসেনের চিঠি
- ড. ইফতেখারুজ্জামানের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৫
- ড. কামাল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- কাজী সিরাজের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
No Comments
Leave a comment Cancel