সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ৩১ জুলাই ২০১২
জনাব আনু মোহাম্মদ
অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
সাভার, ঢাকা।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
বেশ কিছুদিন আগে পদ্মা সেতুর বিষয়ে পত্রপত্রিকায় আলোচনা-সমালোচনা এবং বিশিষ্টজনদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সত্যিকার তথ্য জানানো এবং আমার স্বচ্ছতার দিকটি পরিষ্কার করতে আপনাকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। পেয়েছেন কিনা বা চিঠিটি আপনার হস্তগত হয়েছে কিনা জানি না।
আপনার দৃষ্টি আাকর্ষণ, আমার কাজে স্বচ্ছতা সম্পর্কে আপনাকে অবগত করানো এবং সুবিবেচনার প্রত্যাশা ছিল-লেখার উদ্দেশ্য। পরবর্তীতে এ লক্ষ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠিও লিখেছিলাম।
আমি মনে করি, পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপন এবং তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে সম্পর্ক উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি তাই সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিই। আমি দলমত নির্বিশেষে সবার সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর গুরুত্ব দিই। দেশের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক সহনশীলতার জন্য সম্পর্কের উন্নয়ন খুব প্রয়োজন।
এজন্য রাজনৈতিক দলের নেতাসহ বিশিষ্টজনদের সাথে আমার যোগাযোগ হয়, কথা হয়। সবার পরামর্শকে আমি গুরুত্ব দিই। আপনার সাথে আমার সরাসরি যোগাযোগ না হলেও বিভিন্ন সভায় আপনার বক্তব্য আমি মিডিয়ার বদৌলতে শুনি এবং পড়ি।
আপনি দেশের একজন অর্থনীতিবিদ। একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, গুণীজন। সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। আপনি একজন সুশিক্ষিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত ব্যক্তিত্ব। আমি আপনাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক এবং সরকারের মধ্যে সৃষ্ট টানাপোড়েন অনাকাক্সিক্ষত। সেতু নির্মাণে এমন কিছু ঘটেনি-যা বর্তমান অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। আমি আল্লাহকে হাজির নাজির করে বলতে পারি, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
কোনো অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। স্বার্থপরদের কারসাজি, নামে-বেনামে অসত্য অভিযোগ পদ্মা সেতু নির্মাণে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, গ্লোবাল রাজনীতি প্রয়োজনে কতটুকু বিস্তৃত হয়-তা আপনার মতো বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এক অশুভ চক্রান্তের শিকার বাংলাদেশ ও পদ্মা সেতু। এটা রাজনৈতিক ইস্যু বানানো সঠিক নয়। যদিও অনেকে এই ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছে। এটা একটা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে আমাকে জড়িয়ে, তাদের নেতিবাচক বক্তব্য দেয়া সমীচীন কিনা-তা মনে হয় ভেবে দেখা দরকার। আমি মনে করি, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অসত্য বক্তব্য, দেশের জন্য, কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়।
আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। দুদক তদন্ত করছে। আমি বিশ্বাস করি, যেহেতু কোনো অনিয়ম হয়নি, সেহেতু তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির আশঙ্কা প্রকাশ করা এবং সেই আশঙ্কায়, যেখানে কোনো দুর্নীতি সংঘটিত হয়নি, ঋণচুক্তি বাতিল করে যে অন্যায় করেছে, বাংলাদেশকে অহেতুক অপবাদ দিয়েছে-তাতে আপনারা, দেশের সুধীজনরা কথা বলেন না।
আর যেখানে আমি কোনো অন্যায় করিনি, অবৈধ কাজ করিনি-সে বিষয় নিয়ে আপনারা সোচ্চার হচ্ছেন। আমাকে, সরকারকে, বিভিন্ন ভূষণে ভূষিত করেছেন।
আপনাদের সুধীজনের পরামর্শে আমি পদত্যাগ করেছি। তারপরও বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য, তদন্ত শেষ না হতেই, আমাকে দোষী করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা বিবেচনাপ্রসূত?
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতুর প্রস্তুতিমূলক কাজে অর্থাৎ ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই ব্যয় কার্যক্রম দাতাসংস্থারা মনিটর করেছে এবং স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে কাজ সম্পাদন হওয়ায় তারা এ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছে।
আর যে ক্ষেত্রে এখনো বিশ্বব্যাংকের একটি টাকাও ছাড় হয়নি, ব্যয় হয়নি, তা নিয়ে দুর্নীতির আশঙ্কা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এক্ষেত্রে কীভাবে দুর্নীতি সংগঠিত হয়, তা বোধগম্য নয়। আমাকে জড়িয়ে যে অসত্য কথা বলা হচ্ছে তা আমার প্রতি অবিচার নয় কি?
আপনি দেশের সিনিয়র সিটিজেন, অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। আপনি এর ব্যাখ্যা বা যুক্তি ভালো জানেন।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি। আমাদের রাজনীতি জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য।
আমরা বিশ্বাস করি, সরকার ও বিরোধীদল একে অন্যের পরিপূরক। দেশের উন্নয়নের সহযাত্রী। এ স্পিরিট বাস্তবায়নে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় দলমত নির্বিশেষে এক আদর্শিক রাজনীতির সহ-অবস্থানের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। উন্নয়নের সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। আপনি যদি আমার নির্বাচনী এলাকা মাদারীপুর-৩ খোঁজখবর নেন, তাহলে তা আরো স্পষ্ট হবে।
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি আগেও বারবার বলেছি, কতিপয় পত্রিকার অসত্য অভিযোগ, কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাংকের কাছে অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে ঋণচুক্তি বাতিল অবিবেচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত।
বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন হওয়া সত্ত্বেও পদ্মা সেতুর স্বার্থে, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন তদন্তের স্বার্থে, আপনাদের, দেশের সুধীজনদের পরামর্শের প্রতিফলনে আমি মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
মন্ত্রিসভা থেকে এই সরে দাঁড়ানোকে যদি কেউ দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করেন, তাহলে আমাদের ‘সৎসাহসের’ জায়গা কোথায়? আমি যে সাহস ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি-সেটা বুঝেও, অনেকে একে সাহসী পদক্ষেপ না বলে নেতিবাচক রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করেন-এটা দুঃখজনক। গণতন্ত্রের জন্য হতাশাজনক নয় কি?
শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি চাকরি না করে ব্যবসায় এসেছি। সৎ উপার্জনে বড় হয়েছি। স্বাধীনতার পর দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। দেশের শিক্ষাবিস্তারে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছি। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশসেবায় সুযোগ পেয়েছি।
আমি কোনো পর্যায়েই অন্যায়ের সাথে কোনো আপোষ করিনি। সৎ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে সরকারি ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছি। এক্ষেত্রে আমাকে অন্যভাবে, নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। আমি নিয়মিত কর পরিশোধ করি।
পদ্মা সেতুর বিষয় তদন্ত হচ্ছে, হয়তো ভবিষ্যতেও পুনরায় হবে, তবে আমি দেশবাসীকে, আপনাকে আবারো আশ্বস্ত করতে চাই, পদ্মা সেতুতে এ পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি হয়নি। কোনো অনিয়ম হয়নি।
অভিযোগকৃত এসএনসি-লাভালিনকে সেতু তদারকি পরামর্শক নিয়োগের কোন পর্যায়ে আমি ব্যক্তি সৈয়দ আবুল হোসেন বা আমার পূর্বতন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই জড়িত নয়।
আমি সব সময়ই বিশিষ্টজন ও শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শকে, চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দিই। সত্য ঘটনা জানানোর জন্য আমি আপনাকে এ চিঠি দিয়েছি। এ ব্যাপারে আপনার ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করি। আমি আপনার সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করি।
গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
আরো পড়ুন
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২
- আমার দেশ সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ওবায়দুল কাদেরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩
- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি
- আকিদুল ইসলামের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৪
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হেসেনের চিঠি
- ড. ইফতেখারুজ্জামানের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৫
- ড. কামাল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- কাজী সিরাজের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
No Comments
Leave a comment Cancel