সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ৩০ জুুন ২০১২
জনাব মাহফুজ আনাম
সম্পাদক
দি ডেইলি স্টার
ঢাকা।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক,
আসসালামু আলাইকুম।
আমরা জানি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক জাতির বিবেক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিয়ামক। শিক্ষার পথপ্রদর্শক। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের বাহক। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের হাতিয়ার। সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ।
কিন্তু আমরা যখন দেখি, কিছু সংবাদপত্র ও সাংবাদিক অসত্য খবর প্রকাশ এবং এ অসত্য খবরকে উপজীব্য করে ক্রমাগত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় লেখে, কার্টুন ছাপে, টকশোতে অসত্য লেখার উপর ভিত্তি করে সুধীজনরা কথা বলেন-তখন সত্যি অবাক হই।
চিন্তিত হই। দুঃখ পাই, আহত হই। ভাবি, অসত্য কি পৃথিবী নাচিয়ে বেড়াবে? সত্যকে কি কেউ সহায়তা করবে না? অসত্য বক্তব্য রাজত্ব করবে? ভাবি, এটাই মনে হয়, ইয়লো জার্নালিজম।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনি মিডিয়ার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, উজ্জ্বল ব্যক্তিত। আপনি দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। দেশের মানুষের অভিভাবক। অনেকে আপনার কথা শুনেন, প্রভাবিত হন। আমিও প্রভাবিত হই।
আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। এবার যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে একটি পত্রিকার অফিসে আমি গিয়েছিলাম-সেটা হলো ডেইলি স্টার। আপনি সাদরে গ্রহণে করেছিলেনÑলাঞ্চ করিয়েছিলেন।
আপনার সম্পাদিত ডেইলি স্টার বোদ্ধা পাঠকমহলে খুবই জনপ্রিয়। দাতা সংস্থা ও বিদেশিদের কাছে একমাত্র নির্ভরশীল পত্রিকা বলে সবাই জানেন।
এ জনপ্রিয় এবং নির্ভরশীল পত্রিকায় যখন অসত্য খবর প্রকাশ হয়, কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে পত্রিকাকে ব্যবহার করে, তখন তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য, দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যক্তি হিসেবে আমি আপনার পত্রিকায় অসত্য খবর প্রকাশের শিকার। আপনার এই পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে অসত্য, ভিত্তিহীন খবর প্রকাশ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কার্টুন ছাপানো হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ের কোনো সত্যতা ছিল না, এখনো নেই।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনার পত্রিকার স্বনামধন্য রিপোর্টার জনাব শাহরিয়ার খান প্রতিনিয়ত আমার বিরুদ্ধে অসত্য রিপোর্ট করেছেন। চায়নার কোনো প্রতিষ্ঠান এদেশে কোনো প্রকল্পে বিড করলেই আমার নাম জড়িয়ে অসত্য রিপোর্ট করেন।
আমার চায়নার কানেকশন খোঁজেন। অথচ খবর সত্য নয়, তথ্যভিত্তিক নয়। তার রিপোর্ট পড়লে এর সাথে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত বলে প্রতীয়মান হয়। তিনি অসত্য ও মনগড়া রিপোর্ট করে আমার বিরুদ্ধে জনমনে একটি ভুলধারণা সৃষ্টি করতে সহায়তা করছেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকও এই অসত্য রিপোর্টে প্রভাবিত হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য যা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতার সাথে কাজ করা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক যে যুক্তিতে ঋণচুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশের ওপর দোষারোপ করেছে, তা অপ্রত্যাশিত ও অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিশ্বব্যাংক মূল সেতুর কাজে প্রি-কোয়ালিফিকেশনে নিজের পছন্দের বিডারকে (যে ডিসকোয়ালিফাই হয়েছে) বারবার অনুরোধ করে কোয়ালিফাই করতে ব্যর্থ হয়ে- তারা কী কী ই-মেইল পাঠিয়েছে, সেতু বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছে-তা গবেষণা করলে বুঝতে পারবেন-বিশ্বব্যাংক অহেতুক বাংলাদেশের প্রতি কতটুকু অবিচার করেছে।
পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছভাবে করা হয়েছে। সেটাও পর্যালোচনা করলে বুঝতে পারবেন। মূলত পদ্মা সেতু দেশীয় ষড়যন্ত্র এবং বিশ্ব-রাজনৈতিক কুটচালের শিকার।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আপনার পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে অসংখ্য অসত্য রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্ট নিয়ে যদি একটু মূল্যায়ন করেন, পর্যালোচনা করেন, তাহলে দেখবেন তা কত অসত্য, মিথ্যা ও অনুমাননির্ভর।
আপনার কাছে আমার অনুরোধ, ভেবে দেখুন, এসব অসত্য, অনুমাননির্ভর রিপোর্ট দেশের কী ক্ষতি করেছে, আমার মতো একজন নির্দোষ ব্যক্তি কীভাবে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে। আমার পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদাকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আপনি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। আপনার পিতা একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন। আপনি বুঝবেন, অসত্য রিপোর্ট কীভাবে একজন ব্যক্তির মর্যাদা নষ্ট করে। অসত্য রিপোর্টের মাধ্যমে কীভাবে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।
শ্রদ্ধেয় সম্পাদক, আমি সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি। দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম করিনি। অন্যায় করিনি।
অথচ আপনার সম্পাদিত পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে অসত্য কথা লিখেছে। সর্বশেষ, প্রথম আলো পত্রিকার একটি অসত্য খবর আপনার পত্রিকা পরের দিন প্রকাশ করেছে। কার্টুন ছেপেছে।
সম্প্রতি পদ্মা সেতু নিয়ে প্রথম আলো আমার বিরুদ্ধে যে মনগড়া, অসত্য রিপোর্ট ও যে প্রপাগান্ডা বা ক্যাম্পেইন চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে আমি সম্পাদক মহোদয়কে একটি চিঠি দিয়েছি, যার একটি অনুলিপি আপনার সদয় অবগতির জন্য প্রেরণ করা হলো।
গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
আরো পড়ুন
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০২
- আমার দেশ সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ওবায়দুল কাদেরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৩
- অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি
- আকিদুল ইসলামের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- বদরুদ্দীন উমরের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৪
- বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হেসেনের চিঠি
- ড. ইফতেখারুজ্জামানের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- প্রথম আলো সম্পাদকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি-০৫
- ড. কামাল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- কাজী সিরাজের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি
No Comments
Leave a comment Cancel