ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সাবেক উপদেষ্টা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
গত ২১ ডিসেম্বর ২০১২ আপনার সাথে হঠাৎ করে দেখা হলো। তাও আবার পোশাক-পরিচ্ছদ বানানোর জায়গায়। দেখা হয়ে ভালো লাগলো। আপনার সোজা সাপটা, কঠিন কথাগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে।

আপনি অল্প সময়ে অনেক কথা বলেছেন, অনেক উপদেশ/পরামর্শ দিয়েছেন। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের বাড়াবাড়ি, আমাকে বিতর্কিত করার কথা নিয়েও কথা বলেছেন। সমসমায়িক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব ফেলে দেয়ার সুযোগ নেই।

আপনি একজন সাহসী মানুষ। সত্যকথা বলার সাহস আপনার আছে। বাংলাদেশে আপনার মতো সোজাসাপটা কথা, সত্যকথা বলার সাহসী কম লোকই আছে।

আপনি একজন সুশিক্ষিত সুবিবেচনাপ্রসূত ব্যক্তিত্ব। দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। সত্য ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠায় একজন দুর্জয় সৈনিক। একজন বিজ্ঞজন। একজন অভিভাবক। দেশের সিনিয়র সিটিজেন। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সম্পর্কে আপনি পরিপূর্ণ ওয়াকেবহাল।

বিশ্বব্যাংক এবং এর কাজকর্মের পদ্ধতি সম্পর্কেও আপনি ভালো জানেন। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ আমলে নিয়ে যে অনিয়মের আশঙ্কা কথা বিশ্বব্যাংক বলেছে, তা কল্পনাপ্রসূত ও তথ্য বিবর্জিত।

বিশ্বব্যাংক ও কতিপয় পত্রিকার অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়ে দেশের সুশীল সমাজ যখন রাজনীতিক ইঙ্গিতপূর্ণ কথা লেখেন, কথা বলেন, তখন তা কোটারি হয়ে যায়। সুধীজনদের লেখার প্রতিটি অক্ষর সত্যাশ্রয়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়।

সত্যের অনুসারী হিসেবে লেখার আগে তাদের এদিকটি ভেবে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের নেতিবাচক লেখা কারো কাম্য হতে পারে না। এ বিষয়ে আপনার মতো সাহসী লোকের সহযোগিতা চাই। আমি আমার ভাবর্মূতি ফিরে পেতে চাই।

এ বিষয়ে আমার একটি বক্তব্য দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত হয়েছে তা আপনার সদয় অবলোকনের জন্য সংযুক্ত করা হলো।

সেইসাথে আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৩ বছরের কার্যক্রম নিয়ে প্রকাশিত ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতায় যোগাযোগ খাত’, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন ‘সিঙ্গাপুর আইসিটি সম্মেলনে সৈয়দ আবুল হোসেন’ নামক দুটি পৃথক পুস্তিকা, এবং আমার প্রতিষ্ঠিত দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃথক স্মরণিকা আপনার অবগতির জন্য প্রেরণ করলাম।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। দাতাসংস্থার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এ চুক্তি স্বাক্ষর কি এমনি এমনি সম্ভব হয়েছে? আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দ্রুততার সাথে কাজ করেছি বলেই অতি অল্প সময়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করেছি।

বিশ্বব্যাংক ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে আমি সহযোগিতা পেয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কাজ দ্রুত সম্পাদন করেছি। এ কাজ নিয়ে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। দাতা সংস্থাগুলোকে একত্রিত করে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছি।

পাশাপাশি মূল সেতু নির্মাণ ও পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। যে কাজ করতে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’র ক্ষেত্রে ১০ বছর লেগেছে মাত্র ২ বছরে পদ্মা সেতুর ততটুকু কাজ সমাপ্ত করেছি। মূল সেতুর দরদাতা নির্বাচন পর্যায়ে ছিল-শুধু বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন অপেক্ষা।

আপনি জানেন, মূল সেতুর দরদাতা নির্বাচন কলমের এক খোঁচায় হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের কনকারেন্স নেয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত দরদাতা নির্বাচন অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের অফিসে পৌঁছে। এ প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের লোকাল অফিস ও হেড কোয়ার্টারের অনুমোদন ছিল।

একটি পর্যায়ে তাদের আপত্তি মিটিয়ে পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পরামর্শক নিয়োগেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। সচিব পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন বা ভাঙার যে অভিযোগ- তাও সত্য নয়। পরামর্শক তদারকি নিয়োগে অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ও অনুমোদন নিয়ে কমিটি পুর্নগঠন করা হয়েছে।

প্রতিটি পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের তদারকি স্পষ্ট ছিল। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে টিইসি কাজ করেছে।

এতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রশ্ন অবান্তর। পরামর্শক নিয়োগের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের হঠাৎ করে, ‘দুর্নীতির আশঙ্কা’ প্রকাশ অসৎ উদ্দেশ্য বলে কি আপনার কাছে মনে হয় না?

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাতাদের সাথে কাজ করার, প্রকল্প বাস্তবায়নের যে অনুসৃত নীতি তা অক্ষরে অক্ষরে পালনের পর কোনো দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে কি?

যদি কোন আপত্তি তাদের থাকত-বিশ্বব্যাংক প্রথমদিকে বা মধ্যমস্তরে বা চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তা উত্থাপন করে সমাধা করা কি যেত না? আসলে এটা একটা বাহানা ছাড়া আর কিছু নয়।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো স্তরে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমি কোনো ধরনের দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত নই। কোনো দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথেও আমার সম্পৃক্ততা নেই।

আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে বাংলাদেশের জনগণের স্বপ-পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে কাজ করেছি। একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে আমি সফল হতে পারিনি। এই দুঃখ আমার চিরকাল থাকবে।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি বিস্মিত হই, যখন দেখি দেশের বিবেকবান, সুশিক্ষিত ও আন্তর্জাতিক কূটচাল বোঝা ব্যক্তিত্ব ‘চিলে কান নিয়ে গেছে’ এ-ধরনের উচ্চারণে তার পিছনে দৌড়ান, তা বিশ্বাস করেন। বিশ্বব্যাংকের বক্তব্যকে, উদ্দেশ্যমূলক বাক্যকে অমোঘ সত্য বলে মেনে নেন।

আমি সারাজীবন সততার সাথে ব্যবসা করেছি। যেভাবে নেতিবাচকভাবে আমাকে আপনার লেখায় চিহ্নিত করেছেন-বলুন, আমি কোথায়, কার কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ নিয়েছি। দুর্নীতি করেছি।

পৃথিবীর এমন কোনো ব্যক্তি নেই যিনি বলতে পারবেন আমি কারো কাছে অবৈধভাবে অর্থ চেয়েছি। আমি মূলত ষড়যন্ত্রের শিকার। আমি বলতে চাই, সুধীজনরা নিজের বুদ্ধিমত্তা নিজের দক্ষতায় নিজের গুণে বিষয়টি জেনে আমার সম্পর্কে মন্তব্য করেন।

আমি জীবনে কোনো অন্যায় করিনি। কোনো অবৈধ কাজের প্রশ্রয় দিইনি। শুধুমাত্র একবার আমার এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ভুলের কারণে ১৯৯৮ সালে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।

সে ঘটনায় গণতন্ত্রের প্রতি আনুগত্যের কারণে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলাম। এ পদত্যাগ ছিল একটি দৃষ্টান্ত। কিন্তু এজন্য সুধীজনরা, সাংবাদিক বন্ধুরা আমার কোনো প্রশংসা করেননি। সেই একটি বিষয় নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা, সাংবাদিকেরা আমাকে বিতর্কিত করবেন এটা কেমন কথা? একটা কেমন বিচার, কেমন মূল্যায়ন?

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র নিয়ে যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে, তা অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। দুদক দীর্ঘ সময় এতে আমার সম্পৃক্ততা খুঁজতে অনুসন্ধান চালিয়েছে।

কিন্তু তারাও কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি বা এ প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা পায়নি। মূল সেতু নির্মাণে আমার সম্পৃক্ততা না পেয়ে দুদক তা নথিভুক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংকও এ তদন্তে ঐক্যমত পোষণ করেছে।

পরবর্তীতে পরামর্শক নিয়োগে দুদক তদন্ত করেছে। দুদক এক্ষেত্রে একটি মামলা করেছে। সেখানে আমাকে আসামি করা হয়নি। আমরা জানামতে, বিশ্বব্যাংকও রেফারাল চিঠি ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দেয়নি, কোনো Evidence দিতে পারেনি।

কোনো রেফারাল চিঠি কি দুর্নীতি প্রমাণ করে? এ রেফারাল চিঠি অসত্য অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। দুদক যদি এ ঘটনার আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করে, তাহলেই আমার অবস্থান পরিষ্কার হয়ে যাবে।

দুদক যদি কাউকে বা কোনো প্রতিষ্ঠানকে খুশি করার চেষ্টা না করে, তাহলে অবশ্যই আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হব ইনশাল্লাহ।

গত ২৪.১২.২০১২ খ্রি. তারিখে ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী “সাহসী মাহমুদুর রহমান, ভীরু আবুল হোসেন” শীর্ষক একটি লেখা লিখেছেন। তিনি তাঁর লেখায় বলেছেন, “পদ্মা সেতু এবং বিশ্বব্যাংকের জটিলতার শুরু থেকেই আমার মনে হয়েছে কোথাও-না-কোথাও ডালমে কুছ কালা হ্যায়।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছি। রাজনৈতিকভাবে আমার দলের প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সরকারের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেজন্য আওয়ামী লীগের সমালোচনা করি, কোনো কোনা ক্ষেত্রে বেশিও করি।

কিন্তু তাই বলে অবিশ্বাস করে অন্যায় অহেতুক নিজের আত্মাকে কলুষিত করে করি না। আগে মনে হয়েছে খন্দকার ইলিয়াস দাদা ভাইর ছেলে নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, সৈয়দ আবুল হোসেন এদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তার কিছু-না কিছু সারবত্তা আছে, বিশ্বাসসযোগ্যতা আছে।

কিন্তু ‘আমার দেশ’-এ অত ব্যাপকভাবে স্কাইপির কথোপকথন প্রচারের পর বিবেকের নির্দেশেই বলতে বাধ্য হচ্ছি, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সম্পর্কে বিশ^ব্যাংক যে অভিযোগ তুলেছে, হয়তো তার কোনো বিশ্বাসসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য প্রমাণ বা দলিল-দস্তাবেজ তাদের কাছে নেই।

যদি থাকত তাহলে কখন, কোথায় কী দুর্নীতি করেছেন, এতদিন তার সব দালিলিক প্রমাণ দিয়ে দিতেন। কাশিমবাজার কুঠির মতো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে- এসব বলতেন না।

দলিল-দস্তাবেজ প্রমাণাদি ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি একটা স্বাধীন দেশে, একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের উপর খবরদারি করাও তো একধরনের মারাত্মক দুর্নীতি বা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল।

ছা-পোষা মন্ত্রীরা যদি প্রস্তাব খাটাতে পারেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি প্রভাব খাটাতে পারেন, সেখানে বিশ্বব্যাংকের মতো এমন একটি সংস্থা কোনো প্রমাণ ছাড়া কাউকে আসামি করতে বলা-এটা প্রভাব খাটানো নয়?

এটা তো একটা আমলযোগ্য অপরাধ বলেই সাদা চোখে ধরা পড়ে। সমস্যা হয়েছে জনাব সৈয়দ আবুল হোসেন আওয়ামী ঘরানার অতি প্রিয় বিশ্বস্ত ব্যক্তি। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান বিরোধীদল বিএনপির এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার কাছে যত নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সমালোচিত।

উইকিলিকস-এর এত তথ্য বের হয়, স্কাইপিতে এত কথা হয়, সারবত্তা থাকলে এতদিনে পদ্মা সেতু নিয়েও কিছু-না কিছু দালিলিক প্রমাণ আমাদের পাবার কথা ছিল। শুনছি দুদক নাকি তদন্ত করতে বা দলিল-দস্তাবেজ যোগাড় করতে কানাডা-আমেরিকা ঘুরতে যাবে। কেন যাবে?

তাদের কাছে দলিল এলে তবেই তা বিবেচনা করবে। রাস্তা থেকে দলিল-দস্তাবেজ বানিয়ে আনার তাদের সুযোগ কোথায়? অবাক হয়ে শুনলাম, কানাডার কোথায় কার ডায়রিতে আবুল হোসেনের নাম আছে। তাতে কী হয়েছে?

আমার কত ডায়রিতে ব্রেজনেড, কোসিগিন, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ইয়াসির আরাফাত, তুরস্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোমিরেল, নেলসন ম্যান্ডেলার নাম আছে। শুধু নাম নয়, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা, ডোমিরেল আরও কতজনের স্বাক্ষরও আছে, চিঠিপত্র আছে।

এখন আমি কোনো কুকাজ করলে তার জন্য কি তারা দায়ী হবেন? আমার খাতাপত্র হাতালে অন্ততপক্ষে হাজারবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেত্রীর নাম পাওয়া যাবে।

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামার নাম ডায়রিতে কতবার লেখা আছে তার ইয়াত্তা নেই। কানাডিয়ান কন্ট্রাক্টরের কোনো ডায়রিতে কারও নাম লেখা থাকলেই কী যায়-আসে?

তিনি যে ঘুষ নিয়ে কাজ পাইয়ে দেবেন, এমন কোনো অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন? আমাদের কৃষ্টি, আমাদের সভ্যতা কোনো ব্যাপারে সম্ভব হলে বড়সড় কাউকে নিয়ে কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়া।

সৈয়দ আবুল হোসেন এবং আবুল হাসান চৌধুরী ’৯৬ সালে একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। একজন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও অন্যজন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। খুব সম্ভবত তারা একসঙ্গে পড়ালেখাও করেছেন।

একটি প্রজেক্টে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চায়। যাকে নিয়ে সুবিধা তাকে নিয়েই গিয়েছে। এতে দোষের কী আছে? দুচার হাজার বা কয়েক লাখ ডলার কি ঘুষ নিয়েছেন? নিলেই বা কী? আবুল হাসান চৌধুরী যদি ঘুষ নিয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে দেখা করিয়ে থাকেন, বিশ্বব্যাংক কি তার ছবি তুলে রেখেছে?

সেই ডলারগুলোতে কি তারা সাইন করে দিয়েছে, যা আবুল হাসান চৌধুরী নিয়েছেন? তা কিন্তু নয়। আবুল হাসান চৌধুরী কাউকে মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গিয়ে কী বলতে পারেন? খুব যদি বেশি বলেন, খুব যদি প্রস্তাব খাটান, তাহলে বলেছেন, কাজটা যেন যাদের নিয়ে এসেছেন তাদের দেন। আবুল হাসান চৌধুরীর কথামতো যদি কাজ হয়ে থাকে তাহলে কাগজপত্রেই তো দেখা যাবে।

সৈয়দ আবুল হোসেনের পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে কী ভূমিকা ছিল, তা তো দলিল-দস্তাবেজেই দেখা যাওয়ার কথা, টেলিফোন কলে পাওয়া যাওয়ার কথা। আবুল হাসান চৌধুরী যদি এমন বলে থাকেন, তার পার্টির প্রতি অন্যায় করার সম্ভাবনা আছে, তার পার্টির প্রতি কোনো অন্যায় যাতে না হয়, সব যেন স্বচ্ছতার সাথে হয়- এটা দেখতে বলায় কি তার দোষ হবে?

আমরা কোথায় আছি? সভ্যতার কথা বলে বলে আমরা তো প্রায় অসভ্যতার সীমানায় পৌঁছে যেতে চলেছি।” কোনো প্রমাণাদি ছাড়া রমেশের খাতায় আমার নাম-থাকা কি প্রমাণ করে আমি তার কাছে টাকা চেয়েছি?

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি একটি ব্যক্তিগত কথা আপনাকে জানাতে চাই। যোগযোগমন্ত্রী হিসেবে আমি তিন বছর কাজ করেছি। আমি মনে করি, সফলতার সাথে, সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি।

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে আমি পদ্মা সেতু নির্মাণে সফল হতে পারিনি। যখন পদ্মা সেতু নিয়ে, আমাকে জড়িয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, এবং আমাকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র তুঙ্গে, তখন দেখলাম ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ সংবাদপত্রে পরপর ২দিন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ রচনা।

এই নাতিদীর্ঘ রচনার মূল বক্তব্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাংলাদেশের একমাত্র সফল যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। এটা কি কাকতালীয়? না অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা ষড়যন্ত্র এর মধ্যে রয়েছে? এদিকটি ভেবে দেখলে হয়তো পদ্মা সেতুর টোটালিটি বা ভাগ্য চিহ্নিত করা সম্ভব।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, কাউকে আবেগ দিয়ে দোষারোপ করা অন্যায়। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন না-হওয়ার দুঃখবোধ এবং সর্বোপরি, সৃষ্ট ও পরিকল্পিতভাবে উত্থাপিত অভিযোগ আমলে নিয়ে আমাকে দোষারোপ করা উচিত হবে না।

আমি এ অভিযোগে অভিযুক্ত নই। আমি সততা ও স্বচ্ছতার সাথে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি। একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সামগ্রিক কার্যকলাপ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি।

একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সামগ্রিক কার্যকলাপ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন কার্যক্রম, বিশ্বব্যাংকের অংশগ্রহণ ফলোআপ করে সত্যিকার ঘটনা উদ্ঘাটন করা উচিত। দেখুন, আমাকে যেভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে-তাতে আমি সম্পৃক্ত কিনা?

আপনি জানেন, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে দাতাসংস্থা সম্পর্কে অনেক কথাই বলা যায় না; দাতাসংস্থা দায়মুক্তির সুযোগে অনেক কিছু বলতে, করতে পারেন। সত্যের খাতিরেই আপনার সত্যের পাশে দাঁড়ানো আইনি ও মানবিক বাধ্যবাধকতা।

আমি আপনার মনের, সত্যের সে বাধ্যবাধকতার প্রকাশ কামনা করি। আপনার কাছ থেকে ইতিবাচক লেখা চাই, বিভিন্ন সভা/সেমিনারে ইতিবাচক কথা চাই। চূড়ান্ত বিচারে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হব ইনশাল্লাহ।
আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি

আরো পড়ুন

Comments to: ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us