সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
তারিখ: ২৩ জুন ২০১২

ড. কামাল হোসেন
বিশিষ্ট আইনজীবী
ঢাকা।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়,
আসসালামু আলাইকুম।
আপনি দেশের একজন বিশিষ্টজন। দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবী। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজন। দেশের একজন অভিভাবক। আপনার কথার প্রতি সবার মনোযোগ থাকে।

সবাই আপনার কথায়, আলোচনায় মুগ্ধ হয়। প্রভাবিত হয়, অনুসরণ করে। আমিও আপনার একজন অনুরাগী। আপনার কথা, আলোচনা পত্রিকায় দেখি। প্রভাবিত হই।

কিন্তু যখন দেখি আপনার কথা, আপনার আলোচনা, বিশেষ করে, আমাকে জড়িয়ে পত্রিকার অসত্য খবরভিত্তিক হয়, পত্রিকার অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়, তখন ভাবি, আপনি, যিনি আমাদের অভিভাবক, তিনি আমার কর্মকৌশল ও সৎজীবন সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞাত নন। তাই আপনার কাছে আমার লেখা।

পদ্মা সেতুর নির্মাণ, এর পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক পত্রিকার লেখার প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে এবং কতিপয় পত্রিকায় পদ্মা সেতু এবং আমাকে সম্পৃক্ত করে নানা অসত্য লেখাও আমার নজরে এসেছে।

দেখে, শুনে অবাক হয়েছি। কী সহজ ভাষায় অবলীলাক্রমে অসত্য খবর, অতিরঞ্জনে ককটেল বানিয়ে পত্রিকাগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে। আর পত্রিকার অসত্য খবরভিত্তিক আপনাদের বক্তব্য ও সংবাদপত্রের এই অসত্য ভাষা ও খবরের চাপে আমি পিষ্ট হচ্ছি- মনে হয় আমার দিকটি দেখার নেই।

অথচ আমরা জানি, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শুনেছি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক জাতির বিবেক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিয়ামক। শিক্ষার পথপ্রদর্শক। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের বাহক। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের হাতিয়ার।

সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই আমরা যখন দেখি, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক অসত্য খবর প্রকাশ এবং এ অসত্য খবরকে উপজীব্য করে ক্রমাগত লিখে চলেছেন, টকশোতে অবলীলাক্রমে অসত্য লেখার উপর ভিত্তি করে কথা বলে চলেন-তখন সত্যি অবাক হই।

চিন্তিত হই। দুঃখ-বেদনায় আহত হই। ভাবি, অসত্য কি পৃথিবী নাচিয়ে বেড়াবে? সত্যকে কি কেউ সহায়তা করবে না? শক্তিশালী মিডিয়ার কাছে আমার অর্জিত সুনাম কি নষ্ট হবে? অসত্য বক্তব্য রাজত্ব করবে?

ভাবি, এটাই মনে হয়, ইয়েলো জার্নালিজম। যেই ফাঁদে আমাকে ফেলা হচ্ছে। আবার ভাবি, মনে করি, সেই প্রবাদের কথা Truth shall prevail.

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, কথাগুলো বললাম এজন্য যে, চারিদিক দেখেশুনে, সম্প্রতি পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নানা অনৈতিক কথাবার্তা পত্রিকায় দেখে, আপনাদের এ সম্পর্কিত নানা আলোচনা শুনে, এটা মনে হয়েছে যে আমি এক বিরাট ষড়যন্ত্রের শিকার।

অসত্য ও মিথ্যা সংবাদের শিকার। আপনারা সংবাদটি অসত্য জেনেও তা প্রকাশ করছেন এবং প্রকাশিত অসত্য সংবাদের ভিত্তিতে সম্পাদকীয় লিখছেন। জনগণের কাঠগড়ায় আমাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।

অথচ আমি পুরোপুরি নির্দোষ। আমি একজন সৎ ও স্বচ্ছ মানুষ, সাধারণ মানুষ। পদ্মা সেতু সম্পর্কিত লেখা-অনৈতিক কাজের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

আমাকে জড়িয়ে কমিশন চাওয়ার যে সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা কোনোক্রমেই সত্য নয়। এতে আমি আদৌ সম্পৃক্ত নই। এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দেবার ব্যাপারে আমি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির কাছে কোনো তদবির করেনি বা কাজ দেয়ার জন্য কাউকে বলিনি।

এসএনসি-লাভালিন বা এর প্রতিনিধির সাথে আমার কোনো অনৈতিক বিষয়ে কথা হয়নি। এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ পুরোপুরি মিথ্যা। তাছাড়া, পত্রিকান্তরেই দেখলাম বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে যা নেই-পত্রিকা সে বিষয় নিয়ে ফলাও করে লিখছে।

এটা কোনোমতে সাংবাদিকতার নীতিমালায় পড়ে না। আমি যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। সে কারণে কানাডার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত দু’বার এসএনসি-লাভালিন বিষয়ে আমার সাথে দেখা করেছেন।

প্রাক্তন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও জাপানের রাষ্ট্রদূতও দেখা করেছেন। তাদের রেফারেন্সে বিভিন্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিও আমার সাথে বিভিন্ন সময়ে দেখা করেছেন।

আমি এদের সবার সাথে বিভিন্ন সময়ে যখন দেখা করেছি, তখন সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কথা বলেছি। কখনো একা কারো সাথে দেখা করিনি, কথা বলিনি।

এসএনসি-লাভালিনের প্রতিনিধিরাও, অন্যান্য দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মতো, আমার সাথে দেখা করেছেন। আমি তাদের বক্তব্য শুনেছি।

তাদের বলেছি আইন ও নিয়মানুযায়ী, মেরিট অনুযায়ী, এসএনসি-লাভালিন যোগ্য বিবেচিত হলে এবং আমার পর্যায়ে উপস্থাপিত হলে আমি বিষয়টি দেখব, যাতে তাদের প্রতি কোনো অবিচার না হয়।

উল্লেখ্য, এর আগে কতিপয় পত্রিকায় পদ্মা সেতুর মূল কাজ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কল্পনাপ্রসূত, বায়বীয় বা অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে দোষারোপ করা হয়েছিল, অহেতুক আমার নাম সম্পৃক্ত করা হয়েছিল, যা দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হয়নি।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুদক মূল সেতু নির্মাণে কোনো অনিয়ম বা আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে প্রতিবেদন দিয়েছে। অবশ্য দুদক-এর এ প্রতিবেদন নিয়েও আপনারা বক্র উক্তি করেন। সাদা সার্টিফিকেট হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এটাও দুঃখজনক।

আমি দৃঢ়কণ্ঠে বলতে চাই, পদ্মা সেতু নির্মাণের কোনো পর্যায়ে আমি কোনো অবৈধ কাজ করিনি। পরামর্শক নিয়োগে এসএনসি-লাভালিন-এর বিষয়ে আমাকে সম্পৃক্ত করে যে অমূলক সবাদ প্রকাশিত হয়েছে-তাও তদন্তে অসত্য প্রমাণিত হবে।

কারণ, অনৈতিক কোনো কাজের সাথে জড়িত নই। আমি সারাজীবন সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি। পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে কঠোর ও নিরলসভাবে কাজ করেছি।

যারা অসত্য অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর কাজ বিলম্বিত করেছে, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যও একদিন প্রমাণিত হবে। একদিন তাদের মুখোশও উন্মোচিত হবে।

পরামর্শক নিয়োগে যে অনুমোদন প্রক্রিয়া আমি বিশ্বব্যাংকে অগ্রায়ন করেছি, তা সেতু বিভাগে ডকুমেন্টেড হয়ে আছে। আমি দফতর পরিবর্তনে সে ডকুমেন্ট নিয়ে আসিনি। এখনও তা সেখানে সংরক্ষিত আছে।

প্রয়োজনে বর্তমান মন্ত্রীর কাছ থেকে সেগুলো এনে আপনারা দেখতে পারেন, গবেষণা করতে পারেন-তাতে আপনারা দেখতে পাবেন আমি কীভাবে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করেছি। আমি একথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় অমি কোনো অনিয়ম করিনি।

কোনো অন্যায় ও মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ করিনি। কারো দ্বারা প্রভাবিত হইনি, কোনো দরদাতাকে কোনোপ্রকার সুবিধা দেয়ার জন্য সুপারিশ বা চাপ প্রয়োগ করিনি।

আপনার মনে আছে এর আগেও আপনার পত্রিকায় যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস সংস্কার, নতুন গাড়ি ক্রয় এবং আমার গ্রামের বাড়িতে অতিথি-ভবন নির্মাণ সস্পর্কে অসত্য খবর প্রকাশ করা হয়েছিল।

পত্রিকার এসব অসত্য খবর জনমনে আমার সম্পর্কে ভুলধারণা সৃষ্টিতে কাজ করেছে। পত্রিকার এসব অসত্য লেখা, উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্টে জনমনে আমাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। যেমনি, সম্প্রতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে পত্রিকান্তরে অসত্য খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, সম্প্রতি জাতীয় সংসদেও স্পীকার কতিপয় পত্রিকার ভুল রিপোর্ট এবং প্রেক্ষিতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে সংসদের অনাকাক্সিক্ষত বিষয়টি রুলিং দিয়ে নিষ্পত্তি করেছেন।

পত্রিকার ভুল রিপোর্ট সংক্রান্ত কিছু বিষয়, যেগুলো আমার বেলায়ও ঘটেছে, ঘটে চলেছে। কতিপয় পত্রিকার অসত্য খবরের উপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবু সায়ীদ সমালোচিত হয়েছেন। এরকম মিথ্যা সমালোচনার শিকার আমি নিজেও।

আপনি জানেন, আমাকে গত বছরের ১৮ আগস্ট সংসদে পত্রিকার একটি ভুল রিপোর্ট নিয়ে দোষারোপ করা হয়েছিল। সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। অথচ এ দোষারোপের বিষয়ে আমার কোনো ভুল ছিল না।

অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে গত বছর সড়ক উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কারের অনেক কাজ সময়মত শেষ করা যায়নি। অতি বর্ষার কারণে কিছু সড়কে যাতায়াতে সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল।

এ নিয়ে সংসদে আলোচনারর পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি একটি সারসংক্ষেপ প্রেরণ করি। আমার প্রেরিত সারসংক্ষেপের বিষয়ে কতিপয় পত্রিকা অসত্য খবর পরিবেশন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত সারসংক্ষেপে কারো প্রতি কোনো অসৌজন্যমূলক কথা ছিল না।

সারসংক্ষেপের মূল কপিটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আছে। এর একটি ছায়ালিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। আমি যখন যোগাযোগমন্ত্রী, সে সময়ে আমার সম্পর্কে কতিপয় পত্রিকা ঢালাওভাবে অসত্য খবর প্রকাশ করে।

এ অসত্য খবরকে ভিত্তি করে টকশোতে আলোচনা হয়। পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা হয়। অথচ মূল খবর সঠিক ছিল না। অসত্য খবরই পরবর্তীকালে আবার খবর সৃষ্টি করে বের করা হয়েছে। মনে হয়েছে-এটা আমার বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ প্রপাগান্ডা।

এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনায় আমার দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ এনে, শহীদ মিনারে কচিকাঁচা ছোট্ট শিশুদের গলায় ব্যানার ঝুলিয়ে অনৈতিক দাবি তোলা হয়েছে। মিডিয়ায় ফরমায়েশি লেখা লেখানো হয়েছে।

কতিপয় পত্রিকার এসব অসত্য সংবাদের ভিত্তিতে, নামে-বেনামে চিঠি লেখা, স্বাক্ষর সুপার ইম্পোজ করে চিঠি লেখা এবং অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত অভিযোগ তোলা হয়েছে।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও মননশীল আইনজীবী এবং দেশের সিনিয়র সিটিজেন। চারিদিকে কারা হলুদ সংবাদিকতায় জড়িত, তা আপনার অজানা নয়।

পত্রিকার সাংবাদিক বিএনপি’র আমলে আমার সম্পর্কে অনেক অসত্য খবরভিত্তিক রিপোর্ট করেছে যার ভিত্তিতে সেসময় White Paper তৈরি করা হয়েছে, তদন্তে যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

সেসব মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আমার আমলনামা আপনারা তৈরি করে এখন বারবার বিক্রি করছেন। এবার যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার পর মন্ত্রীর অফিস সংস্কার, নতুন গাড়ি ক্রয় ও কালকিনিতে আমার বাড়ি নির্মাণ নিয়ে কতিপয় পত্রিকা বিশেষ করে প্রথম আলো অসত্য খবর প্রকাশ করে, অসত্য খবরের ভিত্তিতে সম্পাদকীয় লেখে, কার্টুন ছাপে।

সেগুলো সব মিলিয়ে, এ অসত্য খবর মিলিয়ে আমাকে বিতর্কিতভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে। যোগাযোগমন্ত্রীর ঐ অফিস এখনো বিদ্যমান আছে। আপনাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তা দেখে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমি প্রথমদিন থেকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সততা নিশ্চিত করে কাজ করেছি।

একথা বলার জন্য নয়, অসত্য খবরের প্রতিবাদের জন্য নয়-এটা সত্য, সত্য, সত্য কথা। আমার সময়ে প্রায় তিন বছরে যোগাযোগ খাতে যে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, যে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে, তা বিগত সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।

‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ নির্মাণে যে প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে পদ্মা সেতুর জন্য লেগেছে ২ বছর। পদ্মা সেতু নিয়ে যেসব কল্পনাপ্রসূত, বায়বীয়, ভিত্তিহীন, অসত্য অভিযোগ তোলা হয়েছেÑতা একদিন অসত্য প্রমানিত হবে।

এ অভিযোগ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের যে কারসাজি তাও প্রমাণিত হবে। গত জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১১-তিন বছরে যোগাযোগ খাতে যে কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, যে কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, যে কাজ শুরু হয়েছে তা বিগত ১০০ বছরের ভেতরে ৫ বছর মেয়াদি কোনো সরকার গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়নি।

আমার দায়িত্বপালন সময়ে এ উন্নয়ন প্রয়াস ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক ও ঐতিহাসিক দলিল বলে বিবেচিত হবে।

আমি আশা করি, আমার সহকর্মী, আমার বন্ধু, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী যোগ্যতা ও দক্ষতার সাথে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছেন এবং অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণে জাতীয় স্বার্থে মাননীয় সংসদ সদস্যদের অনুরোধে আরো নতুন প্রকল্প গ্রহণ করবেন।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আপনি জানেন বিগত দিনে আমার সম্পর্কে যেসব পত্রিকা অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করেছে তা দেশের উন্নয়নে বিরাট অন্তরায় হিসেবে যেমন চিহ্নিত হয়েছে, তেমনি আমাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

অনাহূতভাবে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমকে তিন বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। আমার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করা হয়েছে। মিডিয়ার এসব অসত্য খবরের ভিত্তিতে সুধীসমাজ পত্রিকায় কলাম লিখেছেন, মধ্যরাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার টকশোতে আলোচনা করেছেন।

সংবাদপত্রের অসত্য খবরে প্রভাবিত হয়ে আমার সম্পর্কে বিরূপ কথা বলেছেন। আমাকে দর্শকের কাছে, পাঠকের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এতে দেশের ভাবমূর্র্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে যার পরিণতি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়।

এটা পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। কারণ, এসব অসত্য সংবাদের ভিত্তিতেই, অধিকাংশ সময়, বিভিন্ন সংস্থা, বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরির মাধ্যমে সরকারের, দেশের কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে থাকে।

তাই মিডিয়ার অসত্য খবরের বিষয়ে আপনাদের নতুন করে চিন্তাভাবনা দরকার বলে আমি মনে করি। সম্প্রতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য মিডিয়া বিকৃত করে প্রচার করায় কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা আপনার অজানা নয়।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন প্রায় তিন বছরের কার্যক্রম নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক লেখা ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতায়-যোগাযোগ খাত’ নামক পুস্তিকাটি আপনার অবলোকনের জন্য পাঠালাম।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, আমি মনে করি, কতিপয় পত্রিকা এবং চিহ্নিত কিছু ব্যক্তি অসত্য লেখা ও বক্তব্য দিয়ে আমাকে বিতর্কিত করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। আমি একজন সৎ, আদর্শবান ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি।

আমি কখনো অন্যায় কোনো অন্যায় করিনি। অবৈধ কাজ করিনি। তারপরও কেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে বিতর্কিত করছে তা বোধগম্য নয়। এই অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক লেখার জন্য অনেকে আমাকে মামলা করার করার কথা বলছে।

আমি বা আমার পরিবারের কখনো কেউ মামলা করিনি, করবও না। তবে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে FIR করে রেখেছি।

শ্রদ্ধেয় মহোদয়, এ লেখা হয়তো আপনার ভালো লাগবে, হয়তো ভালো লাগবে না। তবুও আমি লিখেছিÑআপনাকে সত্য ঘটনা জানানোর জন্য, সত্য ঘটনা মনে করে দেয়ার জন্য।

হয়তো এ ব্যাপারে আপনি ইতিবাচক কোনো অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারবেন। আশা করি, আপনি সার্বিক বিষয় উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

গভীর শ্রদ্ধান্তে,
একান্তভাবে আপনার,
সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি
মন্ত্রী

আরো পড়ুন

Comments to: ড. কামাল হোসেনের কাছে সৈয়দ আবুল হোসেনের চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us