অরুণিমা,
ফরিদপুরের নগরকান্দায় যখন পা রাখি তখন মাঝ রাত। শেষ ডিসেম্বরের শীতের সময়। শহরবাসী আমার অচেনা ছিলো পদ্মার ওপারের শীত।
গাঢ় কুয়াশায় নগরকান্দার হিম যখন প্রথমবারের মতো স্পর্শ করলো, মনে হলো একশো কোটি সূচ চতুর্দিক থেকে আমাকে বিদ্ধ করলো। প্রচণ্ড এই শীতের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
শীত ঠেকাতে গায়ে গরম কাপড় থাকলেও পদ্মার ওপারের হিম প্রতিরোধে যথেষ্ট ছিলো না। আমি কাঁপুনি অনুভব করি। সুতীক্ষ্ণ সূচের আঘাতে যখন পর্যুদস্ত তখন শুরু হলো ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সাথে ফিনফিনে হাওয়া।
এমনিতে শীতে কাঁপছিলাম, বৃষ্টি হাওয়ায় ভিজে সে-কাঁপুনি চূড়ান্ত আকার নিলো। শীত ত্বক-মাংস-হাড় ভেদ করে মজ্জা পর্যন্ত পৌঁছে গেলো। দু’পাটি দাঁত এমন তীব্র ভাবে ঠকঠক শব্দ করতে লাগলো, যা থামানো অসাধ্য!
![](https://chithipotro.com/wp-content/uploads/2021/08/অরুণিমার-কাছে-চিঠি-1024x680.jpg)
যার বাড়িতে উঠবো তিনি নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত ছিলেন। মাঝরাতের হঠাৎ বৃষ্টিতে তিনি অবাক হয়ে বললেন, “কী আশ্চর্য এখন তো বৃষ্টি হবার কথা না!” তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন আমার দুর্দশায়।
আমরা চলার গতি বাড়াই। ভাগ্যিস বাড়ি দূরে নয়। তবু নিবাসে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যে-কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হলো তা মনে থাকবে আজীবন।
পরদিন ভোরে শরীরে যথেষ্ট কাপড় চাপিয়ে ঘরের দরোজা খুলে বের হলে যে-দৃশ্য দেখি তাতে তৎক্ষনাৎ রাতের মর্মভেদী ক্লেশ দূর হয়ে যায়।
গতরাতের ভয়াবহ শীতের জন্য যেমন প্রস্তুত ছিলাম না, পরদিন ভোরের দৃশ্যের জন্যও আমি প্রস্তুত ছিলাম না। রাতের গাঢ় কুয়াশায় অদৃশ্য ছিলো চরাচর, তাই বুঝতে পারি নি যে-পথ ধরে হেঁটে এসেছি তার দু’পাশে আদিগন্ত ছড়ানো হলুদ সর্ষে ক্ষেত!
সর্ষে ক্ষেত শুধু দেখেছি টিভিতে ক্যালেন্ডারে। বাস্তবে কখনো দেখি নি। তাই সেদিন ভোরে দিনের সূর্যের প্রথম রোদ আর কুয়াশার কাঁচের মধ্য দিয়ে অফুরন্ত হলুদ সর্ষের মাঠ যখন দেখলাম গতরাতের মতো ভীষণ কেঁপে উঠলাম।
তবে এবার সুখে। পরম ভালো লাগায়। সীতাকুণ্ডের সমুদ্র পাড়ের শেষ বিকেলের লাল নীল শুভ্র আকাশ দেখে আনন্দে কেঁদে দিয়েছিলাম, নগরকান্দার সে-শীতের ভোরে চরাচরব্যাপী হলুদ সর্ষে ক্ষেত দেখে আমার চোখে আবারও পানি এলো।
অরুণিমা, তোমার টাইমলাইনে গিয়ে নতুন পোস্ট না-দেখলে নগরকান্দার সে-শীতের রাতের মতো কষ্ট পাই, আর দেখলে সুখে অভিভূত হই পরদিন ভোরের মতো।
যত্ন নিও
ইতি
রুদ্র
লেখা: রুদ্র আজাদ
আরো পড়ুন
No Comments
Leave a comment Cancel