অরুণিমা,
তোমাকে আজ আমার ছেলেবেলার একটা গল্প বলিঃ তখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। স্কুলের অংকের স্যারের নাম রহিম। কিন্তু রহম বলে তার ভেতর কিছু ছিলো না। ভয়ংকর রাগী।

অতটুকু ছেলেমেয়েদের মারতেন খুব। তিনি একদিন ক্লাসে ঢুকে হাতে বেত নাচাতে নাচাতে বললেন, “জ্যামিতি বক্স যারা যারা আনিস নাই উঠে দাঁড়া।” সেদিন আমি জ্যামিতি বক্স আনি নি।

আসন্ন মারের কথা ভেবে বুক শুকিয়ে গেলো। আমার পেছনে যে-বন্ধুটি বসেছিলো সে জ্যামিতি বক্স এনেছিলো। বন্ধুটি অনুভব করলো আমার দুরাবস্থা। তখন সে অভাবনীয় একটা কাজ করলো।

যা আমার মতো দুর্বল চিত্তের পক্ষে করা সম্ভব হতো বলে মনে হয় না। সে তার জ্যামিতি বক্সটি আস্তে, যাতে কারো নজরে না-পড়ে, আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।

স্যারের মারের ভয়ে আমি এমনই স্থাণু হয়ে গিয়েছিলাম যে, বন্ধুটির দেয়া বক্সটি ফিরিয়ে দিতে পারি নি। এটাও ভাবতে পারি নি যে, এখন তো ও মার খাবে।

তারপর শুরু হলো স্যারের নির্দয় প্রহার যারা বক্স আনে নি তাদের ওপর। যারা বক্স আনে নি তারা একে একে এগিয়ে যাচ্ছে টেবিলের কাছে, আর ভোগ করছে নিষ্ঠুর আঘাত।

বন্ধুটির পালা যখন এলো সে ধীর পায়ে হেঁটে গেলো টেবিলের দিকে। স্যারের শক্ত জালিবেত সাঁই সাঁই করে বসে যাচ্ছিল ওর ছোট্ট কোমল দুই হাতের তালুতে।

আমি স্থির চোখে দেখলাম তার নির্মম প্রহারের দৃশ্য। মার শেষে যখন ফিরে যাচ্ছিলো, তখন আমার দিকে তাকিয়ে ও হাসলো। যেনো বলতে চাইছে তার কিছু হয় নি।

কিন্তু এটা যে মিথ্যে তা উপলব্ধি করতে বেগ পেতে হয় নি।

অরুণিমা, সেদিন মনে হয়েছিলো, মার না-খেয়ে আমি জিতেছিলাম। কিন্তু আজ বুঝতে পারি, সেদিন আমি নই, জিতেছিলো অসাধারণ সেই ছোট্ট বন্ধুটি।

যত্ন নিও

ইতি
রুদ্র

(বিঃদ্রঃ ছেলেবেলার সেই অসাধারণ বন্ধুটির সাথে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। প্রকৃত বন্ধু কখনো ছেড়ে যায় না।)

লেখা: রুদ্র আজাদ

আরো পড়ুন

Comments to: অরুণিমার কাছে চিঠি-০৭

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us