অরুণিমা
তোমাকে দেখার পর আমি আর কবিতা পড়তে পারি নি। অথচ তোমাকে দেখার পূর্বে কবিতা এবং কবিতাই ছিলো আমার একমাত্র প্রেমিকা।
আমার আবেগ অনুভূতি উপলব্ধি চিন্তা, খুঁজে পেতাম সেখানে। আমার অনুরাগ উপমার পাখা মেলে উড়তো সমুদ্রের জল ছুঁয়ে। আমার প্রেম চিত্রকল্পের ঘোমটায় ফুলসজ্জার বউ হতো।
আমার আসক্তি নান্দনিক ভাষায় রূপান্তরিত হতো গজলে। আমার প্রীতি অনুকবিতার টিপ কপালে এঁটে অমল হাসতো। আমার স্নেহ মিত্রাক্ষরে বন্ধু হয়ে হাত রাখতো কাঁধে।
আমার ভালোবাসা অনায়াসে অন্ত্যমিল পেয়ে যেতো গদ্য কবিতায়। আমার শোক নির্ঝর হয়ে বয়ে যেতো গীতিকাব্যে। আমার দারিদ্র্য স্ফীত বুকে শিখতো অভিনয় নাট্যকাব্যের কাছে৷
আমার ক্রোধ ছন্দ তালে নিখুঁত বাজতো শব্দ কবিতায়। আমার বিচ্ছেদ হতো তিন পংক্তির হাইকু। বিরহ হতো চার পংক্তির রুবাই। কিন্তু তোমাকে দেখার পর যে-আবেগ জন্ম নেয় আমার ভেতর, কবিতার ছন্দে তা মেলে না।
যে-অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তা বেতাল লাগে কবিতায়। যে-উপলব্ধির দ্বার প্রান্তে পৌঁছাই, কবিতায় তার কোনো হদিস নেই। যে-চিন্তার গাংচিল ওড়ে আমার মস্তিস্কে, তার সন্ধান নেই কবিতায়।
তোমাকে দেখার পর হৃদয় মথিত যে-নিশ্বাস নিঃসৃত হয়, কবিতায় অনুপস্থিত তার বৃত্তান্ত। তোমাকে দেখার পর অনুকাব্য থেকে মহাকাব্য, গদ্যকাব্য থেকে পদ্যকাব্য, চতুর্দশপদী থেকে অমিত্রাক্ষর পুরো কবিতার সাম্রাজ্যের চোখ ধাঁধানো প্রাচুর্যময় অলঙ্কৃত অট্টালিকায় শ্যাওলা ধরলো, অন্দরমহল হলো স্যাঁতস্যাঁতে গুমোট, দেয়ালে গজালো গাছপালা, চৌকাঠ জানালা রেলিং খুলে পড়লো, ঘুণে খেলো কড়িকাঠ তক্তা, ধসে পড়লো ছাদ, সিঁড়ি ভেঙে পড়লো, সিরামিক টাইলসে ফাটল ধরলো, খিলানে ধরলো মরিচা, কার্নিশে বেড়ে উঠলো আগাছা।
তোমার মাধুর্যের কাছে কবিতা লজ্জাবতী পাতার মতো ম্লান গুটিয়ে গেলো। অরুণিমা, তোমাকে দেখার পর আমি আর তাই কবিতা পড়তে পারি নি। অতঃপর তুমি এবং তুমিই হলে আমার একমাত্র প্রেমিকা।
ভালো থেকো
ইতি
রুদ্র
লেখা: রুদ্র আজাদ
আরো পড়ুন
No Comments
Leave a comment Cancel