অরুণিমা,
আমার মুখে অসংখ্যবার শুনেছো ছেলেবেলার গল্প। এমন হয়েছে একই ঘটনা একাধিকবার বলেছি। বলতে ভালো লাগতো বলে তুমি ধৈর্য নিয়ে শুনতে। হয়তো মনে মনে বিরক্ত হতে, কিন্তু কখনো প্রকাশ করো নি।

আমি তোমাকে বলতাম কী কী জিনিস দেখলে ছেলেবেলা ফিরে আসে। যেমন, লাটিম, ঘুড়ি, নাটাই, মারবেল, টেনিস বল, ফুটবল, ফড়িং, গোল্লাছুট, হাডুডু ইত্যাদি।

একদিন একটা খাম দিয়ে বললে, “বাসায় গিয়ে পোড়ো।” সে-রাতে ঘুমোনোর আগে খামটি খুলে দেখি একটা চকোলেট আর একটা চিরকুট। তাতে লেখা, “তুমি ছেলেবেলা খুব ভালোবাসো।

তাই এক টুকরো ছেলেবেলা দিলাম তোমাকে। মাত্র দুই টাকায় কিনেছি। মনে করে খেয়ো।” এক হাতে চিরকুট অন্য হাতে চকোলেটটি নিয়ে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম! এক জীবনে উপহার তো কম পাই নি।

আমার কিছু আত্মীয়, বন্ধু দেশের বাইরে থাকে। তারা দেশে এলে নানারকম চমকপ্রদ উপহার নিয়ে আসে। দেশের প্রিয়জনদের কাছ থেকেও ঈদে পার্বণে উপহার মেলে।

উপহার মেলে তোমার কাছ থেকেও। এই তো গত বৈশাখে তুমি লাল পাঞ্জাবি দিলে, আঙরাখা কাট, সাথে উত্তরীয় আর চুড়িদার।

তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমার চাকরি হয়েছে শোনার পর তুমি আমাকে দিয়েছিলে ব্ল্যাক আর নেভি কালারের দুটো শার্ট। বই তো তোমার থেকে প্রচুর পেয়েছি।

কিন্তু উপহার যে চিরকুট আর একটা চকোলেট হতে পারে এ-আমি দূর কল্পনাতেও ভাবি নি! ও দুটো মুঠোয় নিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম।

তখন যে আনন্দ হলো, সারি সারি দামী উপহারও তা দিতে পারে নি। স্তব্ধতা কাটলে চকোলেটটি মুখে পুরি, আর জীবনের সবচেয়ে তৃপ্তিময় হাসিটি হাসি। সেই ছেলেবেলার পর আর কখনো চকোলেট খেয়েছি বলে মনে পড়লো না।

তাই মুহূর্তে পুরো ছেলেবেলাটা ফিরে এলো। তবে এবার সে একলা এলো না, সাথে আনলো এক রাশ মিষ্টি ভালোবাসা, তোমার।

ভালো থেকো

ইতি
রুদ্র

লেখা: রুদ্র আজাদ

আরো পড়ুন

Comments to: অরুণিমার কাছে চিঠি-০৪

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us