সুজয়দা,
তোমার নামটি লিখতে গিয়ে আমি কাটাকুটি করেছি মোট চারবার। কথাগুলো তোমাকে লিখতে চাইনা বলেই হয়ত। একটি চিঠির প্রাপকের নামটাও আমি জানি না।

কলম খুব খারাপ জিনিস, বুঝলে! কলম অসত্য লিখতে থেমে যায়। কলম আবেগের এতটুকু ওঠানামায় প্রতিবাদ করে বলে, আমাকে দিয়ে অসুন্দরের সৃষ্টি কোরো না।

এই পবিত্র অস্ত্রটি দিয়ে আমি বহুকাল অপবিত্র কিছু করতে চেয়েছি, অসত্য ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি মস্তিষ্কের সব অলংকৃত শব্দের সমাহার ঘটিয়ে৷ আমি পারিনি। হেরে গেছি।

তোমাকে বহুবার প্রেমপত্র লিখতে চেয়েছি। বার বার চেয়েছি, যে পুরুষটি আমাকে ছেড়ে গেছে প্রয়োজন ফুরোতেই- তাকে এক কবিতায় জর্জরিত করে দেই। আমি পারিনি। তোমাকে কি তাহলে আমি ভালবাসি না?

আমি জানি না। আমার গত কিছুদিন যাবৎ চিৎকার করে খুব ভালবাসি বলতে ইচ্ছে করে। কি করে বলি বলো তো! পরিত্যক্ত খাতাটাও কবি তুলে রাখে এই ভেবে, কবিতাগুলো মানুষের হোক- খাতার বিচিত্র অংকনগুলি থাক একান্ত।

এই একান্তের লোভে আমি আমার পরিত্যক্ত অতীত মুঠোয় নিয়ে চলি। তুমি যখন আমার জীবনে এলে একশ গোলাপের ভালবাসাও আমাকে ভুলতে দেয় না অবিমৃষ্যকাল।

অথচ আমি আগে কি ক্ষ্যাপা পাগলাটে ছিলাম- তুমি ভাবতে পারবে না। যদি আমার ইচ্ছে হত এক ঠোঙা বাদাম হাতে শাহবাগ মোড়ে সকাল থেকে মধ্যসন্ধ্যা দাঁড়িয়ে থাকার, আমি অবলীলায় থাকতাম। ভালবাসার প্রচন্ড সব বহিঃপ্রকাশে তোমাকে পলাতক আসামী করে ছাড়তাম।

সময় বুঝি আমার ফুরোলো, জানো! কত যুগ পরে আমার দেহের সবকটা হাড় প্রত্নতাত্ত্বিকের চিন্তার কারণ হবে জানি না। এই আধো অন্ধকার ঘরে গায়ে এক সূত্র বসন না আকড়ে নিজেকে জংগলে কল্পনা করছি।

খ্রিষ্টের হিসেব আমার নেই। খ্রিষ্টেরও নেই আমার হিসাব। যিশু জন্মের দুই হাজার ও একুশটি বছর পরে কোন এক শালা খবর পেয়েছে আমার। আমি নিশ্চিতভাবেই মূল্যবান কিছু ধ্বংসাবশেষ ছাড়া কিছু নই।

সকাল থেকে কিছু খাইনি, জানো! মনে হচ্ছে ভরপেটে লিখতে পারব না। একটা বাক্য লিখতে পারার কি শান্তি তোমাকে বোঝাতে পারব না।

লেখা কালি দিয়ে লেখে, অথচ কালিমা একে ছোয় না। কালির মত সুন্দর পবিত্র জিনিস লোকে ভয় পায়। সম্ভব হলে আমি সারা গায়ে কালি মাখবো। তুমিও আমার জন্যে ‘কালি’, তাই না?

আমার ঘরে এখন কৌশিকি চক্রবর্তীর তানপুরায় অপরিচিত একটি সুর বাজছে। আমি তোমাকে লিখছি। আমি যদি পারতাম, তোমাকে ওই সুরটিতে লিখতাম, জানো! সুর কলমে তোলা যায় না।
এমনি এভাবে, বঞ্চিত বসুন্ধরা আমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি থেকে।

ইতি
অরুন্ধতী

লিখেছেন: ফাতেমা তুজ জোহরা জুঁথি

Comments to: সুজয়দা তোমাকে লিখছি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us