বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছোটবেলা হারিয়ে যায় দায়িত্ব আর কাজের চাপে। তাই যদি বহু বছর পর একদিন সেই ছোটবেলায় কিছুক্ষণের জন্য ফিরে যেতে চাই সত্যিই কী ফিরতে পারবো? সত্যিই কী পারবো আরো একবার তাকে নিজের সাথে এক করতে। ধরো কেটে গেছে বহুবছর।
সেদিনের সেই মেয়েটা যার উপার্জন ছিল বাবার দেওয়া জমানো টাকা আজ সে ভালো মাইনের চাকরি করে। আছে নিজের গাড়ি বাড়ি সব আছে। কিন্তু একদিন তার ইচ্ছে হল আবার আগের মতো সবটা করতে। তাই গাড়িটা সার্ভিসিং এ দিয়ে মেট্রো করে বাড়ি আসবে ঠিক করলো। মেট্রো থেকে নেমে বাকীটুকু হেঁটেই বাড়ি ফিরবে সে।
সকালবেলা ক্যাবে অফিস গেলেও ফেরার পথে তার মাথায় এই হেঁটে আসার আইডিয়াটা আসে। কানে থাকা হেডফোনে একের পর এক ইংলিশ গান চলছিল। মেট্রো থেকে নেমে বাংলা গান চালিয়ে দিয়ে হাঁটতে শুরু করে ও। এটা তার কলেজ জীবনের শটকার্ট রাস্তা। আগে অবশ্য পাক্কা কুড়ি মিনিট লাগত এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি যেতে।
তবে এখন আর অতো হাঁটার অভ্যেস নেই। তখন গাড়ি ভাড়ার দশ টাকা বাঁচানো বিশাল ব্যাপার ছিল তার কাছে। এখন কর্পোরেট দুনিয়ায় থাকতে থাকতে এসব কিছু নিছকই ছেলেমানুষী লাগে ওর। আর এখন মাসের শুরুতেই মাইনেটা যখন পায় আর কোনো কিছুই না পাওয়া থাকেনা ওর।
এসব ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছিল তখন হঠাৎ একটা কুলফির গাড়ি ওর সামনে এসে পরে। চোখ তুলে সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটা বৃদ্ধ মানুষ শরীরের ভারে প্রায় নুইয়ে পরেছে একদম। এটা দেখে আর কিছু বলেনা ও। চলেই যাচ্ছিল তখন হঠাৎ সে বলে ওঠে
— কুলফি খাবে? বেশি না মাত্র কুড়ি টাকা।
কী মনে হতে পকেট হাতড়ে একটা একশো টাকা বের করে পাঁচটা কুলফি কিনে নেয় সে। তারপর একটা খেতে খেতে হাঁটতে থাকে ও। আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই ছোট মেয়েটা যে মন না ভরলেও দশ টাকার একটা কুলফি কিনতো। যে মেয়েটা স্কুলে পাঁচ টাকার আলুকাবলির জন্য আলুকাবলিওলার সাথে ঝগড়া করতো।
আজ যেনো মোটা মাইনের চাকরি তাকে কোথাও বিলুপ্ত করে দিয়েছে। আচ্ছা মানুষ কী এভাবেই বদলে যায় নাকি কেবল ও একাই বদলে গেছে? তা ঠিক ওর জানা নেই। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি চলে আসে অর্না।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো পনেরো মিনিটের জায়গায় আধ ঘন্টা লেগে গেছে আজ। তবে সেই ছোটবেলা ওকে আর আপন করে নেয়নি। কেবল সেই আবছা হতে থাকা স্মৃতিগুলো আজ একটু পরিষ্কার হয়ছে এছাড়া কিছুই না।
ইতি ছোটবেলা সন্ধানী
কলমে — প্রজ্ঞা চক্রবর্তী
কোলকাতা , ইন্ডিয়া
No Comments
Leave a comment Cancel