প্রিয়তমা,
কেমন আছো? ভালো আছো নিশ্চয়ই? আমি ভালো আছি। ভালো থাকারই কথা। তোমার মতো এত দারুণ একটা মানুষের সাথে কেউ খারাপ থাকতে পারে? আজ তোমাকে আমি লিখতে বসেছি। যেনতেন কিছু না কিংবা কোনো প্রেমপত্রও না।

তোমাকে আমি চিঠি লিখতে বসেছি। সভ্যতার এ যুগে আমাদের আবেগ অনুভূতিকে মলিন করে দিয়েছে। চিঠি নামক ভালোবাসা ভরা কথাগুলো এখন হারিয়ে গেছে। আর এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের মাধ্যমে মনের কথাগুলো তোমাকে লিখলাম।

প্রিয়া, প্রথম যেদিন তোমার সাথে পরিচয় হয়েছিল সেদিনের কথা মনে আছে? একজন অপরিচিতা মেয়ের সাথে আমার যেমন আন ইজি লাগছিল, ঠিক তেমনি তোমারও আন ইজি লাগছিল। তখনো আমরা জানতাম না আমাদের বিয়ে হবে। তোমার সরলতা, সততা দেখে আমি মুগ্ধ হই।

এ যুগে এরকম মেয়েও আছে! কেমন যেন একটা ভালোবাসার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। এরপর বাবা-মাসহ তোমার বোনের বাসায় তোমাকে দেখতে গেলাম। আহ! তোমাকে সরাসরি দেখার পর নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারলাম না। তুমি যে কল্পনার চেয়েও সুন্দর। এরপর কিভাবে যে বিয়ে হয়ে গেল টেরই পেলাম না। তবে বিয়ের আগে উৎকণ্ঠায় ছিলাম বিয়ে হবে কি না।

এরপর একদিন বিয়ে হয়ে গেল। পরীর মতো একটা বউ এলো আমার ঘরে। যাকে এক মুহূর্ত না দেখলে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। আমাদের সংসার জীবন শুরু হলো।

প্রিয়তমা, আমি জানি আমি হয়তো তোমার অনেক প্রয়োজন মেটাতে পারিনি। ইচ্ছে থাকলেও আমার সে সাধ্য নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি। আমাদের অনেক সংগ্রাম করে বড় হতে হয়। তুমি আমাকে খুব ভালো করে বুঝো, জানো।

তাই তো তুমি বলেছিলে, তোমাকে ভালোবাসা দিলেই তুমি খুশি। আর কিছুই দিতে হবে না। যেন তোমাকে ছেড়ে কোথাও না যাই। আমার অর্থ না থাকুক, কিন্তু ভালোবাসার কমতি ছিল না। আমি তোমাকে ভালোবাসি আমার জীবনের চেয়েও বেশি।

প্রিয়তমা, আমি জানি এ যুগে এরকম স্ত্রী পাওয়া দুষ্কর। আমাদের দু’জনের ছুটে চলা নিরন্তর কোনো এক সমান্তরাল সীমারেখার দিকে। যেখানে শুধু ভালোবাসা দিয়ে সাজানো হয়েছে পৃথিবী। এখানে আছে একটুখানি মান-অভিমান। ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় পরস্পরকে অতিক্রম করার অভিপ্রায়।

প্রিয়া, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি? ব্যর্থতার ভারে আমি যখন হতাশ হয়ে যাই তখন তুমি আমার পাশে ছায়ার মতো থাকো। এরকম একজন স্ত্রী পাশে থাকলে কোনো স্বামীই জীবনে ব্যর্থ হবে না।

অনেক তো বকবক করলাম। এবার বলো তোমার কী অবস্থা? স্বামী, সংসার নিয়ে সুখী তো? আচ্ছা তুমি কি একা থাকলে আমাকে খুব মিস করো? তখন তুমি কী করো? আচ্ছা বাসায় যখন একা থাকো, তখন আমাকে কি মনে পড়ে? পড়ে নিশ্চয়ই? তখন কি আমার কথা ভেবে কয়েক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন দাও?

প্রিয়তমা, আমার জন্য কখনো অশ্রু বিসর্জন দিও না। তোমার চোখের জল আমার জন্য অভিশাপ হয়ে আসবে। আমি চাই তুমি হাসবে। হাসিখুশিতে মেতে উঠবে তোমার জীবন। তোমার জীবনে কোনো হতাশা থাকবে না, দুঃখ থাকবে না। তুমি হবে সবচেয়ে সুখী মানুষ।

আচ্ছা, আজকে কি রান্না করেছ? মাছের চচ্চড়ি করেছ? নাকি কুমড়ার শাক ভাজি করেছ? নাকি ইলিশ মাছের দোপেয়াজা? ইস! তোমার রান্নার এত বেশি ভক্ত আমি তা বুঝাতে পারব না। সত্যি তুমি অনেক ভালো রান্না করতে পারো। রান্নার সময় তুমি এত বেশি মনযোগী থাক তা আমাকে অবাক করে।

প্রিয়, তুমি জানো? তোমাকে নিয়ে কেউ সুনাম করলে আমার বুকটা অনেক বড় হয়ে যায়। আমি জানি তোমার কোনো হেটার্স থাকতে পারে না। কারণ তোমার পরিমিতিবোধ, তোমার ব্যক্তিত্ব অন্য যে কারো থেকে আলাদা করে দেয়।

প্রিয়তমা, আমি তোমাকে একজন সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখতে চাই। তোমার জীবনের সব ইতিবাচক পদক্ষেপে আমি সহযোগিতা করব। কোনো ভুল হলে শুধরে দেবো। আমাকেও শুধরে দিও। জীবনের কোনো মুহূর্তে আমাকে ভুল বুঝো না।

মনে কোনো প্রশ্ন জাগলে আমাকে জিজ্ঞাসা করো। আমি চেষ্টা করব সুন্দর করে উত্তর দিতে। একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমাদের ভালোবাসার এক মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয়। আমরা এ সময়গুলো আর ফিরে পাব না। তাই এই সোনালি মুহূর্তগুলো হারাতে চাই না।

প্রিয়তমা, দেখতে দেখতে আমাদের সংসার জীবন এক বছর পার করলাম। সত্যি স্বপ্নের মতো সময়গুলো কেটে গেল। আগামীর দিনগুলোও যেন এভাবে কেটে যায় সে দোয়াই করো। আগামীর দিনগুলো যেন আরো সুখী সমৃদ্ধিময় হয় সে আশীর্বাদ করো।

আজ আর নয়, আবার না হয় আরেক সময় লিখব। সেদিন হয়তো আরো বেশি ভালোবাসাবাসির কথা লিখব। সেদিনের অপেক্ষায় থেকো। অনেক অনেক ভালো থেকো সেই শুভ কামনা রইল।

ইতি
তোমার স্বামী

Comments to: ভালোবাসার চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us