একবার যদি কেউ সত্যি করে ভালবাসত।
আমার নয়ন দুটি জলে বাসত
আর ভালবাসত…

মোবাইলে সাবিনা চৌধুরীর গাওয়া আমার খুব প্রিয় গানটি বাজছে। ঘরের দরজা খুলা এলোমেলো বাতাস এসে মনটাকে ব্যাকুল করে দিচ্ছে। আর কেন জানি মনটা উদাসিনতায় ভুগছে।

শেষ বিকালে আকাশে মেঘের নকশা থাকার কথা, অথচ আকাশ জুরে ছিল শ্রাবনের কালো মেঘের ঘনঘটা। মনে হচ্ছিল আকাশ ছেলের খুব মন খারাপ। হয়ত সে তার প্রিয়জনের উপর অবিমান করেছে।

তাই তার হ্রদয় থেকে অবিরাম ঝরছে অবিমানের অশ্রু বিন্দু বৃষ্টির অঝোর ধারা হয়ে। আকাশের কত সুবিধা তার মন খারাপ হলে বৃষ্টির অঝোর ধারার মাঝে তার কষ্টের বোঝা ঝরিয়ে নিজেকে হালকা করতে পারে।

কিন্তু আমি সাধারন এক মানবী হয়ে ও হ্রদয়ের গভিরে তিলে তিল জমে থাকা হিমালয়ের মতো কষ্টের বোঝাকে চোখের জলে ঝড়াতে পারিনা।

মাঝে মধ্যে মনে হয়, যেন কাঁদতেই ভুলে গেছি। শেষ বার কবে আকুল ভাবে কেঁদেছি মনেই পড়েনা। শৈশবে কৈশোর তারুণ্য,একে একে কেটে গেছে অনেকটি গ্রীষ্ম -বর্ষা-শীত ও বসন্ত।

সময়ের আর্বতে বয়ে যায় সময়। সেই আর্বতে প্রতিনিয়ত ঘুর পাক খেতে খেতে দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনে আর নির্মম বাস্তবতার টানা পোড়নে, জাগতিক – চসওয়া পাওয়ার দাড়ি পাল্লা -রূপ ঐশ্বর্য আর অভিজাত্যের মাপকাটিতে হ্রদয়ের কোমল প্রত্যাশা এবং অনুভবগুলো বারবার পরাজিত হয়েছে।

অবাক বিস্ময়ে শুধু দেখিছি স্বার্থের টানে মানবিক বোধগুলো কত দ্রুত বদলে যায়।অতি আপনজন কিভাবে হয়ে যায় অচেনা। এসব দেখতে দেখতে কখন যে হ্রদয়ের সাজানো স্বপ্ন আর কোমল অনুভব গুলো পাথর চাপা ঘাসের মতো বির্বন হয়ে গেছে তা টেরই পাইনি।

সুনীলের সেই বিখ্যাত কবিতার মতো একশ আটটি নীল পদ্মতো দূরের কথা, হুমায়ন আহমদের গল্পের নায়কা হিমুর মতো মাত্র পাঁচটি শাপলা ফুল নিয়ে কেউ আজও আসেনি এই হ্রদয়ের দ্বার প্রান্তে অপ্রাপ্তি, উপেক্ষা আর বঞ্চনার তুষার পাতে।

একান্ত অনুভবের পৃথিবীতে আজ শুধু এন্টার্কটিকার হিম শীতল নিস্তব্দতা। হিরোশিমার ধ্বংস স্তূপের মতো স্বপ্নের ভাঙা টুকরো বুকে নিয়ে অনাগত ভবিষতের দিকে আজ অন্তহীন পদ যাত্রা…।

কোন কোন রাতে ঘুমহীন চোখে অনন্ত নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে রাতের আকাশের বুকে খুজি সহানুভুতিশীল কোন মানুষের দীপ্ত পদরেখা। কিন্তু মেলেনা কিছুই। হ্রদয়ের পলি মাটিতে শুধু যন্ত্রণা আর ঝড়া পাতার দির্ঘ নিঃশ্বাস। মনে পড়ে প্রিয় কবিতার কিছু লাইন…

কোন একরাতে শিশির ঝরার
মতো নিঃশব্দে ঝড়ে যাব আমি।
থাকবো না আমি কারো
চোখের দু ফোটা অশ্রু হয়ে,
কিংবা কারো বুকের গভীরে
দীর্ঘ নিঃশ্বাস হয়ে ,
কারো হ্রদয়ের আয়নায় পড়বে না আমার কোন প্রতিচ্ছবি।
কোন নিস্তব্দ রাতে শুকতারাটির দিকে
তাকিয়ে কেউ বলবে না
বাবুল তুমি কেমন আছ !

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে লোনা জলের ঝরনা ধারা,বুকের গভীরে ওঠে কষ্টের ঘূর্নিঝড় তা টেরই পাইনা।

শুধু হ্রদয়ের অতল থেকে লক্ষ কোটি – রক্ত কনিকা থেকে সৃষ্টি হওয়া দীর্ঘ এবং গভীর এক নিঃশ্বাস ঝরে পড়ে অজান্তেই, বাতাসে মিশে হয়ে যায় কার্বন ডাই- অক্সাইড।

তারপরও সাবিনা চৌধুরীর গানের মতো কিংবা সুনীলের কবিতার মতো একশ আটটি নীল পদ্ম হাতে নিয়ে কেউ বলে না ভালবাসি।

জানিনা আমার ছোট চাওয়াটি কখনো পূরন হবে কিনা। জানি না এক জীবনে শৈশবের সেই স্বপ্ন মেয়েটির সন্ধান কখনে পাব কিনা। তবু ও অন্তহীন প্রতিক্ষায় কাটে প্রতিটি সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাত।

শুধু বিবর্ণ স্বপ্নের পৃথিবী জুরে কষ্টের ঘুন পোকা সৃষ্টি করে চলে ধ্বংসের সামাজ্য-আর স্বরচিত কবিতার সঙে চলে নিত্য বসবাস হাতের সামান্য স্পর্শেই ঝরে যায় ভালবাসা বৃক্ষের সব পাতা ।

আর কি লিখব, লিখতে লিখতে কলমের কালি যদি শেষ হয়ে যায়। শেষ হবে না এ জীবনের গল্প লেখা !!!

লিখেছেন: সাইফুল ইসলাম বাবুল

Comments to: স্বপ্নে বিবর্ণ এ মন

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us