দি,
আজ তোকে অনেক কিছুই বলতে চাই, জানি না কতোটুকু বলতে পারবো। তবে তা আমি একটুও রেগে বলছি না বিশ্বাস কর। ছোটো থেকে আজ পর্যন্ত তুই আমার পাশে আছিস, মা কাজের জন্য বাড়িতেই থাকতো না তখন থেকেই তুই পাশে থেকেছিস।
যদি কখনও মা এর জায়গাটা কাউকে দেওয়া যায় তবে সেটা শুধুমাত্র তোর । তবে আমার সবটা জুড়ে তুই থাকলেও এখন যেনো জায়গাটা ভাঙছে জানিস তো।
তোর হয়তো মনে নেই তুই একদিন ঝগড়ার সময় আমায় বলেছিলি ‘তোর গায়ের রং যেমন তোর মূখের কথা গুলো ও তেমন’ সেদিন বড্ড একা হয়ে পড়েছিলাম বিশ্বাস কর।
মানছি আমি শ্যামবর্ণ তোর মতো অত ফর্সা কিংবা সুন্দর নই তবে আমি কখনও ভাবিনি যেই মানুষটাকে নিজের অনুপ্রেরণা হিসেবে মেনে এসেছি যে বলেছিল লোকের কথায় কান না দিতে। সেই মানুষটাও সেদিন আমায় আমার গায়ের রং নিয়ে বলেছিল, সেদিন বুঝেছিলাম মানুষ শুধু সুন্দর আবরণ টাকেই পছন্দ করে।
সেদিন আমি অনেক কেঁদেছিলাম সবার অগোচরে কেউ খোঁজ রাখেনি আমার, সেদিনের সেই ঘটনার পর অনেক কষ্টে সামলেছিলাম নিজেকে। মনকে এটা বলে মানিয়েছিলাম যে তুই ওটা রাগের মাথায় বলেছিস।
এরপর সব ঠিক ঠাক ভাবেই চলছিল তুই আবার আমার সাথে হেসে খেলে দিন কাটাচ্ছিলি, সত্যি বলতে আমি আমার জিবনে মা বাবা কাউকেই পায়নি। বাবা তো সেই ছোটবেলাতেই ছেড়ে চলে গেলো। মা কাজের জন্য বাইরেই থাকতো তুইও কাজ করতি তবে সাথে থাকতি তুই।
মা এর জায়গাটা তোকেই দিয়েছি সেদিন থেকে মাঝে মাঝে তুই অনেক কিছু বলিস যেটা আমার মনটা ভেঙে গুড়িয়ে দেয় তবও সেটা পুনরায় ঠিক করেনি। তবে আজ আবারো তুই সব ভেঙে দিলি। যখন শুনলাম তোর শ্বশুর বাড়ির লোকের সামনে আমায় নিয়ে পরিচয় করাতে তোর লজ্জা করবে।
আর যখন আমি নতুন জামাটা পড়লাম তখন তুই আবারও বললি, তুই কি নিজেকে খুব সুন্দর মনে করিস, চেহারা তো ওই রকম তাতে আর এই জামা পড়িস না আমার মানসন্মান থাকবে না। আর তোর সাথে সাথে মাও ছি ছি করে উঠলো।
নিজেকে নিজের পণ্য মনে হচ্ছিলো যাকে দেখে লোক ভালো খারাপ বিচার করে। আমি ভেবেছিলাম তোরা আমায় সাহস দিবি বলবি আমি যেমন তেমনই ভালো অন্তত তোর কাছে তা আশা করেছিলাম।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম আসলে এই দুনিয়ায় নিজে ছাড়া আর কেউ আপন না, আমি তোদের থেকে অনেক দুরে চলে যেতে চাই যেদিন আমি স্বাবলম্বী হয়ে নিজের পায়ে দারাব সেদিন আমি স্বেচ্ছায় চলে যাবো কিন্তু কখনও তোদের দোষ দেবো না।
– ইতি
তোর ছুটি
লিখেছেন: রিয়া বিশ্বাস
No Comments
Leave a comment Cancel