খোকা,
কেমন আছো? আশা করি ভালই আছো। বৌমা ও নিশ্চয় ভালো আছে। তোমরা সবাই ভালো থেকো এটাই সবসময় আমার কামনা।
খোকা, আজ সাতটি বছর হয়েগেছে তোমাদেরকে দেখিনাই। আজ বড় ইচ্ছে করছে দেখতে; কিন্তুু সেই সুযোগ তো আর নেই। তোমার অফিস নিয়ে তুমি ব্যস্ত, বৌমা তার অফিস নিয়ে ব্যস্ত আর আমার দাদু ভাইটা নিশ্চয় লেখা পড়া নিয়ে অনেক ব্যস্ত আছে। নিশ্চয় দাদু ভাইটা অনেক বড় হয়ে গেছে ! তাকে আমার আদর দিও।
খোকা, বৃদ্ধাশ্রমে আজ সাতটি বছর কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি। কিভাবে বুঝব বল, এখানকার ছেলে-মেয়েগুলো এত ভালো যা বলার বাহিরে। ওরা যখন নিজ হাতে খাইয়ে দেয় তখন মনে হয় এই বুঝি আমার খোকা আমাকে আদর করে(তার বৃদ্ধ বাবাকে) খাইয়ে দিচ্ছে।
কিন্তুু আফসোস করে আর কি হবে, সেই ভাগ্য আমার নেই। যাইহোক যে কথা বলতে চাইছিলাম, তুই যখন লেখাপড়ার জন্য বিদেশ চলে যাস, তার কিছুদিন পর তোর মা মারা যায়। তোর মায়ের শেষ সম্বল কিছু গহনা ছিল ঐটুকু বিক্রি করে তোদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছি।
আর কিছুই করতে পারিনাই, শুধু স্মৃতি হিসেবে একটি নামাজের চৌকি কিনেছিলাম সেটিও হয়তো আজ নেই। আর এই আমি হতভাগা তোর বাপ সামান্য ডাকপিয়নের চাকরি করে দু-এক টাকা করে লুকিয়ে লুকিয়ে তোদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ব্যাংকে জমা করেছিলাম।
নিজেও জানতাম না কত টাকা জমা করেছি। আজ ব্যাংক থেকে চিঠি আসছে আমার নামে জমাকৃত টাকা নাকি ৩ লক্ষ ৩৭ সাইত্রিশ হাজার টাকা। এজন্যই বলছি খোকা, আমি আর টাকা দিয়ে কি করব। যে কয়দিন বেঁচে আছি এখানেই ভালো আছি। আর হ্যাঁ, চেক বইটা পুরোনো আলমারিতেই আছে টাকাগুলা তুলে নিস। আমার দাদু ভাইটার কাজে লাগবে।
আরও একটি কথা না বলে পারছি না, আমার মরার পরে লাশটি এই বৃদ্ধশ্রমের পাশেই যেন দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। কারণ- বৃদ্ধাশ্রমের লোকগুলোকে পরপারে গিয়েও ভুলতে পারব না, তারাই আমার আপনজন।
পরিশেষে: এই সাত বছরে তোদেরকে একটি মিনিটের জন্য জ্বালাতন করিনি, আজ তোদের (কয়েকটি মিনিট ) মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম, পারলে ক্ষমা করিস।
ইতি-
তোর হতভাগা পিতা।
লিখেছেন: মোঃ আব্দুল মতিন
No Comments
Leave a comment Cancel