প্রিয় সুধানিধি ওয়াহি,

কবি রুদ্রর কবিতার ভাষায় বলতে গেলে এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। বেশ আয়োজন করে তোমায় আজ চিঠি লিখতে বসেছি টেবিল ল্যাম্পের সেই নিভু আলোয়। তুমি কি জানো? কারোর উপর মায়া পরে গেলে সে মায়া শুধু বাড়তেই থাকে, কমে না কখনোই।

”ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো” টিভি নাটকের এই বিখ্যাত গান যখন আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তায় ভাসছিল তখন তোমার কাছে অনেক গুলো চিঠি লিখেছিলাম আকাশের ঠিকানায়। কিন্তু একটিও পৌঁছাতে পারি নি।

তোমার সামনে দাঁড়ালেই কাঙ্খিত শব্দগুলো কিভাবে যেন বুদবুদের মতো উবে যেতো হওয়ায়! রাস্তায় দাড়িয়ে কতবার তোমায় চিঠিটি দিতে চেয়েও দিতে পারি নি। তুমি কী টের পেয়েছ কখনো? দূরে থেকেও আমি আছি তোমাতেই …তোমাকে জানিয়ে দিতে মেঘমালাকে বলে দিলাম আমার সব কথা …. বৃষ্টির ফোটা গায়ে মেখে নিও !!!

গুনে গুণে পঁচিশটি বছরের অলস বিকেল পার করে দিয়েছি তোমার স্পর্শ ছাড়াই ! জানি না তুমিও কি বিকেল গুলো কাটিয়েছ বেলী ফুল খোঁপায় না গুজেই! এখনও কি তুমি লাল টিপ দাও কপালে আর খোঁপায় গোজো বেলী ফুল। নাকি অগোছালো হয়ে গেছো?

খুব জানতে ইচ্ছা করে, তুমি কি এখনো বৃষ্টি বিলাসী আছো? কত শত প্রশ্ন জেগেছিল মূহুর্তে, নির্বোধ আমি ভুলে গেছি সব! কেবল ভুলতে পারি না তোমার সেই রৌদ্রময় হাসি , আমায় ঘিরে তোমার ভালোলাগা গুলো !

তুমি কি জানো কিছু কিছু মানুষ প্রবলভাবে ভালোবাসার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় । সেই ভালোবাসার জন্য তাদের কোনও কারনের প্রয়োজন হয় না। হঠাত্‍ কোনও কুয়াশা হয়ে অদৃশ্য ভালোবাসার চাদরে প্রিয় মানুষটাকে জড়িয়ে রাখা কিংবা নিশাচর পাখি হয়ে সারারাত তার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাতেই তারা আনন্দ পায়।

যেদিন তোমায় প্রথম দেখি সেদিন পূর্নিমা ছিল! রাতটা কেমন জানি জেগেই ছিল! আমিও জেগেই ছিলাম সমান তালে! জোছনার প্লাবনে আমি তোমার ঘ্রাণ পেয়েছিলাম! জেগে থাকা রাত আর সাথে জোছনার সাথী তারার দল মিলে আমাকে নিয়ে এলো তোমার দুয়ারে।

একি! তুমি দেখি সেজে আছো জোছনার সাজে! তোমার চোখ জুড়ে কেমন এক অদ্ভুত মায়া। ঝুল বারান্দার বোকা ফুল গুলো জোছনায় মেতেছে পাল্লা দিয়ে তোমার দীঘল চুলের সাথে ! মুহূর্তে মাতাল আমি।এই প্রথম কারো প্রেমে পড়ি…. তোমার প্রেমে পড়ি।

জানো প্রিয়তমা, এখন আর আমি ঐ প্রিয় গান কটা শুনি না, যা তোমায় উপহার দিয়েছিলাম , এখন আর আমি ঐ দোকানে চা খাই না! এখন আর তীব্র শীতে হাতে কিছু পড়ি না, কি হবে এসব করে! নিঃস্ব,একা গাংচিলটা উড়তে থাকে সীমানা রেখা না মেপেই, আমিও হাটি কদম না গুনেই, পেছনে না তাকিয়েই!

আজকাল নিয়নের ফুটপাথে যখন স্বপ্নের ভোর হয় তখন আমি দরজার চৌকাঠে জমে থাকা আবেগের ধুলো ঝেড়ে ঘুমাতে যাই। আজ খুব ইচ্ছে করছে সেই না বলা কথাগুলো দিয়ে একটা পত্রমালা তৈরী করি।

ভেবে কষ্ট পাই তোমার কাছে সেই শব্দগুলো কখনোই পৌঁছাবে না। তুমি জানতেই পারবে না তোমাকে না পাঠানো সেই চিঠিগুলো আমাকে আজও কতটা বেদনার্ত করে। শুধু তুমি আমি… আমি ..তুমি। বারবার বলতে চেয়েও বলতে পারি নি… বারবার বলতে চেয়েও বলা হয় নি।

খুব শক্ত করে হাতটা ধর, আমি তোমাকে হারাতে চাই না। গোলাকৃত পৃথিবীতে আবারো দেখা হবে হয়তো, সেদিন তোমার চোখে কাজল চাই , কপালে লাল টিপ চাই, কানে রূপালী দুল চাই! তোমায় আমার চাই কিনা জানি না, কিন্তু খুব করে জানি ভালোবাসি তোমায় …ভালোবাসি তোমায়।

খুব ইচ্ছা করে কোনো এক রাতে তুমি ফোন করে বলো,’তোমাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করছে।’ কেউ একজন বলুক মন খারাপের প্রহরে,’তুমি ঠিক আছো তো, এই আমি আছি তোমার পাশে।’ ঝুম বৃষ্টিতে ফোন করে কেউ বলুক, ‘কি সুন্দর বৃষ্টি দেখেছো.. চলো একসাথে বৃষ্টিতে ভিজি।’ তুমি কি জানো?

পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যহীন গর্দভ ছেলেটি তোমার হয়ে গেছে। আজ নয়, কাল ও নয়, গত পরশু ও নয়, গত দুই বছর আগে। তুমি কি কাউকে ভালোবাসো? বাসলে বলো, না বাসলেও বলো? আমি শুধু আর একটা এসএমএস দেব, তাতে শুধু লেখা থাকবে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।

তুমি নাই বা ভালোবাসলে; আমি একাই দুজনেরটা বেসে নেব, অতটা ভালোবাসা আমার হৃদয়ে আছে। ভালোবাসাটা না হয় এক পক্ষই রয়ে থাকলো।

ইতি তোমার
অজ্ঞাত পান্থ

লিখেছেন: শুভদীপ হালদার

Comments to: বেঁচে আছি তোমারই মাঝে

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us