প্রিয়তমেষু,
কেমন আছেন জানতে চাইবো না। আমি জানি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার একটু সংকোচ,আপনার ভবিষ্যৎ বিয়ে নিয়ে একটু ভয় ও একটু স্বপ্ন, পাত্রী দেখার টক-মিষ্টি অভিজ্ঞতায় আপনি কেমন আছেন। সেই কেমন থাকাটাকে আর যাই হোক খারাপ বলা যায় না।

অথচ আপনি আমাকে প্রতিদিনই বুঝাতে চান আপনি কতটা খারাপ আছেন আমাকে ছাড়া। আমি কীভাবে বুঝাই আমি আপনার ভালো থাকা, খারাপ থাকা, আপনার রাগ, ভালোবাসা সব বুঝি, বলা যায় আপনার নিজের চাইতেও বেশি বুঝি।

এইতো সেদিন ডাক্তার দেখিয়ে আপনাকে সব খুলে বললাম, সব শুনে কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ ছিলেন। আপনার ওই নিস্তব্ধতায় ও আপনার মন মস্তিষ্কে কী চলছিল তা আমি ফোনের ওপ্রান্তে বসেও রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপলব্ধি করতে পারছিলাম। তবে অবাক হয়েছিলাম ওই সময়ে আপনার কথা শুনে।

ভাবছিলাম মুখে অন্য কথা কেন? আমার কী ভুল হচ্ছে তাকে বুঝতে? মনে আছে তো কী বলেছিলেন আমাকে? বলেছিলেন, তুই চিন্তা করিস না তোর বাবাকে বল অল্প জোগাড় করতে বাকিটা আমি দেখছি। অবাক আমি প্রায় সাথে সাথেই উত্তর দিয়েছিলাম, সম্ভব না।

বাবাকে এত টাকা কোথায় পেয়েছি বলবো? আপনি সাথে সাথেই সহজ সমাধান দিয়েছিলেন, বলবি তুই টিউশনির টাকা থেকে জমিয়েছিস। খুব খচখচ করছিল মনে জানেন? আমি মনে মনে এটা জানতাম যে কখনোই নেব না।

তবু ও আপনার রাগের ভয়ে সায় দিয়েছিলাম এটা ভেবে যে হাতে সময় আছে জোগাড় করার আগে না করে দেয়া যাবে। কিন্তু নাহ, আমার আর না করতে হয়নি। সেদিন হতেই একটু একটু পাল্টাতে লাগলেন আপনি। আমি বুঝতাম তবুও নিজেকে ভুল ঠাহর করে নিজেকেই শাসাতাম।

বলতাম, সে আমাকে ভালোবাসে। এর কিছুদিন পরই একদিন ফোন করে বললেন তোর রাস্তা তুই দেখ,মা অসুস্থ মেয়েকে ঘরে নিবে না। এতটা কষ্ট পেয়েছিলাম, জানেন? এমন কথা ছিল না। কথা ছিল আমার পা বা হাত একটা যদি কখনো নাও থাকে তবুও আপনি আমায় ছেড়ে কোথাও যাবেন না।

অথচ.. তবুও মুখে ড়া কারিনি। এরপর একদিন যায়, দুদিন যায় আপনি সেই যে গেলেন আর আসলেন না। আপনার মতে আমিও তো দিতে পারতাম একটা ফোন। আসলে দিতে পারতাম না। কেন জানেন?

যবে থেকেই ফোন করে ঐ কথা গুলো বলেছিলেন আমি প্রত্যেকটা ঘন্টা, প্রত্যেকটা দিন ওই কথাগুলো নিয়ে ভেবেছিলাম আর বুঝেছিলাম এটা রাগের কথা ছিল না আপনার। এমন অনেকবারই তো ছেড়ে গেছিলেন প্রতিবারই ছিল রাগের মাথায় বলা তুই চলে যা।

তাই ফিরে গিয়েছি, আপনাকে ফিরিয়ে এনেছি,বা আবার ডাকে ফেরত গিয়েছি প্রতিবার। কিন্তু এটা ছিল একেবারেই অন্যরকম, ঠান্ডা মাথায় পরিবারের কথা, নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সময় নিয়ে মানুষ যে সিদ্ধান্ত গুলো নেয় ঠিক সেরকম।

আমার এটা নিয়ে অভিমান থাকলেও অভিযোগ ছিল না। যে যার জীবনের ভালো চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আবার ও অবাক হয়েছিলাম খুব যখন পনেরো দিনের মাথায় ফোন করে বললেন একটা ফোন করিস না কেন তুই।

দিশেহারা লাগছিল এটা শুনে আপনাকে কে বুঝাবে কতটা কষ্টে আমি নিজেকে ফোন করা থেকে বিরত রেখেছিলাম। আপনার কণ্ঠ শুনেই অভিমান, না পাওয়ার কষ্ট, সব মিশে আমি আমার চোখ আর গলা দিয়ে ঝরে পড়ছিল অতি কষ্টে থেকেই হয়তো বলে ফেলেছিলাম, ফোন কেন দেব?

আপনি নিজেই তো ফেলে গেলেন আমায়। টাকা দেয়ার ভয়ে পালিয়েছিলেন নাকি?ব্যস এটা আমার মুখ থেকে বের হতেই সেই যে গেলেন আর এলেন না। কিন্তু আমার ওই কথাটা কী যুক্তিযুক্ত ছিল না? ওই সময়ে আমার আর কী বা বলার ছিল আপনিই বলুন।

এরপর দশ বারো দিনের মাথায় আপনার দূত হিসেবে এলো আপনার বন্ধু। হোয়াটসঅ্যাপে ছবি দিল আপনার লেখা একটা চিরকুট এর এই মর্মে যে – আপনার যদি কিছু হয় তাহলে সব টাকা আমার নাম্বারে যেন দেয়। ওই সময়ে নিজেকে এত ছোট মনে হচ্ছিল! নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিল আপনার বন্ধুর চোখে, আপনার চোখে, নিজের চোখে।

আমি তো আপনার বিষয়াদি চাইনি সারাজীবন সঙ্গ চেয়েছিলাম। আপনার বন্ধুর আমার প্রতি ঘৃণা ফোনের এপ্রান্তে থেকেও বুঝতে পারছিলাম তার প্রতিটা কথার কারণে। তার সাথেও অগ্নিশর্মা হয়েই কথা বলেছিলাম কারণ ব্যাপারটা আসলেই আমার ব্যক্তিত্বে আঘাত হেনেছিল উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এভাবে চিরকুটের মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা কীভাবে দান করে।

আমি ভিখারি নাকি আমি চাইতে গিয়েছিলাম আপনার কাছে? এটা তো পৌঁছে যাওয়ারই ছিল আপনার কাছে তারপরই শুরু হলো আপনার দেয়া তিক্ত খুদেবার্তা। আমার মা, আমার বাবা আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীও বাদ যায়নি আপনার তিক্ত কথা থেকে। একসময় আমাকে গালি দিতেন খুব খারাপ ভাষায় এরপর আপনি ফোন কেটে দিতেন।

তারপর আবার আমিই ফোন করে স্যরি বলতাম। আমি ভাবতাম এটাই বুঝি ভালোবাসা। কিন্তু এই গালিটা যখন আমাকে ছাড়িয়ে আমার পরিবার পর্যন্ত গড়িয়ে গেছিলো আমি আর নিতে পারিনি। আমি সত্যিই পারিনি। প্রতিবারের মতো স্যরি বলে আওব ঠিক করে নিতে।

তারপর আপনার বন্ধুকে আপনি পাঠাতে শুরু করলেন কান্নাজড়িত ভয়েস রেকর্ডিং। ওই সময়ই আপনার বন্ধু ভুল করেই একটা রেকর্ড আমাকে পাঠিয়ে দেয়। এটা এমন ছিল যে দোস্ত ওই মেয়েটার স্তন্য ক্যান্সার,বাচ্চা হবে না জেনেও আমি বিয়ে করবো বলেছি যখন যা চেয়েছে দিয়ে গেছি। বিশ্বাস করেন আমি দুইদিন স্তব্ধ ছিলাম।

যে মেয়ে বাবা মা থেকে একটা টাকা চেয়ে নেয়নি জীবনে সে নাকি প্রেমিকের টাকায়… এরপর আবার আপনার সাথে সেই বাকবিতন্ডায়। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার কী জানেন? যে মেয়ে কেউ মুখ ভার করে কথা বললে সেদিকে আর ফিরেও চাইতো না সব ঠিক করে নেয়।

সব নিজের ভুল ভেবে বাকবিতন্ডার মধ্যেই সব কীভাবে যেন ঠিক করে নেয়। আপনি ও নিজের বলা কথা আমি জেনে যাওয়ার আফসোস থেকে ঠিক করে নেন। কিন্তু সেদিন রাতে নিজের ভবিতব্যের কথা চিন্তা করেই হয়তো বলেন যে আপনি আমি ফিরে আসতে দেরি করে ফেলেছি।

আপনি ইতোমধ্যে পরিবারে মেয়ে দেখার অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। অথচ কথা এমন ছিল না। কথা ছিল আমি সুস্থ হলে দুজন মিলে পরিবারকে বুঝাবো। কিন্তু ঐ সময়টা আপনার বিয়ের জন্য জরুরি হয়ে দাড়ালো। দুঃখ এখানে না। দুঃখ কোথায় জানেন?

আপনি আজও আমায় কথায় কথায় বেঈমান ডাকেন। আমি নাকি ছেড়ে গেছি। অথচ আপনি সমান তালে মেয়ে দেখে যাচ্ছেন। যদিও আপনি বলেন আপনি চাপে পড়ে দেখেন। আমার হাসি পায়। নিজের ভবিষ্যত ঠিক করার অধিককার সবার আছে কিন্তু এভাবে কেন?

আমাকে বললে আমিই সরে যেতাম। কিন্তু আপনি তো চান ধোঁকাবাজের ট্যাগ আমার থাকুক আপনি যাতে কখনো বিবেগের আগুনে না পোড়েন তাই এই ব্যবস্থা, সেটা বুঝি। আজকাল ভাবি আমি নিজেকে ধোঁকাবাজ বলে স্বীকার করে নেব তাতে যদি আপনি শান্তিতে বিয়েটা করতে পারেন।

খুব ভালো থাকবেন। বলার আর ও অনেক কিছুই আছে। সব বলা হলো না। আপনি কথায় কথায় বলেন ৮ বছরের সম্পর্ক। এটা আমার জন্য সারাজীবনেরই সম্পর্ক। আপনি হয়তো জানেন না মনে মনে সারাজীবনই ভালোবাসা যায়।

আর হ্যাঁ,আপনি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা একেবারেই ঠিক। যে প্রেমিকের রাগ হজম করতে পারে না সাপোর্ট করে না তাকে দিয়ে কী হবে। অসুস্থ মেয়েকে বিয়ে করে সুখ আছে নাকি? আর আছিই বা কয়দিন আপনাকে সুখী দেখে যেতে পারলেই হলো।

ইতি
আপনার বেঈমান

লিখেছেন: তাসলিমা জেরিন

Comments to: প্রিয়তমেষুর জন্য

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us