প্রিয়
আমি হিন্দু ছিলাম আর তুমি মুসলিম, তোমার বাড়ি বাংলাদেশ আর আমার কলকাতা। তাও তোমার উপর কেমন যেন একটা টান অনুভব করতাম। এই টান-টা কখন যে ভালবাসায় পরিণত হয়েছে বুঝতে পারিনি।
তুমি মনে মনে বুঝতে পেরেছিলে আমি যে তোমাকে চাইছি। আমারই তোমায় ভালো লেগেছিল প্রথম। আর তারপর আসে সেই দিন। 8 মার্চ সেদিন তুমি আমায় প্রপোজ করলে সবার সামনে।
সেদিন থেকে শুরু হয় আমাদের ভালবাসার পথচলা। কত ভালোবাসা, কেয়ারিং, স্নেহ, মায়া সবকিছু ছিল আমাদের মধ্যে। সবথেকে বড় জিনিস তুমি আমায় কতটা সম্মান করতে।
প্রপোজ করার সময় তুমি বলেছিলে যে তোমাকে ভালোবাসার আগে আমায় আল্লাহকে ভালবাসতে হবে। তাই আমার নামাজ শিখানো, কালেমা শেখানো, সূরা শেখানো সবকিছুই তুমি নিজের হাতে করেছিলে।
আমার ড্রেসিং স্টাইল তুমি চেঞ্জ করেছিলে। তোমার মত এত ভালো মানুষ আমার জীবনে খুব কমই এসেছে। প্রথম থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম তোমার সঙ্গে সারাটা জীবন কাটাব।
সম্পর্কটা ঠিকঠাক চলছিল। বরং আমি এটা জোর দিয়ে বলতে পারি যে আমাদের মত সম্পর্ক খুব কম মানুষেরই ছিল যেখানে কোন ঝগড়া বা ঝামেলা ছিল না। তুমি নিজে অসুস্থ থেকেও সব সময় আমার খোঁজ নিয়ে গেছো।
কখনো আমায় নিজের সমস্যা বুঝতে দাওনি এতটা কেয়ার করেছো আমাকে। কিন্তু ওই যে সম্পর্কের প্রথম দিকে হাসি ঠাট্টা খুনসুটি করে কাটালেও পরের দিকে চলে আসে বাস্তবতা। দুজনে কিভাবে এক হবো সেই ভাবনা।
আমার বাড়ির সব সমস্যা তুমি জানো, আমার বাড়িতে কোনো এক অজানা কারণে আমাকে কেউ পছন্দ করেনা। আমার মারধর করা গালিগালাজ করা পড়াশোনা করতে না দেওয়া এগুলোর জন্য প্রায়ই আমি ডিপ্রেশনে থাকতাম।
আর তুমি সব সময় আমাকে শক্তি যোগাতে সাহস দিতে আমাকে। তারপর শুরু হল বাড়ি থেকে বিয়ের প্রেসার। অত্যাচারটা যেন একটু বেশি বেড়ে গেছিলো। আর ওইদিকে ছিল তোমার অসুস্থতা। একটা পর্যায়ে এসে আমার মনে হচ্ছিল আমি মেন্টাল পেশেন্ট হয়ে গেছি।
বাড়িতে সবাই তোমার কথা জেনে যায় ডায়েরি পড়ে, আমিও সাহস করে বাড়িতে বলে দিই যে আমি ইমরানকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না। তারপর বাড়িতে আমার ওপর অত্যাচারটা একটু বেশি বেড়ে গেল আর অন্যদিকে তুমি পড়ে গেলে দোটানায়।
একদিকে তোমার পরিবার আর এক দিকে আমি। বিষয়টা যখন পরিবারের তখন আমি আর তোমাকে আটকাতে পারব না। কারণ একটা পরিবারের ভরসাই সেই পরিবারের ছেলে। আমাদের দুজনের হয়তো আর মিলন হবে না কিন্তু থেকে যাবে আমাদের ভালোবাসা মায়া সম্মান সবকিছু।
আজ কলে দুজনে নিঃশব্দে কান্না করে গেছি, আহারে জীবন। “ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিয়ো , ঠিক মত ঔষধ খাবে আর বিয়ে করে নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়ো “- এগুলোই ছিল কলের শেষ কথা।
আগের মতো হয়তো তোমার সাথে আমার তেমন যোগাযোগ-ও থাকবে না। দূর থেকেই আমি তোমাকে আমার মনের যত্ন করে লালন করে যাব।
যোগাযোগ না থাকলেই এই নয় যে আমরা দুজন দুজনকে ভুলে যাব। বরং এই দূরত্বে যেন ভালোবাসা আরো বেড়ে যাবে।
কিন্তু একটা কষ্ট মনে থেকেই যাবে আমার মনের ব্যক্তিগত চাহিদা একমাত্র তুমি ছিলে। সেটা আর পূরণ হবে না। হয়তো আল্লাহ চান না আমরা একসাথে থাকি। কিন্তু তোমার এই জান্নাত সবসময় দূর থেকে তোমার জন্য প্রার্থনা করে যাবে। আর কিছু লেখার শক্তি পাচ্ছি না।
ইতি
তোমার জান্নাত
লিখেছেন: জান্নাত
No Comments
Leave a comment Cancel