অনলাইনে জমির দলিল বের করাটা খুবই সহজ একটা ব্যাপার। আপনি চাইলে খুব সহজেই ঘরে বসে এ কাজটি করতেপারবেন। আজকের এ লেখার এ বিষয়ের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করবো। তাহলে চলুন দেখে নেই কিভাবে অনলাইন থেকে জমির দলিল বের করতে হয়।
তার আগে বলে নেই খুব সহজেই অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করাও সম্ভব। বাংলাদেশের সবধরনের খতিয়ানই এখন জাতীয় ভুমি তথ্য ও সেবা কাঠামোর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।
জরিপ বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত সর্বশেষ খতিয়ান হচ্ছে আর, এস, খতিয়ান যা বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন (যেমন: বি এস এস খতিয়ান, বি আর এস খতিয়ান, সিটি জরিপ বা খতিয়ান ইত্যাদি) নামেও পরিচিত।
যেভাব জমির খতিয়ান যাচাই করবেন
১. প্রথমে https://www.eporcha.gov.bd/khatian-search-panel লিংকে ক্লিক করুন।
২. এখানে প্রথমে বিভাগ, এরপর জেলা, এরপর উপজেলা এবং সর্বশেষ মৌজা বাছাই করুন। (তবে তার আগে আপনার জমির জরিপ ধরণ অনুযায়ী বিএস, সিএস, বিআরএস, আরএস, এসএ, পেটি, দিয়ারা; ইগুলোর ভিতর যেইটি হবে সেইটি সিলেক্ট করে নিন)
৩. এরপর আপনার জমির খতিয়ান যাচাই করার চারটি অপশন পাবেন
(ক) খতিয়ান নং অনুযায়ী
(খ) দাগ নং অনুযায়ী
(গ) মালিকানা নাম অনুযায়ী
(ঘ) পিতা/স্বামীর নাম অনুযায়ী
এই চারটি অপশনের মধ্যে যে অপশনের তথ্য আপনার নিকট আছে সেই অপশনের বাম পাশের গোল ঘরে মাউস দিয়ে ক্লিক করুন।
গোল ঘরে সিলেক্ট করলে তার নিচেই আরেকটি বক্স দেখা যাবে। তার ঠিক নিচে একটি ছোট বক্সটি আসবে, বক্সটি পূরণ করুন।
অর্থাৎ খতিয়ান নম্বর সিলেক্ট করে থাকলে খতিয়ান নম্বরটি বক্সে লিখুন, দাগ নম্বর সিলেক্ট করে থাকলে দাগ নম্বরটি বক্সে লিখুন, মালিকের নাম সিলেক্ট করে থাকলে মালিকের নাম বক্সে লিখুন, মালিকের পিতা/স্বামীর নাম সিলেক্ট করে থাকলে পিতা/স্বামীর নাম বক্সে লিখুন।
৪. এরপর নিচে দুটি সংখ্যা যোগ করতে বলা হবে। সংখ্যা দুটি যোগ করে যোগফল নিচের বক্সে লিখুন।
৫. সর্বশেষ ‘খুজুন’ অপশনে ক্লিক করুন। আপনার অনুসন্ধানকৃত খতিয়ানটি মনিটরে দৃশ্যমান হবে।
আর এভাবেই আপনি আপনার অনুসন্ধানকৃত আর এস খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
জমির দলিল যাচাই করার নিয়ম
জমির বিভিন্ন প্রকার দলিল থাকতে পারে। বিক্রীত দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান—সবই হচ্ছে দলিল। প্রথমে সে বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে।
এ জন্য প্রস্তাবিত জমিটির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কি না এবং সিএস, আরএসসহ অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলিয়ে দেখতে হবে।
বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি বিক্রয়কারীর দখলে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এ জন্য সরেজমিনে নকশার সঙ্গে জমিটির বাস্তব অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হবে।
প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী ভূমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ ও খতিয়ান নম্বর জেনে মিলাতে হবে।
আরো পড়ুন
- জমির পরিমাপ পদ্ধতি
- বায়নানাম দলিল লেখার নিয়ম
- জমির হিসাব বের করবেন যেভাবে
- জমির মাপ
- ডেভেলপারের সাথে চুক্তি
- হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম
- দানপত্র দলিল রেজিস্ট্রি খরচ
- বায়না দলিলের শর্তাবলি
- দোকানঘর ভাড়ার চুক্তি পত্র
- চুক্তি করবেন যেভাবে
- ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
- ফ্ল্যাট ক্রেতা বিক্রেতার চুক্তিপত্র
- জমি বন্ধকের চুক্তি নামা
- প্রেসের সাথে চুক্তিপত্র
জমিটির মালিক কোনো আমমোক্তার বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছে কি না, জেনে নিন। বিক্রেতা যদি আমমোক্তারনামার মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়ে থাকে, এর বৈধতা যাচাই করতে হবে।
প্রকৃত মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ কি না এবং আমমোক্তারটি যথাযথ হয়েছে কি না।
ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সব শেষে যে দলিল করা আছে, তার সঙ্গে পূর্ববর্তী দলিলগুলোর মিল আছে কি না। বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, দেখতে হবে। ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়।
ধরা যাক, তানভীর কিছু জমি ১৯৮০ সালে ৫০৬ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে কেনেন। সেই জমি ২০০৭ সালে অন্য একজনের কাছে ৪০১ নম্বর রেজিস্ট্রি দলিলে বিক্রি করলেন। তাহলে আগের ৫০৬ নম্বর দলিলটি হচ্ছে ভায়া দলিল।
মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কি না এবং সে অনুযায়ী খতিয়ানে হস্তান্তরিত দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ মিলিয়ে দেখতে হবে।
বিক্রেতার কাছ থেকে ভায়া দলিলটি চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের দলিল নম্বর ঠিক আছে কিনা।
আরেকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কি না।
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভল্যুমে লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে।
এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। কোনো দলিল খুঁজে বের করাকে সাধারণত সার্চ বলা হয়।যেভাবে জাল দলিল হয়।
১. বণ্টননামার ক্ষেত্রে সহ-শরিকদের অজান্তে ভুয়া বণ্টননামা করে দলিল জাল করে থাকে ।
২. এজমালি সম্পত্তি অর্থাৎ ভাইবোন মিলে যে সম্পত্তি ভোগ করে থাকে, এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভাইয়েরা বোনদের না জানিয়ে দলিল তাদের নামেই করিয়ে থাকে।
৩. মালিকানা ছাড়াই দলিলদাতা সেজে বা কাউকে মালিক সাজিয়ে জমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজিস্ট্রি করে নেয়া হয়।
৪. অনেক সময় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
৫. সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে আদালত থেকে বণ্টননামা সম্পন্ন করা হয় না, সে ক্ষেত্রে দলিল জালের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৬. মালিক বিদেশে থাকলে মূল দলিল থেকে জালিয়াতি করা হতে পারে।
No Comments
Leave a comment Cancel