প্রিয় সমুদ্র,
আজ বহু বছর পর তোমাকে লিখতে বসলাম। কিন্তু ভাবনাগুলো বড্ড এলেমেলো মনের কোণে অজস্র কথামালা ঘুরপাক খাচ্ছে। শব্দগুলো নির্বাক কিছুতেই যেন মেলাতে পারছি না, হয়তো শব্দগুলো আজ অভিমানে লুকিয়ে আছে।
যাই হোক, শত ভাবনার পরিশেষে তোমায় নিয়ে আজ লিখবোই। এক অরণ্য সজীবতায় ও স্বপ্নীল আকাশের বিশালতায় তোমায় শুভেচ্ছা জানালাম। জানি খুব ভালোই আছো তুমি।তোমার প্রিয়তিকে নিয়ে। তোমাদের দুজনের স্বপ্নগুলো পূর্ণতা পেয়েছে। খবরটা শুনে অনেক খুশি হয়েছিলাম।
আমি কেমন আছি সে কথা নাই বা জানলে । উত্তাল ঢেউয়ে খড়কুটোর মতো ভেসে ভেসে জীবন চলেই যাচ্ছে। জীবন তো আর থেমে থাকে না।
রঙিন স্মৃতির পাতা আজ সাদা – কালো ধূসর রঙে পরিণত হয়েছে। ধূলো পড়ে হৃদয় কেবলই তপ্ত শূন্য বালুচর হয়ে আছে। জানো সমুদ্র, তোমাকে না পাওয়ার শোক এখন আর পুড়িয়ে আমায় দগ্ধ করে না ক্ষত- বিক্ষত করে না।
কারণ দীর্ঘদিনের অভিমান- অনুযোগের পালা যখন শেষ হয়ে যায়, তখন কেবলই সব মায়া – মোহ ধোঁয়াশায় পরিণত হয়। পিছুটান থাকে না, নিজস্ব পৃথিবীর একাকি অন্তরালে কেউ না থাকলেও সুখ খুঁজে নিতে হয়।
আমিও একটু একটু করে শিখে নিচ্ছি। কারণ কাছের মানুষ যখন দূরের হয়ে যায় তখন তার কাছ থেকে আর পাওয়ার কিছু থাকে না।
নশ্বর পৃথিবীতে জীবনের স্মৃতির পাতায় আমাদের কাটানো কিছু মুহূর্ত, তোমার অবহেলার ভালোবাসার পংঙ্কিমালা এখনও কেমন জানি হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। গভীর রাতের গাঢ় অন্ধকারে সব স্মৃতি এসে জমা হয়।
সমুদ্র, তোমারও কি মনে পড়ে? তোমার অযত্ন অবহেলায় শেষ হয়ে যাওয়া ভালোবাসা?
নাকি মনেই পড়ে না তোমার?
অবশ্য এখন তোমার সে সময় কোথায় মনে করার। মানুষ যখন নতুনত্বের মোহে আচ্ছন্ন থাকে তখন অন্য কিছুর প্রতি গুরুত্ব থাকে না।
জানো সমুদ্র, এখনও রিমঝিম বর্ষার বাদল দিনের কথা মনে পড়ে। যে শ্রাবণের জল থৈ থৈ সময়ে দুজনের স্বপ্নগুলো পূরণ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জীবনের মোড়ে কি অবলীলায় সেদিন তুমি বলে দিলে, “তুমি তোমার দিগন্তের পথ খুঁজে নাও। আমাকে আর খোঁজও না।”
আমি আর একটা কথাও বলি নি। চিরদিনের মতো চলে এসেছিলাম। শুধু একটা কথায় ভেবেছি কি নিখুঁত অভিনয় করেছিলে তুমি।
মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয় করেছিলে তখনই বুঝেছিলাম। নতুন সূঁতোয় নিজেকে জড়াতে চাও। বাঁধতে চাও নতুন প্রাণের মালা। আর আমি কতই না বোকা ছিলাম! এখনও মনে হলে বড্ড হাসি পায় আমার।
এখনও অঝোর বৃষ্টিতে প্রকৃতির নিয়মেই কেবল একরাশ বিষণ্ন ভরা শূন্যতার দৃষ্টিতে জানালার ফাঁকে তাকাতেই বিন্দু বিন্দু অশ্রুকণা কেমন বেহিসেবেই ঝরে পরে।
মাঝে মাঝে অন্ধকারের বুকে বিদীর্ণ হৃদয়ের অনুভূতিরা আচমকায় লুকিয়ে রাখা পুরনোর খামে ধূলো পড়া ডায়েরীর পাতার ভাঁজে নিজেকে খুঁজে বেড়ায়।
হৃদয় বিদারী শব্দ অপ্রকাশিতই থেকেযায় অন্তঃপুরে। সোনালি ভোরের লাল উদিয়মান সূর্যের আলোয় তোমার জীবন সুন্দর হোক, ভালো থেকো তুমি, ভালো থেকো তোমরা। দূর থেকে সর্বদা এটাই কামনা করি।
স্মৃতির নিশ্ছিদ্র জালে জড়িয়ে অবেলায় নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাবো মহাকালে অন্তে। রাতের শুকতারায় খুঁজে যাই তুমিহীন ভাবনার প্রতিচ্ছবি।
অমানিশা রাতের প্রহর শেষ হতে চললো তোমাকে ভাবতে ভাবতে। নির্ঘুম রাতে তন্দ্রাহীন চোখ মোমবাতির মৃদু আলোতে আয়তক্ষেত্রকার চশমা ঝাপসা হয়ে আসছে নোনা জলে।
বিষাদময় জীবনের স্মৃতিতে ভেসে বেড়ালাম তীর ভাঙা ঢেউ হয়ে। অবশেষে অপ্রাপ্তির অপূর্ণতায় অধরা স্বপ্নের অপমৃত্যুর দীর্ঘশ্বাসের বেঁচে থাকা জীবন পথের মিছে মায়া আর বাড়াতে চাই না।
ভালো থেকো তুমি। তোমাদের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল । সুখ- সমৃদ্ধিতে দীপ্ত সমুজ্জ্বল হও এটাই প্রার্থনা করি।
ইতি,
অবেলার তরঙ্গ।
লিখেছেন: সাগরিকা শাহনাজ সাজন
No Comments
Leave a comment Cancel