প্রিয় নীহারিকা,
এখন গভীর রাত সকলে নিদ্রামগ্ন। প্রকৃতি যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হয়তো ঘুমের ঘোরে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে। আর আমি জেগে আছি, চোখে ঘুম নেই। বসে বসে ভাবছি কেমন ছিলাম আর কেমন আছি। এ প্রশ্নের জবাবে শুধু দু’চোখের দু’ফোটা অশ্রু দিয়েই শেষ হয়। যাক সেসব কথা।

কেমন আছো? আমি জানি, আমি কেমন আছি তা জানার কোন ইচ্ছে তোমার নেই। তবুও বলবো আমি এখন খতিয়ানহীন মানচিত্র। ক্লান্ত এক পথিক! মনে পড়ে তোমার ? একদিন আমার উড়ন্ত মন তোমার কোমল হৃদয়কে আকুল করে তুলেছিল। আমায় জড়িয়ে ধরে বলেছিলে ভালোবাসি।

কিন্তু তোমার ভালোবাসা যে ছিল জলন্ত সিগারেটের ধোঁয়া যা আমার হৃদয়ে দাগ লাগিয়ে দিয়েছে। জানো নীহারিকা, আমি তোমার কাছে সেই প্রেম চেয়েছিলাম যে প্রেম চলার গতিকে মন্থর করে না, হৃদয় কেটে ছবি আঁকে, নিজে পুড়ে অঙ্গার হয় কিন্ত কাউকে পোড়াতে চায় না।

হাজার হাজার মাইল দূর থেকে সকল কাজের অনুপ্রেরণা যোগায়। কিন্তু তুমি তা দাওনি। ভালবেসে আমি তোমায় দিয়েছিলাম গাঁদা ফুল, আর তুমি দিয়েছিলে গোলাপ। এখন বুঝছি কেন এ গোলাপ দান।

আসলে সুগন্ধ না থাকলেও গাঁদা ফুল পূজায় লাগে কিন্তু গোলাপ লাগে না। কারণ গোলাপে কীট থাকে। তোমার মতো গোলাপের গন্ধ নিতে গিয়ে হৃদয়ে কীট প্রবেশ করিয়েছি যা আমার হৃদয়ের রক্ত চুষে চুষে খাচ্ছে!

নীহারিকা, তুমিতো সংসারী হতে চেয়েছিলে, হয়েছো । কিন্তু আমার নয়, অন্যের। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘ইন্দিরা’ উপন্যাসে লিখেছেন, সংসার সে তো নন্দন বন, যেখানে পুরুষরা পারিজাত ফুলের বান মারিয়া নারী জনমকে সার্থক করে। পা দিলেই পুরুষরা হয় ভেড়া আর নারীরা হয অপ্সরা। নিত্য কোকিল ডাকে।

এখন বসন্ত কোকিল ডাকছে তুমিও সংসার করছো আর আমি বৈরাগী। আমি তোমায় অভিশাপ করবো না কিন্তু আমার দীর্ঘশ্বাস থেকে যদি কোন অভিশাপ বেরিয়ে আসে তা থেকে তুমি মুক্তি পাবেনা।

যাযাবর তার দৃষ্টিপাত উপন্যাসে লিখেছেন, ছেলেদের প্রেম মেয়েদের কাছে আটপৌর শাড়ির মতো যাতে না আছে উচ্ছলতা আর মেয়েদের প্রেম ছেলেদের কাছে গরীবের ঘরে বেনারসি শাড়ি। যে পায় সে অনেক মূল্য দিয়েই পায়। তোমায় কিনে নেওয়ার মতো টাকা না থাকায় আমি পারলামনা তোমার ভালবাসা কিনতে।

একটা কথা মনে হল, প্রাচীন রাজার শাসনামলে রাজা হার্মাশিসকে ভাল বেসে উপেক্ষিত হয়েছিল চার্মিয়ন নামের এক নারী। আত্মহত্যার মতো অভিশপ্ত পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত চার্মিয়ন লিখেছিলেন, হার্মাশিস তোমাকে ভালোবেসে শুধু উপেক্ষাই করলাম, কিন্তু বুঝতে চাইলেনা তোমার উপেক্ষার ছুরি আমাকে কতটুকু বিদ্ধ করছে। আমারও অবস্থা একই।

আজ যাযাবরের সেই কথাটি আমার জিবনে সত্য হয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে, ‘ প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা , আর প্রবঞ্চিতকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয়না অথচ দহন করে। সে আগুনে দগ্ধ হচ্ছি আমি আর আমার মতন যুব সমাজ।

রাত শেষ হতে চললো। কিন্তু কেন এ কালির আঁচড় কাটা ? তুমিতো আমার নও, অন্যের। কলম লিখতে চাইনা, কাগজ ছিঁড়ে যায় কিন্তু মনতো মানে না। পুরানো বাক্সের ভিতর থেকে ন্যাপথলিনের গন্ধের মতো ভেসে আসছে আমার পুরানো অতীত।

কালো মেঘ যেমন বৃষ্টি ঝেড়ে কিছুটা হালকা হয় তেমনি মনের গহীনে জমে থাকা কথাগুলো লিখে কিছুটা হালকা হবার প্রচেষ্টা মাত্র। মনে পড়ে যাচ্ছে জগন্ময়ের সেই সুর- তুমি আজ কত দূরে…. তুমি আজ কত দূরে!

ইতি-
ধূমকেতু

লিখেছেন: শুভদীপ হালদার

Comments to: অপ্রাপ্তিময় চিঠি

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Attach images - Only PNG, JPG, JPEG and GIF are supported.

    Login

    Welcome to Chithipotro

    You are couple of steps away from being one of our family member
    Join Us