প্রিয় বাবা,
কেমন আছো তুমি? ইচ্ছে করেই কথা বলিনা আমি তোমার সাথে। কারণটা তুমি খুব ভালো করেই জানো। তোমার শাসন বিয়ের পরেও আমাকে নাড়া দেয়। এইজন্য খুব ভয় পাই তোমাকে। তাইতো সবসময় মা’কে ফোন দিয়েই তোমার খোঁজখবর নিই।
আর তুমিও মা’কে বলে দিয়েছো যে মা যেন আমার খোঁজখবর নেন সবসময় আর তোমাকে সবসময় আমার দিনলিপির খবর দেয়। আসলে বাবা মানেই হয়তো এমন। স্নেহমাখা শাসনে বাবা’রা সন্তানদের আগলে রাখে। আমিও আজ মা হয়েছি। এখন বুঝতে পারি বাবা-মা কেন সন্তানদের শাসন করে।
আজ খুব করে তোমার কথা মনে পড়ছে বাবা। যেইদিন প্রথম নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই সেইদিন রাতেই তুমি আমার জন্য অনুপম সিরিজের সব বই এনে দিয়েছিলে। রাত ১১টা তখন। বই এনে হাতে থাকা অবস্থাতেই আমাকে বলেছিলে
“দেখ মা আমার শার্টটা, কেমন ঘামে ভেজা। অফিস শেষে একসাথে এতগুলো বই আনতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। এই কষ্টের মূল্য দিস মা। বেশিকিছু না শুধু ভালো রেজাল্ট হলেই আমি খুশি হবো, আমার কষ্ট সার্থক হবে” সেইদিন তোমার কথার কোন উত্তর দিতে পারিনি।
এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে তুমি যে কি পরিমাণ খুশি হয়েছিলে তাতেই আমি বুঝতে পেরেছি তোমার কষ্টের মূল্য আমি দিতে পেরেছি। তারপর সেই রেজাল্টের হাত ধরেই বৃত্তি। সবাইকে বলতে যে আমার মেয়ে ভালো রেজাল্ট করাতে ব্যাংক বৃত্তি দিয়েছে।
বিশ্বাস করো বাবা বৃত্তির জন্য না তোমার এই কথাগুলোর জন্যই আমি আজো অনুপ্রেরণা পাই। কিন্তু, সময় পরিবর্তন হয়েছে। আমি অন্যের ঘরের ঘরনি। এখন দিনের পর দিন চাইলেও কোনো জিনিস সহজে পাইনা।
অথচ এমন একজন শিক্ষিত মানুষের সাথে বিয়ে দিয়েছো যার অঢেল টাকা না থাকলেও একটা ৫০০ টাকা দামের বই কিনে দেওয়ার সামর্থ্য কিন্তু আছে। তবুও সে দেয় না। একটা ৫০০ টাকার বইয়ের জন্য ২মাস যাবত বলে যাচ্ছি।
তবুও সে কিনে দিচ্ছে না। চাকরির যে খুব ইচ্ছে আমার। বরাবরের মতোই আমার চাহিদা খুব সীমিত। আর দশজন মেয়ের মতো টাকা পয়সা, শাড়ি গয়নার লোভ যে আমার নেই সে ভালোই জানে।
তবুও তার এত অবহেলা, ঔদাসিন্যতা আমাকে বারংবার কাঁদায়। আগে না চাইতেই সব পেয়ে যেতাম বাবা তোমার কাছে আর এখন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গেলেও সহজে কিছু পাইনা।
খুব মনে পড়ছে বাবা তোমাকে খুব খুব….
ইতি
তোমার মা
লিখেছেন: স্নিগ্ধা চৌধুরী
No Comments
Leave a comment Cancel